পৃথিবীতে কেন প্রয়োজন পোকামাকড়?

আজকের পৃথিবীতে বাস করে প্রায় ১০ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় প্রাণী তারা৷ জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে মোট প্রজাতির ৪০ শতাংশ হারাতে চলেছি আমরা৷ এর প্রভাব ঠিক কতটুকু সমস্যা বয়ে আনবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে, তা অনেকেরই অজানা৷

গমের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় ফসলের চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পোকামাকড়ের৷ পরাগযোগের কাজ, যা কিছু পোকা ছাড়া অসম্পূর্ণ, সম্ভব হবে না যদি বিশেষ কিছু প্রজাতির পোকা হারিয়ে যায়৷ চীনের কিছু অংশে শ্রমিকরা এই পরাগযোগের কাজ করলেও দেখা যাচ্ছে যে এর ফলে ফসলের দাম বাড়ছে কয়েকগুণ৷

শুধু গম নয়, কফির চাষ বা বিশেষ কিছু ফলের উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পরাগযোগের গুরুত্ব বিশাল৷ এছাড়াও পশম ও বেশ কিছু ওষধি গাছের চাষের ক্ষেত্রে গোকার ভূমিকা অপরিহার্য৷

গুবরে পোকা চিরকালই গল্প-উপন্যাসে হাসিঠাট্টার চরিত্র৷ কিন্তু এই গুবরে পোকা লুপ্ত হয়ে গেলে চারপাশ হয়ে উঠবে দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা৷ কারণ এই পোকার মূল কাজই হলো নিজের চারপাশের আবর্জনা পরিষ্কার করা৷

পোকামাকড়ের গুরুত্ব এই পৃথিবীতে শুধু চাষে সাহায্য করা নয়, একাধিক অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন খাবারের তালিকাতেও রয়েছে তারা৷ আচমকা তারা হারিয়ে গেলে রীতিমত অভুক্ত থাকবে বেশ কিছু পশুপাখি৷

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত পাল্টাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া৷ কিন্তু তাল মিলিয়ে জীবনধারা পাল্টাতে অক্ষম অনেক পোকামাকড়৷ ফলে, অবলুপ্তির পথে তারা৷ শুধু তাই নয়, চাষীদের বাড়ন্ত সার ব্যবহারের ফলেও মারা যাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পোকা৷

পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে মনোকালচার বা একক কৃষির জনপ্রিয়তা৷ এর সাথে বাড়ছে ক্ষেতে কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত সারের ব্যবহারও৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই একটি কারণেই ইউরোপে কমছে পোকামাকড়ের সংখ্যা৷

বিশেষজ্ঞদের মতামত, একক কৃষি ও কীটনাশকের ব্যবহার কমালে বদলাতে পারে চিত্র৷ পাশাপাশি, ফুল বাগান করার জন্য উৎসাহিত করে তুলতে হবে সাধারণ জনগণকে৷ এই চিন্তার ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু হায়গায় শুরু হয়েছে ‘পোকার হোটেল’ নামের এক অভিনব পরিকল্পনা, যা আসলে বাসায় পোকামাকড়ের জন্য নির্দিষ্ট একটি স্থান৷ এই হোটেলের বিক্রি ক্রমেই বাড়ছে ইউরোপে৷