পেগিডার একমাত্র সমর্থক কি এএফডি?
৬ জানুয়ারি ২০১৫ঐ আসছে জুজুবুড়ি – সে খেলা দৃশ্যত আজও বেঁচে আছে, ছোটদের মধ্যে নয়, বড়দের মধ্যে, এমনকি জার্মানিতেও৷ যে কারণে জার্মানির বিভিন্ন শহরে ‘‘প্রতীচ্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়বৃন্দ'' বা এক কথায় পেগিডা আন্দোলন চলেছে৷
হাজার হাজার জার্মান বলছেন, তারা ইসলাম সম্পর্কে ভীত, এবং প্রতীকী মিছিল করে তারা সেটা জানান দিচ্ছেন৷ অপরদিকে হাজার হাজার জার্মান পেগিডার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন – এরা সমর্থন ও উৎসাহ পাচ্ছেন প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সব রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে৷ পেগিডার বিরুদ্ধে বহিরাগত বিদ্বেষের অভিযোগ করছেন নেতারা৷
পেগিডার ফলে জার্মানির মেরুকরণ ঘটেছে৷ এখন প্রশ্ন হলো: সব পেগিডা সদস্যই কি নিন্দনীয় বা সমালোচনার পাত্র? পেগিডা এমন একটি বিকাশধারা, যার কোনো ব্যাখ্যা নেই৷ এবং বিপদটা ঠিক সেখানেই, কেননা ঘটনাবলী ঠিক এভাবেই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে৷
ইসলামকে সমস্যা হিসেবে গণ্য করা
পেগিডা আন্দোলন বিপজ্জনক, কারণ তা ইসলাম সম্পর্কে একটি অস্পষ্ট ধারণার জন্ম দেয়৷ গোড়ায় তাদের লক্ষ্য ছিল জঙ্গি ইসলামপন্থিরা, যারা ধর্মের নামে পণবন্দিদের মুণ্ডচ্ছেদ করে চলন্ত ক্যামেরার সামনে৷ ইতিমধ্যে সোমবারের বিক্ষোভকারীদের একটা বড় অংশ স্বয়ং ইসলামকেই দোষী করে থাকে৷
সেই সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এবং ত্রাণসন্ধানী উদ্বাস্তুদের সমস্যা – এরা সবাই নাকি পশ্চিমি বিশ্বের পক্ষে বিপজ্জনক৷ মাঠ-ময়দানের বাগ্মীরা যখন সহজ-সরল স্লোগান দিয়ে ‘‘জার্মানিকে বাঁচানোর'', অর্থাৎ লোকের মন ভোলানোর চেষ্টা করেন, তখন ব্যাপারটা এই রকমই দাঁড়ায় বটে৷
পেগিডা দেয় এক পর্যায় সহজ সমাধান – যা মঙ্গলজনক নয়৷ কিন্তু জার্মানির তিনটি রাজ্যের রাজ্য বিধানসভায় উপস্থিত একটি রাজনৈতিক দল যখন এই সরলীকৃত দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করে, তখন তার বিপদ সকলের কাছেই স্পষ্ট হওয়া উচিৎ৷
বহু জার্মান ইসলামীকরণ সম্পর্কে ভীত
অন্তত ৩০ শতাংশ জার্মানের মতে পেগিডার উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত৷ এদের মধ্যে ‘‘জার্মানির জন্য বিকল্প'' দল এএফডি-র সমর্থকরাও আছেন৷ এএফডি জার্মানির মূল রাজনৈতিক ধারার অঙ্গ, নাকি বহিরাগত বিদ্বেষের উপর ভিত্তি করা একটি রাজনৈতিক দল – এ বিতর্কের অবসান ঘটতে চলেছে৷ নতুন দলটির বহু সদস্যই সভ্য-ভব্য নাগরিকের সাজে ‘‘ব়্যাবেল-রাউজার'', অর্থাৎ যারা লোক খেপায়, জনতাকে প্ররোচিত করে৷
জার্মানির পশ্চিমাংশে পেগিডা বিশেষ সমর্থন পায়নি৷ দৃশ্যত জার্মানির পূর্বাঞ্চলের মানুষ অ-জার্মান সব কিছুর বিরুদ্ধে অনেক বেশি প্রতিরোধ প্রবণ৷ ড্রেসডেনের রাস্তায় পেগিডা সমর্থকরা আজ যখন ধ্বনি দেন, ‘‘আমরাই এ দেশের মানুষ!'' – তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, ‘‘তোমরা মুসলিমরা আমাদের অংশ নও, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বা উদ্বাস্তুরাও নয়!'' এক্ষেত্রে এএফডি পেগিডার পরামর্শদাতার ভূমিকা নিয়েছে, রাস্তার স্লোগানকে বিধানসভায় ঢুকিয়েছে৷ এই মৈত্রীর একটি ফলশ্রুতি: জার্মান সমাজ আজ চলেছে দক্ষিণমুখো, প্রজন্ম বা শিক্ষাদীক্ষার সব পার্থক্য ছেড়ে৷
‘বহুধারার সংস্কৃতি চাই না'
প্রতি সোমবার ড্রেসডেনে পেগিডার প্রতিবাদ সমাবেশে দেখা যাবে গৃহিণী, পেনশনভোগী, সন্তান সমেত তরুণ শিক্ষক-অধ্যাপক এবং পুলিশের খাতায় নাম আছে, এমন নব-নাৎসিদের৷ পেগিডা আন্দোলনের ব্যাপ্তিটাই ভীতিপ্রদ: এ যেন পশ্চিম জার্মানির বহুধারার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে জার্মানির পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক প্রতিবাদ৷
ইত্যবসরে প্রতিবাদের উপলক্ষ্য বাড়ছে: নিম্ন অবসরভাতার সঙ্গে উদ্বাস্তুদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়কে যুক্ত করে প্রবীণ বয়সে নিরবলম্বন হওয়ার ভীতি ছড়ানো হচ্ছে৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের ফলে পুবের মানুষদের যে সব বাস্তবিক এবং কাল্পনিক ক্ষতি হয়েছে, সেগুলোও মাথা চাড়া দিচ্ছে৷
এই পরিস্থিতিতে বাদবাকি রাজনৈতিক দল যদি এই সন্ধিক্ষণের মুহূর্তটিকে শুধুমাত্র এবং পুরোপুরি এএফডি-র হাতে ছেড়ে দেয়, তবে তার চেয়ে বড় ভুল আর হতে পারে না৷