1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেলিকান পাখিদের কল্যাণে প্রকল্প

৭ মার্চ ২০১৮

ইউরোপের ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে প্রকৃতি ও পশুপাখিরা প্রায়ই কোণঠাসা হয়ে পড়ে৷ মন্টেনেগ্রো ও আলবানিয়ার মাঝে পেলিকান পাখিরা বেশ শান্তিপূর্ণ এক বিচরণক্ষেত্র পেয়েছে৷ কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে৷

https://p.dw.com/p/2tobl
Krauskopfpelikane
ছবি: Andrej Vizi

মন্টেনেগ্রো ও আলবানিয়ার মাঝে স্কাডার লেক দক্ষিণ ইউরোপের সবচেয়ে বড় হ্রদ৷ প্রায় জনমানবহীন এই এলাকায় নেই কোনো শহর, গ্রাম বা বসতি৷ আছে শুধু শুধু নির্ভেজাল প্রকৃতি৷ পক্ষী বিশারদ আন্দ্রেই ভিসি বলেন, ‘‘স্কাডার লেকে ২৮০ প্রজাতির পাখি থাকে৷ তাই এটি ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ পাখি পর্যবেক্ষণের জায়গা৷ অর্ধেকের বেশি ইউরোপীয় প্রজাতির পাখি এখানে রয়েছে৷''

এর মধ্যে একটি প্রজাতি বাকিদের থেকে একেবারে ভিন্ন৷ এই হ্রদেও হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় তাদের দেখা মেলে৷  মন্টেনেগ্রোর জীবতত্ত্ব মিউজিয়ামের পক্ষীবিশারদ আন্দ্রেই ভিসি তাদের সন্ধান জানেন৷ সেই পেলিকান পাখির দেখাও পাওয়া গেল৷ আন্দ্রেই ভিসি বলেন, ‘‘মিঠা পানিতে পেলিকানরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি৷ অর্থাৎ স্কাডার লেকে ঠিক সেই ডালমেশিয়ান পেলিকান প্রজাতি রয়েছে৷ ডানা মেললে ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে৷ মনে হয় এখনো পর্যন্ত ৩১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত মাপ নেওয়া হয়েছে৷''

পেলিকান পাখিদের জন্য প্রকল্প

আনন্দের বিষয় হলো, তাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ এখানকার শান্ত জল ও পরিবেশ তারা পছন্দ করে৷ বিশেষ করে তাদের জন্য কৃত্রিম বাসা তৈরি করার ফলে বংশবৃদ্ধির হার বেড়ে গেছে৷ আগে প্রায়ই পাখির ছানারা পানির উচ্চতা বাড়লে মারা পড়তো৷ এক আন্তর্জাতিক প্রকল্পের আওতায় তাদের জন্য ভাসমান বাসা তৈরি করা হয়েছে৷ বান এলেও সেগুলি পানির উপরেই ভাসে৷

জায়গাটা পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেল, মানুষের উপস্থিতিতে ভয় পেয়ে সব পেলিকান উড়ে গেছে৷ তবে ভাসমান বাসা দেখে বোঝা গেল, সেগুলি পাখিদের কত পছন্দ হয়েছে৷ আন্দ্রেই ভিসি চলতি বছরেই ৬০টি পাখির ছানা দেখেছেন, যেমনটা এর আগে কখনো ঘটেনি৷ সত্যি খুব মনোরম পরিবেশ৷ চারিদিক শান্ত৷ শুধু পাখি দেখা যায়৷ আশেপাশে সুন্দর গ্রাম৷ ইউরোপের মাঝে বড় শহরগুলি থেকে খুব দূরে অবস্থিত না হওয়া সত্ত্বেও এমন পরিবেশ সত্যি বিস্ময়কর৷ পর্যটকদের অনুপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো৷

ইভান সিন্ডোভিচ সেই অবস্থা বদলে দিতে চান৷ তিনি ভবিষ্যতের এক নির্মাণ প্রকল্পের ম্যানেজার৷ জাতীয় পার্কের মাঝে এক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে৷ ওয়েবসাইট অনুযায়ী সেখানে দামী হোটেল, বিলাসবহুল ভিলা, রোস্তোরাঁ, নিজস্ব বন্দর তৈরি হচ্ছে৷ ম্যানেজারের দাবি, পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উঁচু মানদণ্ড স্থির করা হয়েছে৷ এই রিসর্ট তৈরি হলে দরিদ্র এলাকার অর্থনৈতিক মুনাফা হবে বলে তিনি মনে করেন৷ ইভান বলেন, ‘‘প্রথমত আমরা কর্মসংস্থান করছি৷ ফলে মানুষ এখানে থাকার কারণ পাবে৷ তারা পরিবারের জন্য টেকসই বাসা তৈরি করতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, আমরা তাদের কাছ থেকে খাদ্য, ওয়াইন কিনবো৷ অবশ্যই সে সব অরগ্যানিক হতে হবে৷ মোটকথা আমরা তাদের এখানে থাকার কারণ দিচ্ছি৷''

পরিবেশবাদীরা ও এনজিও-গুলি অবশ্য এই প্রকল্পটি সম্পর্কে সন্দিহান৷ তাদের আশঙ্কা, এর ফলে সংরক্ষিত এলাকায় আরও নির্মাণ কাজ শুরু হবে৷ পেলিকান কল্যাণ প্রকল্পের সমন্বয়ক বিয়াংকা প্রাকলিয়াচিচ-ও এমন বিশাল বিনিয়োগের বিরোধী৷ তাঁর মতে, ‘‘স্কাডার লেকের জন্য আমার স্বপ্ন হলো স্থানীয় সমাজের কাছে ফিরে যাওয়া৷ সেখানে গভীর মূল্যবোধ রয়েছে৷ তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে৷ খুবই সুন্দর৷ সংগীতের ধারাও অসাধারণ৷ অনাবিষ্কৃত সম্পদের মতো৷''

পডুম গ্রামে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন৷ সেখানে পর্যটকরা লেকে স্নান করতে আসতে পারেন৷ সেখানে বেশ কিছু খাদ্য উৎপাদন করা হয়৷ অনেক বাড়িতেই ঘর খালি রয়েছে৷ এমিন সুনমুলইয়াই গ্রামে পর্যটন বাড়াতে এক নাগরিক উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ উপার্জনের অভাবে অনেক মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ায় তিনি খুবই দুঃখ পাচ্ছেন৷ পেলিকান পাখি সেই সমস্যার সমাধান করতে পারে৷

পেলিকানদের কলোনি থেকে গ্রামটি বেশি দূরে নয়৷ সে কারণে  পেলিকান কল্যাণ প্রকল্পের রেঞ্জারেরদপ্তর এই গ্রামেই চালু করা হয়েছে৷ বিয়াংকা প্রাকলিয়াচিচ এই গ্রামের মানুষের সহায়তা নিতে প্রস্তুত৷ সীমিত আকারে পর্যটন নিয়েও তাঁর আপত্তি নেই৷ প্রকল্পের সমন্বয়ক বিয়াংকা প্রাকলিয়াচিচ বলেন, ‘‘স্থানীয় সমাজই যদি পর্যটন পরিচালনা করে এবং সেই কাজে পেলিকানদেরই ব্যবসায়িক সহযোগী করে, তারা কলোনির সুরক্ষা নিশ্চিত করবে৷ আমি নিশ্চিত, যে রেঞ্জারদের কাজ তখন কমে যাবে৷''

একদিকে স্পর্শকাতর পেলিকান, অন্যদিকে অতি উৎসাহী পর্যটন ব্যবসায়ী৷ জেলেরা উপার্জনের জন্য লেকের উপর নির্ভরশীল৷ সম্ভবত আগামী বছরগুলিতে এই এলাকায় অনেক পরিবর্তন আসছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য