1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেশোয়ারে এখন ট্যুরিস্ট আসেনা, হানা দেয় আত্মঘাতী

৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

আফগান সীমান্তে অবস্থিত পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের বর্ণাঢ্য কিসসাখানি বাজার দেখতে উপস্থিত হতো নানা দেশের মানুষ৷ কিন্তু নাইন-ইলেভেনের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ঘটনা বদলে দিয়েছে সব৷ পেশোয়ার এখন উগ্র ইসলামি জঙ্গিদের হামলায় ত্রস্ত৷

https://p.dw.com/p/12UYG
পেশোয়ারে জঙ্গি হামলার এমন দৃশ্য কোন নতুন কিছু নয়ছবি: picture-alliance/dpa

হাজার হাজার মাইল দূরের মহানগরী  নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার ঘটনা-যে পেশোয়ারবাসীদের জীবনের ওপর এত বেশি প্রভাব রাখবে, এটা তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি৷ কিন্তু নাইন-ইলেভেন'এর পর থেকে এই দশটি বছরে জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকা চালিত যুদ্ধে পাকিস্তানের সহযোগিতার বিরোধী উগ্র ইসলামি জঙ্গিরা পেশোয়ারে বারবার হামলা চালিয়েছে৷

প্রাচীন সিল্ক রুটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা খাইবার পাসের প্রবেশপথটি হলো এই পেশোয়ার৷ এখানকার অর্থনীতির প্রাণশক্তি ছিল এক সময় ট্যুরিস্ট আর ব্যবসায়ীরা৷ কিন্তু পেশোয়ার এখন চুম্বকের মত টানে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের৷

ভেষজ ওষুধপত্রের দোকান চালান শেখ আরশাদ৷ তাঁর একখানা ছোট্ট ভ্যান আছে৷ বোমা হামলায় ভ্যানটার খুব ক্ষতি হয়৷ কিন্তু মেরামত করেও রক্ষা নেই৷ তাঁর ঐ দোকান টিকিয়ে রাখতে ভ্যান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন শেখ আরশাদ৷ তিনি বলছেন: ‘‘প্রতিদিন সকালবেলা দোকানে আসি৷ জানিনা জীবিত নাকি মুর্দা হয়ে ঘরে ফিরব৷ নাইন-ইলেভেন ঘটল যখন, ভাবতেই পারিনি যে এর ফলে আমার ব্যবসার, আমাদের এই শহরের এত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে৷ কিছুই তো আর করবার নেই৷ প্রতিটি বোমা হামলার পর পুলিশ আসে, আমাদের নাম টুকে নেয়, ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়৷ তারপর কিছুই আর হয়না৷''

Pakistani Muslims visit a bazaar to buy garments and other items as preparation to celebrate the upcoming Eid al-Fitr festival, a celebration that marks the end of the holy fasting month of Ramadan, Saturday, Sept. 19, 2009 in Peshawar, Pakistan. (AP Photo/Mohammad Sajjad)
পেশোয়ারের একটি জমজমাট বাজারছবি: AP

শত শত বছর ধরে  পেশোয়ার ছিল আফগানিস্তান, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যের ভিতর সংস্কৃতি আর বাণিজ্যিক লেনদেনের এক সঙ্গমস্থল৷ ১৯৮০'র দশকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনাদের তাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব আর পাকিস্তান যখন মুজাহিদ বাহিনীর গোরিলা যুদ্ধ চালাতে সাহায্য সমর্থন যোগাচ্ছিল, তখন পেশোয়ার হয়ে উঠেছিল গুপ্তচর আর জিহাদিদের গোপন ডেরা৷  কিন্তু এখন পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম খাইবার-পাখতুনওয়াহ প্রদেশের এই রাজধানী শহরের সেই যাদুটা ফিকে হয়ে গেছে৷

২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বে চালিত অভিযানে আফগানিস্তানে তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত হবার পর তাদের অনেকে পালিয়ে আসে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমে৷ ইসলামাবাদের ১৫০ কিলোমিটার দূরে পেশোয়ারে তারা গড়ে তোলে নিরাপদ আশ্রয়৷ ২০০৭ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ'এর আমলে সেনাবাহিনী ইসলামাবাদের লাল মসজিদে জঙ্গিদের ওপর অভিযান চালানোর পর পাকিস্তান রাষ্ট্র আর দেশের ভিতরে বেড়ে ওঠা তালেবানের মধ্যে শুরু হয়ে যায় পূর্ণাঙ্গ এক যুদ্ধ৷ আর পেশাওয়ার সেই আগুনের আঁচটা বেশ ভাল করেই অনুভব করতে শুরু করে৷

সরকারি বাহিনীর অভিযান আর তালেবানের পাল্টা হামলায় ক্লিষ্ট হতে থাকে এই শহর৷ একের পর এক আত্মঘাতী বোমা হামলা হরণ করে নেয় শত শত মানুষের জীবন৷ এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা কেউই আর নিরাপদ মনে করছেনা৷

এর মানসিক ক্ষতও খুবই গভীর৷ মনরোগ বিশেষজ্ঞ খালিদ মুফতি বলছেন: ‘‘নাইন-ইলেভেনের আগে আমি হয়ত একশোটিতে একটি বাচ্চা পেতাম যে কিনা ডিপ্রেশনে ভুগছে৷ এখন তার সংখ্যা প্রতি সাত জনে একজন৷''

অর্থনীতিরও ক্ষতি মারাত্মক৷ ২০০৭ সালের পর থেকে শহরের শিল্পাঞ্চলের অর্ধেকটাই বন্ধ৷ বাকি কলকারখানাতেও উৎপাদন নেমে গেছে ৫০ শতাংশ৷ পেশোয়ারের ঐতিহাসিক কিসসাখানি বাজার যেন ধুঁকছে এখন৷ স্থানীয় প্রশাসনে উগ্র ইসলামপন্থীদেরই প্রাধান্য৷ ফলে সেখানে আর ফিল্ম, থিয়েটার, গান বাজনা, আর্ট'এর কোন জায়গা থাকছেনা৷

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন