পোশাক নিয়ে ইরানি মহিলাদের চোর-পুলিশ খেলা
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের মহিলাদের পোশাক-আশাকের ব্যাপারে কড়া বিধিনিয়ম মেনে চলতে হয়৷ তবে প্রতিরোধ দানা বাঁধছে, তরুণীরা ক্রমেই আরো বেশি করে রঙিন সাজপোশাকের দিকে ঝুঁকছেন৷
মাথার চুল দেখানো চলবে না
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরানের শাসকবর্গ মহিলাদের ‘শালীন’ পোশাক-আশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই ‘ড্রেস কোড’ অনুযায়ী মহিলাদের মাথার চুল পুরোপুরি ঢাকা থাকতে হবে; লম্বা ঢোলা পাতলুন আর ওভারকোট পড়তে হবে; সেগুলো যতদূর সম্ভব কালো বা ছাই রঙের হলেই ভালো৷
নীরব প্রতিরোধ
প্রায় চার দশকের নিপীড়ন সত্ত্বেও মহিলাদের সাহস অটুট৷ বহু ইরানি মহিলা কড়া ড্রেস কোডের নিজস্ব ব্যাখ্যা করে নিয়েছেন৷ তারা হিজাব আর বোরখা পরেন বটে, তবে নিজেদের মতো করে৷
সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ
রঙচঙে আর খোলামেলা ফ্যাশন কাম্য নয়৷ প্রতিবছর গরমে পথেঘাটে নৈতিকতার প্রহরীদের নজরদারি বাড়ে৷ বিধিনিয়ম মেনে না চললে, পুলিশ পথ আটকায়, শুরু হয় লম্বা তর্ক-বিতর্ক, বাগবিতণ্ডা...
ফলশ্রুতি
‘মরাল পুলিশ’-কে সন্তোষজনক কারণ না দেখাতে পারলে অর্থদণ্ড, এমনকি কারাদণ্ডও হতে পারে৷ আটক মহিলাদের মুচলেকা দিতে হয় যে, তারা ভবিষ্যতে নিয়ম মেনে চলবেন৷ জেলহাজতে থাকাকালীন মহিলাদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে নোংরা কালো ‘চাদর’ পরিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়৷
রঙচঙে, আঁটোসাটো আর ছোট...
অনেক তরুণী শাস্তির ভয়েও সাজ ছাড়তে রাজি নন৷ নৈতিকতার প্রহরীদের দৌরাত্ম্য সত্ত্বেও কমবয়সি মহিলারা ক্রমেই আরো বেশি করে আধুনিক সাজপোশাকের দিকে ঝুঁকছেন৷ বহু মডেল সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হালফ্যাশন পরিবেশন করে থাকেন৷
নিপীড়ন সত্ত্বেও ফ্যাশন
ইরানি মডেল শবনম মোলাভি এমনকি মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘এফএসএইচএন’-এর প্রচ্ছদও অলঙ্কৃত করেছেন৷ গত মে মাসে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, ‘ইসলাম পরিপন্থি সংস্কৃতি’ প্রচারের দায়ে৷ কয়েকদিন পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান৷
রোহানির আমলেও বোরখা বাধ্যতামূলক
তবে ফ্যাশন সচেতনতাকে অত সহজে নিষিদ্ধ করা যায় না৷ নৈতিকতার প্রহরীদের যাবতীয় উৎপাত ইরানি মহিলাদের ফ্যাশনেবল জামাকাপড় পরার শখ রোধ করতে পারেনি৷
নিষ্ফল প্রতিশ্রুতি
প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি ২০১২ সালের নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ‘খোলা রাস্তায় হয়রানি’ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু যে বিশটির বেশি সংস্থা মহিলাদের পোশাক-আশাকের উপর নজর রাখার দায়িত্বে, তাদের একটি বড় অংশ রোহানির নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত৷
নৈতিক গোয়েন্দা পুলিশ
২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে সরকার নিজেই আরো প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তেহরানের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন যে, মোট সাত হাজার পুরুষ ও মহিলা সাদাপোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ হিসেবে মহিলাদের সাজপোশাক ও আচার-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছেন৷
ইন্টারনেটে সংহতি
গত জুলাই মাসের শেষে ইরানি পুরুষরা #মাইনহিজাব (অর্থাৎ আমার হিজাব) হ্যাশট্যাগ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অভিযান শুরু করেন৷ তারা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম নিজেদের হিজাব পরা অবস্থায় ছবি পোস্ট করে ইরানি মহিলাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন৷