পোল্যান্ডে স্ল্যাকলাইন উৎসবে নজর-কাড়া কসরত
১৩ অক্টোবর ২০২২পোল্যান্ডের লুবলিন শহরে বছরে চার দিন সবার নজর থাকে উপরের দিকে৷ শহরের ঐতিহাসিক প্রাণকেন্দ্রে বিপজ্জনক উচ্চতায় স্ল্যাকলাইনররা তাদের চোখ-ধাঁধানো কসরত দেখান৷ ২০২২ সালের আর্বান হাইলাইন ফেস্টিভালে ১৫টি দেশের একশরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তারা এসেছেন কলম্বিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ইউক্রেন বা লিথুয়েনিয়া থেকে৷
উৎসবের অন্যতম তারকা ছিলেন পোল্যান্ডের স্ল্যাকলাইনার ফিলিপ ওলেকস্লিক৷ এই নিয়ে সাত বার তিনি উৎসবে অংশ নিলেন৷ তিনি স্ল্যাকলাইনটিকে ট্র্যাম্পোলিন হিসেবে ব্যবহার করেন৷ তার উপর লাফঝাঁপ করেন, শূন্যে ঝাঁপিয়ে ঘুরে যান বা অন্যান্য কসরৎ দেখান৷ ক্যারিবীয় অঞ্চল হোক, দুবাই বা মেক্সিকো – সব জায়গায় ফিলিপ চোখ-ধাঁধানো কৌশল দেখাতে পছন্দ করেন৷ আর্বান হাইলাইন ফেস্টিভালে তিনি এক কর্মশালায় নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও পরামর্শও তুলে ধরেছেন৷
স্ল্যাকলাইনের উপর সফলভাবে কসরত করতে হলে শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানসিক অবস্থাও স্থিতিশীল থাকতে হবে৷ কলম্বিয়ার এক স্ল্যাকলাইনার এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমার কাছে স্ল্যাকলাইন হলো নিজের সঙ্গে সংযোগের একটা সুযোগ, সেই মুহূর্তে নিজেকে সঁপে দেওয়ার মতো৷ বাস্তবকে অনুভব করে নিজের শরীর বোঝার সেই মুহূর্তকে আমরা ‘ফ্লো মোমেন্ট' বলি৷''
উৎসবে যোগ দিতে আসা আর এক জন স্ল্যাকলাইনার বলেন, ‘‘সে সময়ে কেউ নিজের পা, দড়ি বা দোলনরত লাইনের দিকে তাকায় না৷ সামনে লক্ষ্যের দিকে সোজা তাকাতে হয়৷''
সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সেই মুহূর্তে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন ইউক্রেনের নারী নাটালিয়া ড্রোস্ট৷ চার দিনের এই উৎসব তাঁকে নিজের দেশের যুদ্ধের পরিস্থিতি ভুলে থাকতে সাহায্য করেছে৷ নাটালিয়া বলেন, ‘‘এই ফেস্টিভাল আমাকে অনেক সাহায্য করছে, কারণ আমি স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পাচ্ছি৷ পাঁচ মাস ধরে এমন অনুভূতি হয় নি৷ এখানে কোনো এয়ার সাইরেন নেই৷ ইউক্রেনে রাত ১১টার পর পথে বের হওয়া নিষেধ৷ অথচ এখানে আমি সেটা করতে পারি৷ এখন বুঝতে পারি, যে এই যুদ্ধের কারণে আমরা কত কী হারিয়েছি! আমাদের শান্তি, আমাদের স্বাভাবিক জীবন৷ বুঝছি সে সব কী মূল্যবান৷''
উৎসবের সব আয় এ বছর ইউক্রেনের জন্য দান করা হচ্ছে৷ ইউক্রেনের অংশগ্রহণকারীদের কোনো মাসুলও গুনতে হচ্ছে না৷
চলতি বছরেও শহরের মাঝে দুটি গির্জার চূড়ার মাঝে ২৫ মিটার উচ্চতায় ‘চার্চলাইন' নামের দড়ি টাঙানো হয়েছে৷ ফেস্টিভালের আটটি হাইলাইনের মধ্যে এটিই সবচেয়ে উঁচু৷ সেই উচ্চতায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হয়, প্রচলিত স্ল্যাকলাইনের মতো খোলামেলা পরিবেশ সম্ভব নয়৷ এমনকি ফিলিপ ওলেক্সিকের মতো অভিজ্ঞ মানুষেরও সেটির প্রয়োজন হয়৷ পায়ের নীচে মাত্র আড়াই সেন্টিমিটার চওড়া দড়ি ছাড়া কিছুই নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা পার্কে দুটি গাছের মাঝে দড়ির উপর হাঁটতে পারে, আমি এমন মানুষকে চিনি৷ তবে তারাও হাইলাইনে যেতে পারবে না৷ সেই উচ্চতায় তাদের ভয় করবে৷ সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ নীচের উচ্চতার সঙ্গে সংগ্রামই সবচেয়ে মজার বিষয়৷ এমন উচ্চতায় পায়ের নীচে এমন শূন্যতায় আমিও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না৷ আমি চারিদিকে, আমার পায়ের নীচে মানুষের হাঁটা দেখতে পাই৷ ফলে আমার বেশ ভয় করে বৈকি৷''
সব দিক থেকেই এই ক্রীড়ায় চরম চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ এত বেশি সাহস না থাকলেও ফেস্টিভালে কম ঝুঁকিপূর্ণ কসরতও করা যায়৷ কারণ সবে স্ল্যাকলাইন শুরু করেছেন, এমন মানুষদেরও স্বাগত জানানো হয়৷ উৎসবের আয়োজক ভইচেখ সিয়েনকো বলেন, ‘‘এখানকার পরিবেশ বেশ মনোরম৷ এটাই এই ধরনের প্রথম উৎসব৷ সে কারণে এটির বিশেষ গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা রয়েছে৷ মানুষকে আকর্ষণ করতে আমাদের ঢাকঢোল পিটিয়ে বিজ্ঞাপন করতে হয় না৷''
আগামী বছরও এই ফেস্টিভাল আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে৷ তখনও আন্তর্জাতিক স্ল্যাকলাইন জগতের কুশিলবরা ১৫ বারের মতো লুবলিনে মিলিত হবেন৷
ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি