পোশাক কারখানা বন্ধে মালিকরা দুশ্চিন্তায়
২৭ জুলাই ২০২১তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, গত বছরের শুরু থেকে চলা মহামারির কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমায় ক্রয় আদেশের দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছিল দেশের রপ্তানিমুখী প্রধান খাত৷ ৫ আগস্টের পরও যদি কারখানা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা৷
সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে কারখানার কর্মীদের গণটিকাদানের পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে থাকা ক্রয় আদেশের কাজগুলো সারতে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলার প্রস্তাব রেখেছেন মালিকরা৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ সভাপতি শহিদুল আজিম সোমবার বলেন, "জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে পোশাক রপ্তানির ‘পিক টাইম'৷ সারা বছরের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ রপ্তানি হয় এই সময়ে৷ পশ্চিমের দেশগুলোতে ক্রিসমাস ও উইন্টার সিজনের অর্ডারগুলো এখন শিপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে পণ্য দিতে না পারলে পরে এই পণ্যগুলো নিয়ে তারা বিক্রি করতে পারবে না৷”
২০২০ সালের মার্চে প্রথম দফায় লকডাউন ঘোষণার সময়ও পোশাক কারখানাগুলো শতভাগ বন্ধ করতে হয়নি৷ এবার পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নেওয়ায় ১৪ দিনের লকডাউনে সব কারখানা এর আওতায় রাখা হয়েছে৷
ঈদের পর করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ সোমবার ১৫ হাজার ১৯২ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে সর্বাধিক ২৪৭ জন মারা গেছেন৷
মহামারির মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ে আগের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ৷ মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে৷
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই৷
এই পরিস্থিতিতে একাধিক রপ্তানিকারক জানান, কারখানাগুলোর সাপ্লাই চেইনে এমন অনেক অর্ডারও রয়েছে যেগুলোর প্রায় ৯০ শতাশ কাজ হয়ে গেছে; শুধু ফিনিশিং বা কার্টনিং বা প্যাকেজিং করলেই শিপমেন্ট দেওয়া সম্ভব৷ লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে এই কাজগুলো সম্পূর্ণ করার কথা ভাবতে হবে৷
বিজিএমএইর সিনিয়র সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পোশাক ব্যবসায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা সরকারের কাছে বলেছি, যেসব অর্ডারের কাজ প্রায় চূড়ান্ত সেগুলো ক্ষুদ্র পরিসরে রপ্তানি উপযোগী করা হোক৷”
সময়মতো শিপমেন্ট দিতে না পারলে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম৷
এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানান বিজিএমইএ সহ-সভাপতি আজিম৷ তিনি বলেন, "এই সংকট থেকে উত্তরণে সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে টিকা৷”
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতারও মনে করেন রপ্তানিমুখী পোশাক খাত সচল রাখতে শ্রমিকদের গণটিকাদানই একমাত্র সমাধান৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)