পোশাক কারখানায় নিরাপদ কাজের পরিবেশ কতদূর?
৪ মে ২০১৭২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এগারো শ’রও বেশি গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হন৷ আহত হন কয়েক হাজার৷ ভবনটিতে কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন৷ ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা চাপের মুখে পড়ে৷ বিশেষ করে শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে চলে আসে৷ নানা আলোচনার পর ক্রেতাদের দু'টি জোট অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ শুরু করে৷
গত ১১ এপ্রিল উত্তর অ্যামেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭১টি তৈরি পোশাক কারখানা শতভাগ সংস্কার কার্যক্রম শেষ হয়েছে৷ কয়েক মাসের মধ্যে এ সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে যাবে৷
অ্যালায়েন্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেমস এফ মরিয়ার্টি ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১ হাজার ৬৭৬টি কারখানায় অ্যালায়েন্স তাদের পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ করেছে৷ এর মধ্যে ৪৪০টিতে পুনরায় পরিদর্শন কার্যক্রম চলছে৷ প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে ব্যর্থ হওয়ায় অ্যালায়েন্সের তালিকাভুক্ত ১৪২টি পোশাক কারখানার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড গত বছরের মে মাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তারা ১ হাজার ৫৫০টি কারখানা পরিদর্শন করেছে৷ এর মধ্যে প্রায় ৭৫টি নতুন তালিকাভুক্ত কারখানায় পরিদর্শন চলমান রয়েছে৷ এ ছাড়া ৫৬ শতাংশ পোশাক কারখানার সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পোশাক কারখানাগুলো আগের তুলনায় অনেক নিরাপদ হয়ে উঠেছে৷
অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পাশাপাশি পোশাকখাত মূল্যায়নে রয়েছে সরকারের জাতীয় উদ্যোগ৷ দেশের মোট ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানা এ উদ্যোগের আওতায় রয়েছে৷ প্রাথমিক পরিদর্শনের পর কারখানাগুলোকে ঝুঁকির মাত্রাভেদে গ্রিন, ইয়েলো, অ্যাম্বার ও রেড শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে৷ ‘ইমপ্রুভিং ওয়ার্কিং কন্ডিশন ইন দ্য রেডিমেড গার্মেন্ট সেক্টর’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র কারিগরি সহায়তায় এ কার্যক্রমে অর্থায়ন করছে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী৷
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ধসের পর আমরা ভবন, বিদ্যুৎ এবং ফায়ার এই তিনটি নিয়ে কাজ করছি৷ কর্মস্থলের নিরাপত্তার জন্য বিল্ডিং, ইলেকট্রিক এবং ফায়ার সেফটির জন্য আমরা কাজ করছি৷ আমরা চেষ্টা করছি বিশ্বমানের পোশাক কারখানা পরিবেশ তৈরির৷ এরই মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে৷ আশা করি এই বছরের শেষ নাগাদ শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে৷’’
তিনি জানান, ‘‘ইউনাইটেড গ্রিণ বিল্ডিং সার্টিফিকেট অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা ১০টি পোশাক কারাখানার ৭টি বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশের ৬৯টি পোশাক কারখানা ইউএস-এর গ্রিণ বিল্ডিং সার্টিফিকেট পেয়েছে৷ আরো ২২০টি কারখানা এই সার্টিফিকেট পাওয়ার পথে রয়েছে৷’’
এদিকে এডিবি’র প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে ঢাকায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বাংলাদেশের শতকরা ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধিরও প্রশংসা করেন৷