৫০ হাজার ছাঁটাই
২২ এপ্রিল ২০১৪‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ' বা টিআইবি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘‘পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে ও সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই নন-কমপ্লায়েন্সের অভিযোগে বাংলাদেশের অনেক পোশাক কারখানার অর্ডার বাতিল করেছে বিদেশি ক্রেতারা৷ এর ফলে কমপক্ষে ৫০টি কারখানা বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হয়েছেন৷''
টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘‘যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং ক্রেতাপক্ষ দায়িত্বশীল ও নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যবসা পরিচালনায় ব্যর্থ হন, তাহলে আরো হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারাবে এমন কারণে, যার জন্য তাঁরা মোটেই দায়ী নন৷''
টিআইবি-র চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল মনে করেন, ‘‘শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ সমন্বয় সাধন জরুরি৷ শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি ও মৌলিক স্বার্থের বিষয়ে সরকার ও মালিক পক্ষের আরো বেশি ভূমিকা রাখা প্রয়োজন৷'' সোমবার ‘তৈরি পোশাক খাতের সুশাসন চ্যালেঞ্জ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি৷ তাতে বলা হয়েছে, ‘‘রানা প্লাজা ধসের পরে তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তার অনেকটাই বাস্তবায়িত হলেও মৌলিক জায়গাগুলোয় কোনো পরিবর্তন হয়নি৷''
ইতিবাচক উদ্যোগসমূহ সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি তৈরি করলেও, টেকসই পরিবর্তনের জন্য তা অপর্যাপ্ত৷ সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও প্রস্তাবিত গার্মেন্টস পল্লিতে কলকারখানাগুলো সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি৷ অনেকগুলো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা হতাশার জন্ম দিয়েছে৷ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘‘সরকার, ক্রেতাপক্ষ এবং তাদের ফোরাম কর্তৃক কারখানা পরিদর্শনের গতি খুবই শ্লথ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত মানের স্বচ্ছতা ছিল না৷ ক্রেতার প্রতিনিধিত্বকারী কিছু পরিদর্শকের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঝুঁকি রয়ে গেছে৷''
টিআইবি বলেছে, ‘‘সকল পক্ষকে বিশেষত সরকারি সংস্থা, গার্মেন্টস মালিক এবং বিজিএমইএ এবং ক্রেতাপক্ষ ও তাদের প্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে৷ এই খাতে সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে শ্রমিকরা নিরাপত্তা এবং অধিকার বঞ্চনার শিকার হতে থাকবে৷''
তাই টিআইবি পোশাক খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে সুশাসন বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগের সমন্বয় এবং তাদের প্রতিশ্রতির বিপরীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য ‘তৈরি পোশাকখাত সুশাসন কর্তৃপক্ষ' গঠনের প্রস্তাব করেছে৷
এদিকে বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিজস্ব ভবনে কারখানা সরিয়ে নিতে সময় দিতে হবে৷ সেই সময় না দিয়ে অর্ডার বাতিল গ্রহণযোগ্য নয়৷'' এছাড়া বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নিতে হবে শ্রমিক স্বার্থ বিবেচনায় রেখে৷ পোশাক কারখানা বন্ধ করে শ্রমিক ছাঁটাই করলে শ্রমিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷''
তবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা সংস্কারের ফলে কাজ বন্ধ থাকলে পোশাক শ্রমিকদের প্রথম দুই মাসের বেতনের অর্ধেক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে উত্তর অ্যামেরিকার পোশাক আমদানিকারকদের জোট অ্যালায়েন্স৷‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি'-র পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অ্যালেন টশার গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে গিয়ে অ্যালায়েন্সভুক্ত কোনো কারখানা যদি বন্ধ করতে হয়, তাহলে সে কারখানার শ্রমিকদের প্রথম দুই মাসের বেতনের অর্ধেক অ্যালায়েন্স বহন করবে আর বাকি অর্ধেক দেবে কারখানার মালিক৷''
তিনি জানান, ‘‘গত বছর ২৪শে এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিকের প্রাণহানির পর উত্তর অ্যামেরিকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ গুটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু পরে আমরা উপলব্ধি করি যে, তা কোনো সমাধান নয়৷ এ কারণে অন্তত পাঁচ বছর এ দেশে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়৷''