প্যারিসের পুড়ে যাওয়া গির্জা পুনর্গঠনের কর্মযজ্ঞ
২৬ মে ২০২৩ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতি অত্যন্ত আলতোভাবে কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ মাস্টার গ্লাস মেকার হিসেবে তিনি প্যারিসের নোত্র দাম গির্জার জানালার মেরামতি করছেন৷ সেইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সৃষ্টি হওয়া কালির ছোপও দূর করতে হচ্ছে৷
যত দ্রুত সম্ভব গির্জাটি আবার সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কারণে তাঁকে বেশ চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে৷ সে কারণে তাঁরা দুটি শিফটে কাজ করছেন৷ সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ চলছে৷ ভ্যাঁসঁ-প্যুতি বলেন, ‘‘এই দুঃস্বপ্ন মেরামত করা সত্যি অনবদ্য অভিজ্ঞতা৷ কারণ সাধারণত আমরা আরও বেশি সময় ধরে কাজ করি৷ কিন্তু এখানে তো এক ধরনের জরুরি অবস্থা বলা চলে৷ নোত্র দামের বিশেষ এক প্রতীকী চরিত্র রয়েছে৷ সেই অবস্থা পুনরুদ্ধার করতেই হবে৷''
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রায় অলৌকিকভাবে গির্জার জানালাগুলি বেঁচে গিয়েছিল৷ কিন্তু নোত্র দামের প্রতীক হিসেবে পরিচিত গির্জার চূড়াটি নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়ে৷ বহু দূর থেকে সেটা দেখা যেত৷ ছাদও ধসে গিয়েছিল৷ গোটা গির্জাই প্রায় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল৷
সেই দুর্ঘটনার পর ফ্রান্সের সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিল৷ পাঁচ বছরের মধ্যে মেরামতির কাজ শেষ করে আরও সুন্দর এক নোত্র দামের দরজা আবার খুলে দেবার অঙ্গীকার করেছিল সরকার৷ পুনর্গঠন প্রকল্পের উপ-প্রধান ফিলিপ জস্ট বলেন, ‘‘এমন গুরুত্বপূর্ণ এক নির্মাণের সাইটে কেবল সেরা মানুষের কাজের অধিকার রয়েছে৷ টেন্ডারের ক্ষেত্রে আমরা সব কাজের জন্য সেরা মিস্ত্রীদের বেছে নিয়েছিলাম৷''
একশোরও বেশি কোম্পানি পুনর্গঠন প্রকল্পে কাজ করছে৷ এক হাজারেরও বেশি মিস্ত্রী কাজে হাত লাগাচ্ছেন৷ তবে সবাই কিন্তু মূল সাইটে সক্রিয় নন৷
ক্যাথিড্রালের জানালাগুলি গোটা ফ্রান্স জুড়ে বিভিন্ন কর্মশালায় পাঠানো হয়েছে৷ প্যারিসের দক্ষিণে ত্রোইয়ে শহরে ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতি-র কর্মশালায়ও একটি জানালা এসেছে৷ তিনি মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর কাচের অংশগুলি নিয়ে কাজ করছেন৷ কয়েকটি এমনকি মধ্যযুগে তৈরি৷ জানালাগুলি ছাড়া ক্যাথিড্রাল খোলা সম্ভব নয়৷ ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতি মনে করেন, ‘‘এই সব জানালা ছাড়া পবিত্র পরিবেশ হারিয়ে যাবে, অশুদ্ধ মনে হবে৷ জানালাগুলি ফিল্টারের মতো প্রাকৃতিক আলোকে ঐশ্বরিক আলোয় পরিণত করে৷''
ভেঙে পড়া গির্জার চূড়াও অবিকল আগের মতো করে তৈরি করার কথা৷ ফিলিপ জস্ট বলেন, ‘‘কাঠের চূড়াটি আবার প্যারিসের আকাশে কয়েক শো মিটার উঁচুতে শোভা পাবে৷ বহুকাল এমনটা দেথা যায়নি৷ সে ক্ষেত্রে আমরা ঊনবিংশ শতাব্দীর স্থপতি ভিয়োলে-ল্য-দুকের কৌশল প্রয়োগ করবো৷''
গির্জা কর্তৃপক্ষের টাকার কোনো অভাব নেই৷ মেরামতির কাজের জন্য গোটা বিশ্ব থেকে চাঁদা এসেছে৷ কিন্তু শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মূল্য শুধু অর্থ দিয়ে চোকানো হচ্ছে না৷ ফ্লাভি ভ্যাঁসঁ-প্যুতি বলেন, ‘‘আমরা সেই মধ্যযুগ থেকে চলে আসা কাচ শিল্পীদের ধারা বহন করছি৷ প্রত্যেকে এই স্থাপত্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বহন করছে৷''
আগুনের কালি ও কয়েক'শো বছরের ধুলা দূর করার পর জানালাগুলি একেবারে ঝকমকে ও নতুন রূপে শোভা পাবে৷ ফলে ক্যাথিড্রালটি অগ্নিকাণ্ডের আগের তুলনায় হয়তো আরো সুন্দর হয়ে উঠবে৷
সুসানে ড্যোরহাগে/এসবি
২০১৯ সালের গ্যালারিটি দেখুন...