প্রকৃতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষির বিকাশ সম্ভব
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১কৃষি ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন
দুর্ভিক্ষের হাত থেকে, ক্ষুধার হাত থেকে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব, যদি কৃষিশিল্প, জমি এবং প্রযুক্তি প্রকৃতির বিপক্ষে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে৷ পৃথিবীতে মানুষ বাড়ছে, কিন্তু সেই সঙ্গে বাড়ছে না কৃষিজমি বা ফসলের উৎপাদন৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াচের প্রতিবেদনে বেশ স্পষ্ট করেই তা বলা হয়েছে৷ ওয়াশিংটনে অবস্থিত এই সংস্থা মূলত বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করে৷ কোন সমস্যার সমাধান কীভাবে হওয়া উচিত তা নিয়ে গবেষণা করে৷ মানুষ যেভাবে খাদ্য, পানীয় সহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য গ্রহণ করে, সেই প্রবণতাকে আরো টেকসই করে তোলার বিষয়কেই ২০১০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের মূলমন্ত্র করা হয়েছে৷ ‘সবার জন্য খাদ্য' – এই সংকল্পে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে৷
মার্চ মাসে জার্মান সংস্থা ‘জার্মানওয়াচ' প্রকাশ করবে তার বার্ষিক প্রতিবেদন৷ সংস্থার প্রতিনিধি টোবিয়াস রাইশার্ট বললেন, ‘‘আমাদের প্রতিবেদনে আমরা বেশ স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছি যে কৃষিশিল্পকে বিশেষ কোন শাখা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না৷ কারণ কৃষিশিল্প প্রকৃতির বাইরে নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ অথচ এই শাখাকেই এতোদিন বেশ তীব্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কোন ফসল ফলানো হবে, কোন ফসল কৃত্রিমভাবে ফলানো সম্ভব৷ এসব বন্ধ করে আমাদের কৃষিশিল্প এবং প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় খুঁজে বের করতে হবে৷ কারণ ফসলের উৎপাদন শুধু কৃষিজমির ওপরই নির্ভরশীল নয়, শুধু কৃষিজমি সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না৷ একটি বিশেষ ফল বা বিশেষ পরিমাণে পশুজাত পণ্য – যেমন দুধ বা মাংস উৎপাদন করতে হলে প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনার৷ প্রকৃতির সঙ্গে একযোগে কাজ করেই কেবলমাত্র আমরা বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি৷ পৃথিবীর কাঁধ থেকে আর্থিক সংকটের বোঝা কিছুটা হলেও কমিয়ে দিতে পারি৷
ভবিষ্যতের পথনির্দেশিকা
প্রতিবেদনে কৃষিখাতে প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে৷ যাকে বলা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া৷ সবুজ পৃথিবী বলতে আমরা সত্যিকার অর্থেই সবুজ পৃথিবীকে দেখতে চাই৷ কৃত্রিম সার ও কীটনাশকের বদলে প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার দেখতে চাই৷
আসল কথা হল, প্রকৃতির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে৷ তা না করলে মানব সভ্যতারই ক্ষতি হবে৷ প্রায় ২৫০ পাতার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে, নিউ ইয়র্কে৷ ১৮টি ভাষায় প্রতিবেদনটি অনূদিত হয়েছে এবং ইন্টারনেটেও তা পাওয়া যাচ্ছে৷ আফ্রিকা মহাদেশকে বাহবা দেওয়া হয়েছে, কারণ কৃষিশিল্পে গোটা মহাদেশ একটি চমক দেখিয়েছে৷ প্রতিবেদন যারা তৈরি করেছেন, তারা প্রায় এক বছর ধরে আফ্রিকা মহাদেশে ঘুরেছেন৷ স্থানীয় স্তর থেকে শুরু করে আঞ্চলিক পর্যায়ে কৃষিশিল্প নিয়ে সবাই কাজ করেছে৷ যে কারণে অনেক সমস্যার সহজ সমাধান বেরিয়ে এসেছে৷ আর সবকিছুই করা সম্ভব হয়েছে সীমিত বাজেট সত্ত্বেও৷ আর এর পুরো বিপরীত ধর্মী চিত্র দেখা গেছে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে৷ এই দেশগুলোর কারণে বিশ্ব খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে৷
বিশেষ একটি বীজ বোনার কথা বলা হচ্ছে৷ যে বীজ একটানা কয়েক বছর ফসল দেবে৷ প্রতি বছর বুনতে হবে না৷ এমন কি প্রচণ্ড খরায়ও ফসলের কোন ক্ষতি হবে না৷ পানির সাশ্রয় হবে, সময়ের সাশ্রয় হবে৷ ভিডিওটি দেখান আফ্রিকার দেশ মালি'র একজন ট্রেনার৷ তিনি যে সংস্থায় কাজ করেন তার নাম ইকোভা মালি৷ তিনি এই ফসলের কথা বলছেন স্থানীয় কৃষকদের৷ একই সঙ্গে তাদের মতামত গ্রহণ করছেন, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনে পরামর্শও নিচ্ছেন৷ এভাবেই আফ্রিকা মহাদেশে একত্র হয়ে কাজ করছে কৃষকরা৷ অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের আদান প্রদান হচ্ছে বিশাল কোন ভবনে, মখমলের কার্পেটের ওপর, সোফায় বসে, স্পিকার বা মাইক্রোফোন সামনে নিয়ে নয় – প্রত্যন্ত গ্রামে, ঘাম ঝরা দিনের শেষে, ধুলোমাখা মাটিতে বসে৷ কারণ মাটির খুব কাছে থাকলেই মাটির ধ্বনি শোনা যায়৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন