প্রতারণার শিকার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র নাগরিকেরা
১১ জানুয়ারি ২০২০তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে জনতার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া' গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ গত কয়েক বছরে ভারতে মোবাইল সেবার খরচ কমায় অনুকূল পরিবেশও তৈরি হয়েছে৷ এর ফলে বিনোদনের যেমন নয়া মঞ্চ তৈরি হয়েছে, তেমনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেবাণিজ্যের সুযোগও বেড়েছে৷ বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট নানা পণ্যের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে৷ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করলেই ভার্চুয়াল বিপণিতে হাজির হচ্ছেন ক্রেতা৷ পছন্দের সামগ্রী কেনাকাটার পর অনলাইনেই কার্ড বা নেট ব্যাঙ্কিং ব্যবহার করে দাম মিটিয়ে দিচ্ছেন৷ বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে অর্ডার দেওয়া পণ্যটি৷
বিষয়টি খুব সহজ মনে হলেও এই ডিজিটাল লেনদেনের বিপদও আছে৷ অনলাইনে হাজার হাজার মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন৷ এ কথা স্বীকার করছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারই৷
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ এর আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত অনলাইন শপিং সংক্রান্ত প্রায় ১৪ হাজার প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে৷ লোকসভায় একটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রতারণা দিনে দিনে বাড়ছে৷ ২০১৬ এর আগস্ট থেকে ২০১৭ এর মার্চ পর্যন্ত ৯৭৭ জন প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন৷ সেই সংখ্যা এপ্রিল ২০১৭ থেকে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৪৪১টি৷ তা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বরে পাঁচ হাজার ৬২০টি প্রতারণার অভিযোগ হয়েছে৷
ডিজিটাল লেনদেনে টাকা খোয়ানো শুধু নয়, অনলাইন শপিং সংস্থাগুলি মানুষকে নানাভাবে ঠকাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে৷ অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকাফির সমীক্ষায় সেই তথ্য উঠে এসেছে৷ তাদের দাবি, প্রায় ৫৪ শতাংশ ভারতীয় প্রতারণার মুখে পড়েছেন৷ প্রতারণার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে উঠে এসেছে ছাড়ের প্রলোভন৷ চিরাচরিত কেনাকাটার বদলে জনতাকে অনলাইন শপিংয়ে আকৃষ্ট করার জন্য সংস্থাগুলির হাতিয়ার বিপুল ছাড়৷ পণ্যের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ডে ছাড়ের সুবিধা মেলায় অনেক ক্ষেত্রেই বাজারের থেকে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে কম দামে জিনিসপত্র মিলছে৷ তা সে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম হোক বা পোশাক, ঘর সাজানোর উপকরণ থেকে মুদিখানার জিনিসপত্র৷ ম্যাকাফির দাবি, শুধু এই ছাড়ের টানে ৫৬ শতাংশের বেশি ভারতীয় প্রতারণার শিকার হয়েছেন৷
কেনাকাটা ছাড়াও নানা ধরনের সেবার অফার ছড়িয়ে রয়েছে নেট দুনিয়ায়৷ অনেকেই সেই ফাঁদে পা দিয়ে টাকা দিয়ে ফেলেন৷ পরে বুঝতে পারেন, তাঁর টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ডাক দেওয়া হলেও সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে ১৯৮৬ সালের একটি আইনই ভরসা৷ তখন ভারতে মোবাইলই আসেনি৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সেই ক্রেতা সুরক্ষা আইনে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে৷ তাদের বক্তব্য, সব ধরনের পণ্য ও পরিষেবার মতো অনলাইনে কেনাবেচাও এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত৷ পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর ক্রেতাদের সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে৷ দেয়াল লিখন থেকে টিভি রেডিওতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত৷ তাও সচেতনতার অভাবে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন৷
শুধু যে সাধারন মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন, তা নয়৷ দেশের আইন প্রণেতাও এর থেকে রেহাই পাচ্ছেন না৷ পশ্চিমবঙ্গের মালদা উত্তর কেন্দ্রের সাসংদ, নরেন্দ্র মোদীর দলের নেতা খগেন মুর্মু অনলাইনে মোবাইল কিনতে গিয়ে ঠকেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে একটি মোবাইলের অর্ডার দেয়, বাড়িতে সুন্দর মোড়কে বাক্সটি আসে, কিন্তু খুলে দেখি ভেতরে ইঁট-পাথর৷'' সাসংদের প্রতারিত হওয়ার খবর ফলাও করে তুলে ধরেছিল সংবাদমাধ্যম৷ কেন্দ্রের শাসকদলের এই সাংসদ মনে করেন, ‘‘ডিজিটাল মাধ্যমকে অস্বীকার করা যাবে না৷ কিন্তু ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে আইন আরো কঠোর করা দরকার৷''