প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শত বছর
১৮ জানুয়ারি ২০১৪কয়েক সপ্তাহ ধরে মিডিয়াগুলি এ ব্যাপারে সরগরম হয়ে উঠছে৷ চলছে আলোচনা অনুষ্ঠান, প্রকল্প, প্রদর্শনী৷ দেখানো হচ্ছে আত্মরক্ষাকারী ট্রেঞ্চ, গ্যাসমাস্ক , ছবি, পোস্টকার্ড ইত্যাদি৷ খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে ১৯১৪ ও ২০১৪-এর মধ্যে সাদৃশ্য৷ সমান্তরাল যোগসূত্র৷ তবে পার্থক্য দেখানোর দায়িত্বটা কী আরো গুরুত্বপূর্ণ নয়?
সাদৃশ্য রয়েছে
বাস্তবিকই ১৯১৪ ও ২০১৪-এর মধ্যে বহু সাদৃশ্য দেখা যাবে৷
সেই সময়ও মানুষ দ্রুত পরিবর্তনশীল এক ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিল৷ নতুন যানবাহন (মোটর গাড়ি), নতুন মিডিয়া ( সিনেমা), নতুন যোগাযোগের মাধ্যম (টেলিফোন) মানুষের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেয়৷ আধুনিক জীবনযাত্রার ওপর আস্থা বেড়ে যায় মানুষের৷ খুলে যায় বিশ্বায়নের দ্বার, উন্মুক্ত হয় আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পথ৷ মানুষ নিজের চাহিদা মত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে ওঠে৷
তৎকালীন সার্বিয়ার জাতীয়তাবাদীদের মতো আজও বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে৷ যেমন ব্রিটেনে স্কটিশরা, স্পেনে কাটালানরা৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহিংসতা ছাড়া, যুক্তিতর্কের মাধ্যমে৷
অসংখ্য শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী সমর্থন করেন
১৯১৪ জার্মান সাম্রাজ্যের নাগরিক সমাজ এবং অসংখ্য শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী যুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন৷ ‘‘যুদ্ধ হলো পরিচ্ছন্নতা ও মুক্তি৷ আমরা মনে করেছিলাম এটা এক বিরাট আশা৷'' পরবর্তীতে নোবেল বিজয়ী লেখক টমাস মান যুদ্ধের শুরুতে এভাবেই লিখেছিলেন৷ আজ এই কথাগুলি অতি সাদাসিধা বলে মনে হয়৷ অবশ্য লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, বিকলাঙ্গদের আর্তনাদ এসব ভয়াবহতা তখনও প্রকট হয়ে দাঁড়ায়নি৷
আমরা যুদ্ধের ভয়াবহতা জানি বলেই হয়তো উপলব্ধি করতে পারি না, কেমন করে ইউরোপের দেশগুলি আলাপ আলোচনা ও সংলাপ ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধের দিকে পা বাড়িয়েছিল৷
সামরিক প্রভাব
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সামরিক প্রভাব ইউরোপীয় বিশেষ করে জার্মানির সমাজের গভীরে শেকড় গেড়ে ছিল৷ আজ ফেডারেল রিপাবলিক জার্মানিতে মানুষের চিন্তা চেতনা সম্পূর্ণ ভিন্নরকম৷ ২০১১ সালে বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিং বাতিল করার পর জার্মান সেনাবাহিনীতে নতুন সেনা নিয়োগ দেওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে৷
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কলকাঠি নাড়ার দায়িত্বে ছিলেন সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বয়স্ক পুরুষরা৷ আজ ইউরোপে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন৷ এতে রয়েছেন নানা বয়সের নারী পুরুষ৷ ১৯১৪ সালে মেয়েদের ভোট দেওয়ারই অধিকার ছিল না৷ আর সাত সন্তানের জননী জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী৷
ভিন্নতাও কম নয়
১৯১৪ ও ২০১৪-এর মধ্যে সাযুজ্য থাকলেও ভিন্নতাও কম নয়৷ এই ১০০ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ জার্মানি ও তার প্রতিবেশীরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছে৷ তারা গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ এক সময়ের শত্রু আজ মিত্রতে পরিণত হয়েছে৷ ঝগড়া বিবাদ হলেও বৈরিতা নেই তাদের মধ্যে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জাতিসংঘের মত প্রতিষ্ঠানগুলির আওতায় কাজ করে যাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলি৷ তাদের এই পথ যে সবসময় মসৃণ তা বলা যায় না৷ কিন্তু ১৯১৪ সালের চেয়ে অনেক ভালভাবে চলছে তাদের পথচলা, যখন ইইউ ও জাতিসংঘের মত প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্ব ছিল না৷
আর যুদ্ধ নয়৷ সম্প্রীতি, সমঝোতা ও আলাপ আলোচনাই দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে৷ এটাই হলো আজকের দিনের মূলমন্ত্র৷ আর এ জন্য ইউরোপকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে৷