1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধান উপদেষ্টার স্বস্তির আশা ও প্রশ্ন জাগানো এক সংলাপ

৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এ সংলাপ বাংলাদেশে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করার আশা জাগিয়েছে৷ তবে দুটি প্রশ্নও উঠেছে- এক, মাজার ভেঙে অনেকে ঘুরে বেড়ালেও চিন্ময় দাস কেন কারাবন্দি? দুই, আলোচিত এবং অত্যন্ত পরিচিত তিন সংগঠনের কেউ কেন আমন্ত্রণ পাননি?

https://p.dw.com/p/4nrGj
Bangladesch Dhaka | Treffen des Chefberaters der Interimsregierung mit einem religiösen Führer
ছবি: Press Wing of CAO

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের সংলাপে বিভিন্ন ধর্মের মোট ৩২ জন প্রতিনিধি অংশ নেন৷ তাদের মধ্যে ২৬ জন বক্তব্য দেন৷ কিন্তু সেখানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদ ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের কেউ আমন্ত্রণ পাননি৷

সংলাপে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেকসহ ১৬ জন বিশিষ্ট আলেম অংশ নেন৷ তাদের মধ্যে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের আমির সাজেদুর রহমানসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন৷ তারা হলেন- মুহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমদ আলী কাসেমী, জুনায়েদ আল হাবিব ও মুনির হোসাইন কাসেমী৷ আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর মহাসচিব মাহফুজুল হক, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, মিরপুরের আরজাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আবদুল কুদ্দুছ, লালবাগ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ছারছিনা দরবার শরিফের প্রতিনিধি ও দারুননাজাত মাদ্রাসার ওসমান গণি সালেহী, আহলে হাদিস অনুসারীদের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ বিন আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদপুরের কাদেরিয়ার তৈয়বিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন আল আজহারী, ফরিদগঞ্জ মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও ধানমন্ডি আত-তাকওয়া মসজিদের খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম৷

সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্য না থাকলে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করার যুক্তি নেই: ফরহাদ মজহার

অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সংলাপে অংশ নেন রমনার সেন্ট মেরিজ ক্যাথিড্রাল চার্চের প্রধান পুরোহিত আলবার্ট রোজারিও, পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্টুডেন্ট কাউন্সিলর রেভা ভেরোনিকা ডি কস্তা, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, রমনার হরিচাঁদ মন্দিরের ধর্মীয় সহসম্পাদক অবিনাশ মিত্র, গারো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি খামাল জনসন মৃ প্রমুখ৷

আর সরকারের দিক থেকে ছিলেন চার উপদেষ্টা আ ফ ম খালেদ হোসেন, আদিলুর রহমান খান, মাহফুজ আলম ও সুপ্রদীপ চাকমা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম । এছাড়া ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার৷

‘যারা মাজার ভেঙেছে তাদের গ্রেপ্তার করলেন না, চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করলেন’

ফরহাদ মজহার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা মূলত এখন আন্দোলন করছে সনাতন জাগরণ মঞ্চ, আর আছে হিন্দু মাহাজোট- তাদের কেউ ছিলেন না৷ এটা একটা দিক৷ যারা ধর্মীয় প্রতিনিধি, তাদের ডাকা হয়েছে৷ সে কারণে যারা রাজনৈতিক প্রতিনিধি, তাদের হয়তো ডাকা হয়নি৷ আমি যেহতেু একটি ধারার সমর্থক, সেই কারণে আমি ওখানে গিয়েছিলাম৷ আর এটা অল্প সময়ের মধ্যে করা হয়েছে৷ তাই এটা সরকারও বলে না যে, প্রতিনিধিত্বশীল হয়েছে৷ হয়ত তারা পরে আরো কথা বলবেন৷’’

আমরাই ওই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন: দীপঙ্কর ঘোষ

তার কথা, ‘‘সরকারকে তো কথা শুনতে হবে৷ সভা সমাবেশ-করতে দিতে হবে৷ সভা-সমাবেশ তো রাষ্ট্রদ্রোহ নয়৷ আপনাকে ভিন্নমত শুনতে হবে, ডিসঅ্যাগ্রি করতে দিতে হবে৷ চিন্ময়ের নেতৃত্বে যে সনাতনী জোট হয়েছে এটা তো রাজনৈতিক সংগঠন না৷ তারা যে আট দফা দাবি করেছে, তা তো শোনা যায়৷ তারা যেসব দাবি করেছে, তার মধ্যে তো কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আমি দেখি না৷ তারা তিন দিন ছুটি চেয়েছে, দুই দিন দিয়েছেন৷ আরেক দিন দিলে অসুবিধা কী? একটি কমিশন করে দেয়া যায়, তারা তাদের দাবিগুলো দেখতে পারে৷ তাদের সভা-সমাবেশ করতে দেবেন না,তা তো হয় না৷  মাজার ভেঙে দেয়া হচ্ছে, লালনের অনুষ্ঠান করতে দেয়া হচ্ছে না৷ যারা মাজার ভেঙেছে, তাদের আপনি গ্রেপ্তার করলেন না, চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করলেন৷ মাজার ভাঙার চেয়ে কি চিন্ময় বড় অপরাধ করেছে? সে যদি উসকানি দিয়ে থাকে, তা কি মাজার ভাঙার চেয়ে বড় অপরাধ?''

তিনি বলেন, ‘‘ভারতের কুৎসিত প্রোপাগান্ডা মোকাবেলা করার জন্য তাদের ডাকা হয়েছিল৷ তাদেরকেই তারা ডেকেছেন, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে এই প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবেন৷ তারাও সুন্দর কথা বলেছেন৷ তারা কাজ করবেন৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তবে সংখ্যালঘু নির্যাতন যে হয়নি, তা বলা যাবে না৷ সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে৷ গরিব মানুষের ওপর আঘাত এসেছে৷ তাদের জায়গা দখল হচ্ছে৷ আজকে আওয়ামী লীগ নাই, আওয়ামী লীগের কুকাণ্ডগুলো  ভিন্ন একটি দল করছে৷ এই তো কথা৷ ফলে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি- এটা তো আমি বলবো না৷’’

‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছি'

বৈঠকে অংশ নেয়া মিরপুরের আরজাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল বাহাউদ্দীন জাকারিয়া বলেন, ‘‘আমরা সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে, তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছি৷ সেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নৃগোষ্ঠীসহ সবার প্রতিনিধি ছিলেন৷ তারাও আমাদের সাথে একমত হয়েছেন৷ তারা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেননি, তবে আরো নিরাপত্তা চেয়েছেন৷’’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের কোনো প্রতিনিধি আমন্ত্রণ পাননি: গৌরাঙ্গ দাস প্রভু

তার মতে, ‘‘হিন্দুদের যেসব সংগঠন নিয়ে বিতর্ক আছে, তাদের হয়তবা সরকার ডাকেনি৷ তবে তাদের মন্দিরের পুরোহিতরা ছিলেন৷’’

‘হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে সবার অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই'

রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের পুরোহিত অবিনাশ মিত্র বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিভিন্ন ধর্মের গুরুরা উপস্থিত ছিলেন৷ বিভিন্ন রকমের কথা সবাই শুনেছেন৷ আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সবার কথা শুনেছেন৷ তিনি সে মোতাবেক এগোবেন বলে আমাদের বিশ্বাস৷ আমরা দেশে ভালো আছি, কারো মধ্যে কোনো বিভেদ নেই৷ তবুও বিভেদ কারা করছে? ওখানে বসে তাদেরই লোক প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে৷ এখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খিষ্ট্রান সবাই এক৷ কারো মধ্যে বিভেদ নেই৷ বাংলাদেশে সব জাতি সমানভাবে বাঁচতে চায়৷ আমাদের এক ভাইকে কে মেরেছে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে৷ কিন্তু এটাকে পুঁজি করে বাইরের রাষ্ট্র বড় কিছু তৈরি করবে- সেটা আমরা চাই না৷ হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে সবার অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই৷ কেউ অন্যায় করলে তাকে চিহ্নিত করে বিচার করা হোক৷’’

এ প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা সুনির্দিষ্টভাবে একজন উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তিনিই কারা আসবেন, তার তালিকা তৈরি করেছেন৷’’

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে, এখানে যারা ইমাম, ধর্মগুরু, পুরোহিত তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ কোনো সংগঠন নয়, প্রতিষ্ঠানের নেতাদের ডাকা হয়েছে৷’’

‘সরকার আমাদের বাদ দিয়ে সঠিক তথ্য পাবে বলে মনে করি না’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কোনো প্রতিনিধিদের ডাকা হয়নি৷ আমরাই ওই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন৷ এটা কোনো রাজনৈতিক দল নয়৷ জেলা, উপজেলা পর্যন্ত আমরা কাজ করি৷  আর আমরাই দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘুদের অধিকার, নির্যাতন নিয়ে কথা বলে আসছি৷ আমাদের কাছেই এই সংক্রান্ত সঠিক তথ্য আছে৷ সরকার আমাদের বাদ দিয়ে সঠিক তথ্য পাবে বলে মনে করি না৷’’

‘‘১৯  সেপ্টেম্বর আমরা একটা তালিকা প্রকাশ করেছি৷ এরপরের ঘটনাগুলোর তথ্যও আমরা সংগ্রহ করছি৷ ওই তালিকা আমরা সরকারকে দিয়েছি৷ সেটা সরকার তদন্ত করে দেখতে পারে৷ আমরা তো তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেছি৷ এখনো তো তার কোনো রেজাল্ট পাইনি৷ আর আমরা এই তালিকা যে এখন করেছি, তা নয়৷ প্রতিবছরই আমরা করি,’’ বলেন তিনি৷

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছি: বাহাউদ্দীন জাকারিয়া

‘যাদের ডাকা হয়েছে, তারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন না'

সনাতন জাগরণ মঞ্চের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাস প্রভু বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সনাতন জাগরণ মঞ্চের , হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের কোনো প্রতিনিধি আমন্ত্রণ পাননি৷ এটা আমাদের দিক থেকে প্রতিনিধিত্বশীল মনে হয়নি৷’’

‘‘যাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন না৷ তাদের কেউ চেনেন না৷ তারা কী তথ্য দেবেন? তারা কী প্রকৃত সত্য জানেন? রমনা মন্দিরের একজনকে সেখানে নেয়া হয়েছে, তাকে আমরা চিনি না৷ তিনি কী বলেছেন তা-ও আমরা জানি না,’’ বলেন তিনি৷

তার কথা, ‘‘প্রকৃত তথ্য জানতে হলে প্রতিনিধিত্বশীল বৈঠক হতে হবে৷’’

সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে, বুধবার রাজনৈতি দলগুলোর সঙ্গে এবং বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতা ও গুরুদের সঙ্গে বৈঠক করলো৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য