1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিয়োগের এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির

৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শনিবার শপথ নিয়েছেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন৷ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে৷ অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির৷

https://p.dw.com/p/2s6Ja
প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ
ছবি: bdnews24.com

গত বছর সংবিধানের ষোড়শ সংধোনী নিয়ে রায়ে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত এবং ব্যবস্থা গ্রহণে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা খর্ব হয়৷ আর তার জের আদালত থেকে রাজনীতিতে উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দেয়৷ এরপর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান৷ গত বছরের ১০ই নভেম্বর তিনি ক্যানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুর থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন৷

এস কে সিনহা পদত্যাগ করায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি৷ শুক্রবার দু'মাসেরও কম সময়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷ তবে তার পদত্যাগের আগেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নিয়োগ চূড়ান্ত করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি৷ বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার চাকরির মেয়াদ ছিল আরও ১০ মাস৷

‘সংবিধানের সুপ্রিমেসি, নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে বিচারপতিদের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে দেখিনি’

এখানে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনায় কোনো সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘জ্যেষ্ঠতা লংঘনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়৷ এর আগেও সাতবার ঘটেছে৷ তবে এতে সংবিধানের লঙ্ঘন হয়নি৷ প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির৷ সংবিধান অনুযায়ী তিনি আপিল বিভাগের যেকোন একজন বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন৷ সবচেয়ে সিনিয়রকে নিয়োগ দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷''

এই প্রসঙ্গে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি গোলাম রাব্বানীও একই কথা বলেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা এর আগেও অনেকবার ঘটায় এটা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে৷ আর এতে কোনো সমস্যা নেই৷ কারণ নিয়োগ তো দেন রাষ্ট্রপতি৷ এই নিয়োগের কথাতো আগে থেকেই চাউর ছিল৷''

‘সবচেয়ে সিনিয়রকে নিয়োগ দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই’

এদিকে, রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সকালে এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রীও জানান সংবিধানে নিয়োগ প্রসঙ্গে কি বলা হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আপনারা যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান দেখেন, তাহলে ৯৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা আছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন৷ সেখানে কোথাও লেখা নেই যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি নিয়োগ দেবেন৷ মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেই সিদ্ধান্তে আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি৷''

বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করিবেন৷'

‘এর আগেও অনেকবার ঘটায় এটা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনও বলেন এই নিয়োগে আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি৷ অবশ্য বিচার-বিভাগের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল৷ ক্ষমতা থাকলে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব হতে পারে৷ সেটা ভারতে হয়েছে , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে৷ ওটা আবার ইতিবাচক হিসেবেও দেখা যায়৷ তবে অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে সেটা খারাপ৷ নির্বাচনের বছরে বাংলাদেশে নানা রকম উদ্বেগ, হানাহানি আমরা দেখি৷ সেটারই বহিঃপ্রকাশ হয়ত এটা৷ প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতির মধ্যে কর্মকাণ্ড এবং কথাবার্তায় নানা রকম পাল্টাপাল্টি, দ্বন্দ্ব খেয়াল করেছি আমরা৷ বিচার বিভাগ নানা রকম ভালনারেবিলিটি নিয়ে চলছে৷''

সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না অবশ্য মনে করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ঘটনা মাঠে ময়দানে নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা'র পদত্যাগের ঘটনা সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে দেখছে না৷ মনে হচ্ছে বিচারবিভাগ একধরণের চাপের মধ্যে রয়েছে৷ বিভিন্ন ধরণের ঘটনা প্রবাহে এটা স্পষ্ট যে, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগ এক ধরণের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বা করে৷''

‘মনে হচ্ছে বিচারবিভাগ একধরণের চাপের মধ্যে রয়েছে’

অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানও বললেন, ‘‘বিচার বিভাগ বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখা, নাগরিক অধিকার রক্ষা, সাংবিধানিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে সব সময় সঠিক ভূমিকা পালন বা শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি৷ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে একজন প্রধান বিচারপতি চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হয়েছেন, সেটাও তো নজীরবিহীন ঘটনা৷ সংবিধানের সুপ্রিমেসি, নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে আমরা বিচারপতিদের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে দেখিনি৷''

প্রধান বিচারপতির কাছে অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রত্যাশা কী? ওই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই তাঁর নেতৃত্বে বিচার বিভাগ আরো স্বচ্ছ হবে৷ বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত হবে এবং উনি যেন দুর্নীতি শক্ত হাতে দমন করেন৷''

এ বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷