প্রধানমন্ত্রী, সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার হবে কেন?
৫ আগস্ট ২০২০প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাক্ষরিত এক বিবৃতির দোহাই দিয়ে মঙ্গলবার খবরটি জানিয়েছে আমাদের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
প্রেসসচিবের সই-সাবুদ যখন আছে, তখন ধরে নেওয়া যায়, প্রধানমন্ত্রী সিনহা হত্যার বিচার করবেন৷ কিন্তু এই সন্দেশ পড়ে খুশি হবো কি বেজার তাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না৷ সরকারপ্রধানকে যে নিজে ফোন করে মরহুমের আত্মীয় স্বজনকে বলতে হয় যে, তিনি দেখবেন যেন বিচার হয়, তাতে এই দেশে আলাদা বিচার বিভাগ বা আইনের শাসন, এমনকি ২০২০ সাল লাগে না৷ কেমন জানি মধ্যযুগের রাজতন্ত্র রাজতন্ত্র লাগে!
তারপরেও যদি ধরে নেই, মাননীয় বলেছেন বিচার করবেন, তাতে আমার খুশি হতে এত কষ্ট লাগছে কিসে? কেন খুশি হচ্ছি না? বলছি৷ ধরেন আমি দেশে ফিরে গেলাম৷ কোনো এক পুলিশ কর্মকর্তার অথবা র্যাবের একজনের অথবা কোনো এক নেতার অথবা অন্য যে কারোর চোখে তেরছা করে সূর্যের আলো পড়েছে বলে তার বা তাদের মেজাজ খারাপ হলো৷ অথবা মেজাজ খারাপেরই কী প্রয়োজন৷ হয়তো মেজাজ ভালো৷ ছোট করে চুল কেটে আমি সানগ্লাস পরেছি বলে তার মনে হলো আমাকে একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার৷ আমাকে থামানো হলো, নামানো হলো৷ এক কথায় দুই কথায় বুকে গুলি করে দেওয়া হলো৷ চুল ছোট হতে পারে, কিন্তু আমি তো আর্মিতে চাকরি কখনো করি নাই৷
প্রধানমন্ত্রী কি আমার পরিবারকে ফোন দেবেন? আর প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস না দিলে আমি তো মরেই গেছি, আমার পরিবার কি বিচার পাবে? উত্তর হলো না, পাবে না৷ কারণ, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস যে বিশেষ ঘটনা বা আলাদা তাৎপর্য বহন করে তা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ সাংবাদিক ইহসানুল করিমের বিবৃতিতে স্পষ্ট৷ আর এই কয়দিনে এটাও স্পষ্ট যে, যাকে তাকে যখন তখন যেখানে সেখানে মেরে ফেলার লাইসেন্স কারো না কারো রয়েছে৷ কখনোসখনো সেই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়, নতুন লোকে আবার লাইসেন্স পায়, এই যা!
প্রয়াত মেজর সিনহা আমার বছর দশকের ছোট৷ সুদর্শন, হাসি খুশি৷ মুক্তিযোদ্ধা, উপ সচিবের সন্তান৷ সামরিক গোরস্তানে দাফন করার সময় তার মা আবেগঘন এক বার্তা শুনিয়েছেন সবাইকে৷ আমরা, মানে এই যারা দেশ, সোশ্যাল মিডিয়ার ভদ্রলোক বা সুশীল, তাদের মনে হয়েছে একে আমার আপন ভাতিজা, ভাই বা খালাতো ভাইয়ের মতো লাগে৷ তাই আমাদের নিশ্চিত করে মনে হয়েছে, ইনি ইয়াবা ব্যবসা করতে পারেন না৷ পুলিশ মিথ্যা বলছে৷ তাই আমরা রুখে দিয়েছি৷ ফুঁসে উঠেছি৷ কারণ, সিনহা আমাদেরই মতো৷ কিন্তু আমি সহস্রবারের মতো আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, একটা লোক অপরাধী না হলে যেমন তাকে পুলিশ গুলি করতে পারে না, তেমনি একটা লোক অপরাধী হলেও পুলিশের কোনো অধিকার নাই তাকে গুলি করার৷ এবং আপনার আমার কারো অধিকার নাই তার বিচার করার৷ বিচারের দাবি তোলা যেতে পারে, কিন্তু ছেলেধরা সন্দেহে আমরা যে এক নারীকে, এক মাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলাম, তা যে ঠিক হয়নি তা বুঝতে পেরেছেন তো?
সবশেষে প্রধানমন্ত্রীকে বলি, আপনার সামনে দুটি অপশন৷ আপনি নির্দেশনা দেন যাতে একজন মানুষও বিনা বিচারে না মরে, অথবা যারা এমনে মারা যায়, তাদের সকলের আত্মীয় স্বজনরে ফোন করে বিচার করবেন, এই আশ্বাস দেন৷
আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেষ অনুরোধ (আপাতত), আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ইয়াবা-দেশি অস্ত্র-ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসী গল্পটি বদলাতে বলেন৷ আপনি না বললে এই গল্পটিও বদলাবে না, আকাশ আর বাতাসের সর্বত্র বিরাজমান লক্ষণসমূহ তাই জানায়৷
নিতান্ত বদলাতে না পারলে গল্পটির নাম দেওয়া যেতে পারে৷ যেমন ধরেন, গল্পের নাম ৩৪ নম্বর সত্যভাষণ, সংক্ষেপে ৩৪ নম্বর৷ পুলিশ বিবৃতিতে বলবে, খালেদ মুহিউদ্দীন মারা গেছে ৩৪ নম্বরে.. লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে..জব্দ করা মালামাল যথাসময়ে আদালতে জমা দেওয়া হবে৷