প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বিএনপি
২৯ ডিসেম্বর ২০২১এদিকে নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটি একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে তাদের আন্দোলন আরো জোরদার করবে। বুধবার ফেনীতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাফনের কাপড় পরে ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল সমাবেশ করেছে।
খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদনের ওপর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী কী মতামত দিয়েছেন তা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন,"দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই বলে আইনমন্ত্রী মতামত দিয়েছেন।” মতামত নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলার সময় সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন,"আমার মতামতের ফাইল প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাবে।'' আইনমন্ত্রী বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন,"খালেদা জিয়াকে ৪০১ ধারায় মুক্তি পেতে হলে আবারও জেলে গিয়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে।”
সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার চিকিৎসকেরা বলছেন তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য ও জার্মানি ছাড়া তার চিকিৎসা সম্ভব নয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন,"আইনমন্ত্রী আইনের যে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তা ভুল। ৪০১ সংশ্লিষ্ট অন্য ধারাগুলো পড়লেই তা বুঝা যায়। আইনের এই নির্বাহী আদেশেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো সম্ভব। এটা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে মুক্তির আবেদন করতে হবে আইনমন্ত্রীর এই কথাও ঠিক না। মুক্তির শর্ত উঠিয়ে দিলেই হয়। আর আইনমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন তার মতামত প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। প্রধানমন্ত্রী তো এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। আমরা প্রধানমন্ত্রী কী বলেন তা দেখার অপেক্ষায় আছি। তারপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। তিনি একটা কিছু তো বলবেন।”
তিনি আরো বলেন,"আইনমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের ওপর মতামত দিয়েছেন। আমরা আইনজীবীরাও তার সঙ্গে দেখা করে একটি আবেদন দিয়েছি এক মাস হলো। তিনি আমাদের বলেছিলেন বিষয়টি বিবেচনা বরবেন। কিন্তু সেব্যাপারে তিনি কোনো মতামত তিনি এখনো দেননি।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,"আইনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন আইনমন্ত্রী। যে আইনে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়েছে সেই আইনেই খালেদা জিয়াকে শর্তহীনভাবে মুক্তি দেয়া যায়। এটা সরকারে সিদ্ধান্তের ব্যাাপার । প্রতিহিংসার কারণে সেটা করা হচ্ছে না। শুধু বিএনপি না দেশের মানুষ মনে করে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে উচিত। সবাই এখন প্রধানমন্ত্রী কী সিদ্ধান্ত দেন তা দেখার অপেক্ষায় আছে।”
বিএনপি একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশের বাইরে চিকিৎসার দাবিতে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দেবে বলে তিনি জানান। ড. মোশাররফ জানান, বুধবার জেলা পর্যায়ের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে বিএনপির রাষ্ট্রপতির সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি বলেন,"আমরা সংলাপে যাব না। কারণ এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। এটা একটা নাটক। কারণ অতীতেও সংলাপ করে কোনো স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হয়নি। আমাদের কথা হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবেনা। তাই সেটা সবার আগে দরকার। তারাই নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।”
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়।২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন। তার পর থেকে মেয়াদ বাড়িয়ে তিনি কারাগারের বাইরে আছেন। তার মুক্তির শর্ত হলো তিনি দেশে বসে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন।