তাইতো দেখতে পাচ্ছি প্রশাসনের সহায়তায় প্রবাসীদের বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়দের দ্বারা প্রবাসীদের নানা হয়রানির শিকার হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷
প্রবাসীদের বাড়ি থেকে বাইরে বের না হতে নির্দেশ দিয়ে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা৷
এছাড়া আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তর থেকে নির্দেশ জারি করে ১ মার্চের পর দেশে যাওয়া প্রবাসীদের মধ্যে যারা পাসপোর্টের ঠিকানার বাইরে অন্য ঠিকানায় অবস্থান করছেন, তাঁদের শিগগিরই নিকটস্থ থানায় যোগাযোগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে৷
কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি একটি দারুণ উদ্যোগ! কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, নির্দেশনাটি জারি হয়েছে শুধুমাত্র প্রবাসীদের জন্য৷ এর মানে কি এই যে, ১ মার্চের পর শুধু প্রবাসীরাই দেশে গিয়েছেন? ব্যবসা বা চাকরি সূত্রে কিংবা ঘুরতে বিদেশ যাওয়াদের কেউ এই সময়ে দেশে ফেরেননি? তাহলে পুলিশের জারি করা এই নির্দেশ কি তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে না?
পুলিশের এই নির্দেশনা নিয়ে আরও কথা আছে৷ এতে পাসপোর্টের ঠিকানার বাইরে অন্য ঠিকানায় যারা অবস্থান করছেন, তাঁদের কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেকেই স্থায়ী ঠিকানায় বাস করেন না৷ আর বর্তমান ঠিকানাও নানা কারণে পরিবর্তন হতে পারে৷ ফলে করোনার বিস্তার শুরুর পর থেকেই যদি উদ্য়োগ নিয়ে বিমানবন্দরেই বিদেশফেরতরা দেশের কোথায় থাকবেন, তা জেনে নেয়া যেতো তাহলে বুদ্ধিমানের কাজ হতো৷ আসলে করোনা মোকাবিলা করতে সরকার এখন যতখানি তৎপরতা দেখাচ্ছে, আরও আগে থেকে তা শুরু করলে হয়ত তেমনটাই করা হতো৷ কিন্তু তা না করে সরকারের লোকজন তখন শুধু নাগরিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গেছেন৷ বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে৷
ফলে এখন যেহেতু ধীরে ধীরে সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নেয়ার খবর বেরিয়ে আসছে তাই তড়িঘড়ি করে পুলিশকে দিয়ে প্রবাসীদের জন্য এমন একটি কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়েছে৷
অথচ সরকার যদি প্রবাসীদের সম্মানের বিষয়টি মাথায় রাখতো তাহলে শুরুতেই সরাসরি থানায় যোগাযোগের নির্দেশ না দিয়ে প্রথমে কয়েকটি টেলিফোন নম্বর দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রবাসীদের সেসব নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করতে পারতো৷ যারা সেই অনুরোধ মানতেন না তাদের জন্য আজকের মতো এমন কড়া নির্দেশনা জারি করা যেত৷
সন্দেহ নেই, প্রবাসীদের প্রতি দেশের মানুষের এমন বিমাতাসুলভ আচরণের জন্য প্রবাসীরাও অনেকটা দায়ী৷ কারণ দেশে ফিরে তাঁদের কোয়ারান্টিনে থাকার কথা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না৷
অবশ্য সরকার, রাজনীতিবিদ ও দেশের মানুষের কাছে প্রবাসীরা যে সম্মানী ব্যক্তি নন, তাঁরা যে শুধু দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ‘টাকার মেশিন' তার প্রমাণ আগেও পাওয়া গেছে৷ বিমানে করে দেশে ফেরা অনেক প্রবাসী বিমানবন্দরেই এমন মনোভাবের প্রমাণ পেয়ে থাকেন৷
এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷