1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবৃদ্ধির পথে জার্মানি, সাধারণ মানুষের উপকার কতটা?

২০ জানুয়ারি ২০১১

শিল্পোন্নত দেশগুলি এখনো আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে নি৷ তারই মধ্যে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলেছে৷ কিন্তু তার সুফল কি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে?

https://p.dw.com/p/zzuv
জার্মানির বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিকছবি: DW/AP

২০১১র জন্য সুখবর

ভালো খবর শুনলে কে না খুশি হয়? কয়েক বছর ধরে বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও বেড়ে চলা বেকারত্বের হার সম্পর্কে শুনতে শুনতে জার্মানির মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল৷ কিন্তু ইউরোপের চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত জার্মান অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ ২০১০ সালে শিল্প ও বাণিজ্য জগত চমকপ্রদ সাফল্য দেখিয়েছে৷ ‘মেড ইন জার্মানি'র চাহিদা আবার বেড়ে গেছে৷ ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে, বেকারদের সংখ্যা কমছে৷ মোটকথা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আবার উৎসাহ দেখা যাচ্ছে৷ শুধু রপ্তানি বাণিজ্য নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও চাহিদা বেড়েছে৷ বড়দিনের সময় বিক্রি-বাটাও ভালোই হয়েছে৷ বুধবার অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রাইনার ব্রুডারলে এই সাফল্য সম্পর্কে বলেন, ‘‘২০১১ সালটাও ভালো এক বছর হবে বলে আমরা মনে করছি৷ আমরা ২.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছি৷ যখন অনেকেই ধীর গতিতে এগোনোর চেষ্টা করছে, তখন আমরা তর তর করে এগিয়ে চলেছি৷''

সরকার বেশ সতর্কতার সঙ্গে ২.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বললেও শিল্প-বাণিজ্য জগত ৩.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছে৷

Porsche und Volkswagen Logo
জার্মান গাড়ির কদর বিশ্বের সবদেশেছবি: AP

সংশয়ের কালো ছায়া

এত সুখবর সত্ত্বেও বিতর্ক কিন্তু কাটছে না৷ নিন্দুকেরা বলছেন, কাগজে-কলমে কর্মসংস্থান যতই বাড়ুক না কেন, যাদের চাকরি রয়েছে তাদের আয়ের হার প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না৷ তার উপর মুদ্রাস্ফীতি ও নানা রকমের সামাজিক বীমার মাশুলের হার বেড়ে চলার ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা আসলে বাড়ার বদলে কমে যাচ্ছে৷ অন্যদিকে সরকার হাতে-গোনা ধনী শিল্পপতিদের একের পর এক ছাড় দেওয়ার ফলে তাদের আয় ফুলে-ফেঁপে উঠছে৷ জার্মানির শ্রমিক সংগঠনগুলির কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রধান মিশায়েল সমার গত সপ্তাহেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘আমাকে যা চিন্তায় ফেলছে, সেটা হলো এই যে একদিকে কর্মসংস্থান বাড়ছে ও বেকারত্বের হার কমছে বটে, কিন্তু যারা কাজ পাচ্ছে, তাদের চাকরি মোটেই পাকা নয়৷ নতুনরা প্রায় সবাই এমন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, যার জন্য তারা সাধারণ চাকরিজীবীর তুলনায় কম অর্থ উপার্জন করছে৷ এমন পরিস্থিতি আমরা মেনে নিতে মোটেই প্রস্তুত নই৷''

সরকার সতর্ক

সরকারের অন্যতম শরিক উদারপন্থী দল নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে অবিলম্বে করের ভার কমানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছে৷ বড় শরীক খ্রীস্টীয় গণতন্ত্রী দল অবশ্য এমন কোনো ‘সস্তার চমক'এ বিশ্বাস করে না বলে জানিয়ে দিয়েছে৷ তাদের মতে, সরকারি ঋণের রেকর্ড মাত্রার বোঝা কমানোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যাতে অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে মজবুত হতে পারে৷ তাছাড়া বর্তমানে যে সাফল্য দেখা যাচ্ছে, তা পুরোপুরি স্বতঃস্ফূর্ত নয়৷ মন্দার মোকাবিলা করতে ও অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন তরান্বিত করতে সরকার বিশাল অঙ্কের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল৷ রাস্তা-ঘাট নির্মাণ বা সংস্কারের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নের বিশাল প্রকল্পগুলির কারণে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ আচমকা বেড়ে গেছে৷ সেই কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অর্থনীতি জগত যদি নিজের বলেই চাঙ্গা থাকতে পারে, তখনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যেতে পারে৷ তবে সাধারণ মানুষের জন্যও কিছু সুখবরের আশার আলো দেখাচ্ছে সরকার৷ এবছর তাদের বেতন ও মজুরির হার বেশ ভালো মাত্রায় বাড়বে বলে পূর্ববাণী করলেন অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রাইনার ব্রুডারলে৷ তিনি আরও বলেন, ‘‘চলতি বছরে বেকারদের সংখ্যা ৩০ লক্ষেরও নিচে নেমে যাবে, যার অর্থ বেকারত্বের হার থাকবে ৭ শতাংশেরও কম৷ গত ২০ বছরে এটাই বেকারত্বের সর্বনিম্ন হার৷

শুধু তাই নয়, মন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, যে ২০১১ সালে জার্মানিতে প্রায় ৪ কোটি ৮ লক্ষ মানুষের চাকরি থাকবে, যা এক সর্বকালীন রেকর্ড৷

এখানে মনে রাখতে হবে, জার্মানির মতো শিল্পোন্নত ও রপ্তানি-নির্ভর দেশের পক্ষে একেবারে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো নীতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়৷ এমন অনেক বিষয় জার্মান অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে থাকে, যার নিয়ন্ত্রণ জাতীয় সরকারের হাতে নেই৷ বাকি দেশগুলির অর্থনীতি কমজোর থাকলে জার্মানির রপ্তানির অর্ডার কমে যেতে পারে৷ এমনকি ব্রুডারলে বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির প্রায় ৫০ শতাংশই নির্ভর করছে চীন ও ভারতের গতি-প্রকৃতির উপর৷ ইউরো এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতিও জার্মানির উন্নয়নের সঙ্গে একই সূত্রে বাঁধা৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ