‘প্রশ্ন ফাঁসে প্রশ্নবিদ্ধ সাফল্য’
১৪ আগস্ট ২০১৪ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে কোনো পরীক্ষাতেই প্রশ্ন ফাঁস কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ আজ যেসব শিক্ষার্থী ভালো রেজাল্ট করল তাদেরও মন ভার কেন? কারণ অনেকেই তাদের টিপ্পনি কেটে বলবে, তোমরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল করেছ! কিন্তু আসলে সব শিক্ষার্থী তো ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়নি৷ তাহলে তাদের কেন এমন কথা শুনতে হবে?''
তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে, যা একটা জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করে দেবে৷ তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে তাতে ভবিষ্যত কিন্তু অন্ধকারের দিকেই যাচ্ছে৷ এ অবস্থা অব্যহত থাকলে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে৷ তারা মনে করবে, লেখাপড়া করে লাভ কী? পরীক্ষার আগেই তো প্রশ্ন পাওয়া যায়৷ তা দিয়ে পরীক্ষা দিলেই তো ভালো ফল মিলবে৷''
অবশ্য ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘এবার কিছু ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে৷ এর আগেও অনেকবার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, অনেক তদন্ত কমিটিও হয়েছে৷ কিন্তু সেসব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কখনও আলোর মুখ দেখেনি৷ এবার কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পর যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করেছে৷ মন্ত্রণালয় বলছে, এর বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ এটা আশাপ্রদ দিক৷ তবে শুধু মুখে বললে হবে না, প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ তাছাড়া পাশের হার যে বাড়ছে সেটা ইতিবাচক৷ কারণ খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে থাকে৷''
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ইংরেজি ও গণিত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি৷ তাঁরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের কপিও উদ্ধার করেছে৷ কিন্তু কী ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা বের করতে পারেনি আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি৷
এ বিষয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ ড. আখতারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটি দেখেছে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, যেটা মূল ফলে কোনো প্রভাব ফেলেনি৷ তারপরও এটা কোনো ভালো লক্ষণ না৷ প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে অবশ্যই সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে৷''
ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘‘এখন কিন্তু প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে সরকারকে বিব্রতকর করতে৷ কারণ প্রশ্ন ফাঁসের পরই সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে দিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ ফাঁসকারীরা এর ফলে সরকারকে, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সামাজিকভাবে হেয় করতে চায়৷ আর যে নম্বরের প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে তা মূল নম্বরের খুবই নগণ্য অংশ৷ তারপরও যে কোনো পরীক্ষারই প্রশ্ন ফাঁস করার বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে৷ কারণ শুধু পরীক্ষার ফল নয়, চাকরির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হচ্ছে৷ এতে করে প্রশাসনেও মেধাহীনরা ঢুকে যাচ্ছে, বাদ যাচ্ছে মেধাবীরা৷''
তিনি বলেন, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় মেয়েরা ভালো করেছে, জিপিএ-৫ বেড়েছে ও পাশের হার বেড়েছে – এই তিনটা দিক খুবই ইতিবাচক৷ এখন তো পরীক্ষায় নকল নেই, আছে প্রশ্ন ফাঁস৷ এটা রোধ করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে৷
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ভিকারুন নিসা নূর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার বলেন, ‘‘ভালো ফল পেয়ে ভালো লাগছে৷ কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি সামনে আসায় মনটা খারায় হয়ে যাচ্ছে৷ আমরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে দেখিয়ে দিতে চাই যে, আমরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করিনি, আসলেই আমরা মেধাবী৷''