ইউরোপের ইতিহাস
১৪ অক্টোবর ২০১৩সম্প্রতি ‘সায়েন্স' জার্নালে দু'টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, যার একটির বক্তব্য: ইউরোপে শিকারি-সংগ্রহকারী আর কৃষিজীবীদের সহাবস্থান চলেছিল আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে অবধি৷ অর্থাৎ আগে যা ভাবা গিয়েছিল, তার থেকে অনেক পর অবধি৷ এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রয়েছে জার্মানির মিটেল-এলবে-সালে অঞ্চলের ২৫টি স্থানে পাওয়া ৩৬৪ জন মানবের অস্থির ডিএনএ-র বিশ্লেষণ৷
দ্বিতীয় প্রবন্ধটির ভিত্তি হল জার্মানির ওয়েস্টফালিয়া অঞ্চলের ব্লাটারহোলে গুহায় পাওয়া ২৫ জন গুহামানবের অস্থি থেকে নেওয়া ডিএনএ৷ ‘‘শিকারি-সংগ্রহকারী কিংবা কৃষিজীবী, এদের কারোকেই আজকের মধ্য ইউরোপের বাসিন্দাদের একমাত্র পূর্বপুরুষ বলা চলে না,'' বলেছেন জার্মানির মাইনৎস শহরের ইওহানেস গুটেনব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক অ্যাডাম পাওয়েল৷
পদচিহ্ন
গবেষকরা বলছেন, শিকারি-সংগ্রহকারীরাই প্রথম ইউরোপের ভূখণ্ডে পা দেয় – আজ থেকে ৪৫ হাজার বছর আগে৷ তারা শেষ তুষার যুগ পার হয়ে, প্রায় দশ হাজার আগে পৃথিবীর উষ্ণায়ন শুরু হবার সময়, এমনকি তার পর পর্যন্ত হাজির ছিল – জানিয়েছেন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে এভোলিউশনারি জেনেটিক্সের অধ্যাপক মার্ক টমাস৷
ততোদিনে (অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছর আগে) ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব থেকে কৃষিজীবীরা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে৷ তখনই শিকারি-সংগ্রহকারীদের সঙ্গে তাদের সহাবস্থান, এমনকি সংমিশ্রণ৷ এই কৃষিজীবী মানুষরা চাষ-আবাদ, পশুপালন ইত্যাদি করত, মাটির পাত্র তৈরি করত৷ কিন্তু গোড়ায় যেমন ধারণা করা হতো যে, তাদের চাপে শিকারি-সংগ্রহকারীরা অন্তর্হিত হয়েছিল – তা কিন্তু বাস্তবে ঘটেনি৷ বরং এই দুই ধরনের মানুষ প্রায় দু'হাজার বছর ধরে বেশ ঘনিষ্ঠভাবেই বাস করেছে৷
বন্ধন
‘‘সেই ঘনিষ্ঠতার ফলশ্রুতিও ঘটেছে,'' জানালেন মাইনৎস-এর ইওহানেস গুটেনব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইওয়াখিম বুর্গার, যিনি প্রবন্ধটির মূল রচয়িতা৷ ‘‘শিকারি-সংগ্রহকারী গোষ্ঠীর মহিলারা কখনো-সখনো কৃষিজীবী সম্প্রদায়ে বিয়ে করতেন, যদিও শিকারি-সংগ্রহকারীদের মধ্যে কৃষিজীবী মহিলাদের কোনো জেনেটিক হদিশ পাওয়া যায়নি৷ কৃষিজীবী মহিলারা শিকারী-সংগ্রহকারী গোষ্ঠীতে বিয়ে করাটাকে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থার অবনতি বলে মনে করতেন৷''
শিকারি-সংগ্রহকারীদের কৃষ্টি প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়, ইউরোপ পুরোপুরি কৃষিজীবীদের হাতে চলে আসে৷ ইউরোপের ত্রিশ শতাংশ মানুষের ডিএনএ-তে আজও সেই আদিম যুগের কৃষিজীবীদের রেশ পাওয়া যায়৷
এসি / এসবি (এএফপি)