প্রাচ্যের গণমাধ্যমকে পাশ্চাত্যের তাত্ত্বিক ধারামুক্ত করতে সম্মেলন
৩ নভেম্বর ২০১১জার্মান গণমাধ্যম সমিতি এবং এরফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগ আয়োজন করে তিন দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন৷ শিরোনাম ছিল ‘আন্তর্জাতিক ও আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগের বিপশ্চিমীকরণ'৷ সেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছিলেন গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা৷ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যালিফোর্নিয়া স্যান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েল হ্যালিন এবং ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাকা শোম৷
তাঁরা যোগাযোগের বিভিন্ন তত্ত্বের উৎপত্তি, ধারা ও প্রয়োগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন৷ বিশেষ করে প্রাচ্যের গণমাধ্যম জগতে পশ্চিমে তৈরি এসব তত্ত্বের প্রতিফলন এবং যথার্থতা নিয়ে আলোচনা হয়৷ এছাড়া প্রাচ্যের গণমাধ্যমকে পশ্চিমের তত্ত্ব ও ধারার প্রভাব থেকে মুক্ত করতে কী করণীয় সে সম্পর্কেও নানা মতামত উঠে আসে এরফুর্ট সম্মেলনে৷ সম্মেলনে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অন্যান্যের মধ্যে এরফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাই হাফেজ, ক্যানাডার সিমন ফ্রেজার বিশ্ববিদ্যালয়ের আনিস রহমান, অস্ট্রিয়ার থমাস হার্ডিন, জাপানের ইগোর প্রুসা, ইউক্রেনের নাটালিয়া রিয়াবিন্সকা, ভিয়েতনামের ল্যান্ডন ক্যার্নি, জার্মানির অধ্যাপক হারমুট ভেসলার, ড. লিরিয়াম স্পনহোলজ এবং মিশরের হানান বদর৷
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আনিস রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সারা পৃথিবীতে যে প্রাধান্যশীল গণমাধ্যমের তত্ত্বগুলো রয়েছে তার অধিকাংশের উৎপত্তি পশ্চিমে৷ আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা কোন সমালোচনা ছাড়াই সেগুলো প্রাচ্যের ও বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গণমাধ্যমের ধারা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ব্যবহরা করছি৷ এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে এক্ষেত্রে সমালোচনার একটি মঞ্চ তৈরি করে দেওয়া৷ এছাড়া গণমাধ্যম ও উন্নয়ন, গণমাধ্যম ও প্রবাসী শ্রোতা-পাঠক-দর্শক সম্পর্ক, সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রের সীমানা ও সম্পর্ক এই বিষয়গুলিও সম্মেলনে গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে৷''
গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ের স্বনামধন্য দুই তাত্ত্বিক পিয়ের বোর্দিও এবং ইয়ুর্গেন হাবেরমাসের বিখ্যাত দু'টি তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন আনিস রহমান৷ ক্রমবর্ধমান টেলিভিশন শিল্পে এই দুই যোগাযোগ প্রবক্তার ‘ফিল্ড থিওরি' এবং ‘পাবলিক স্ফেয়ার' প্রয়োগের নানা দিক উঠে আসে তাঁর আলোচনায়৷ আনিস রহমান বলেন, ‘‘ইউরোপের বিখ্যাত যোগাযোগবিদ বোর্দিও-এর বিখ্যাত ‘ফিল্ড থিওরি' রয়েছে৷ এখানে তিনি গণমাধ্যম মাঠপর্যায়ে কীভাবে কাজ করে এবং গণমাধ্যমের প্রায়োগিক শ্রেণিবিন্যাস ও তাদের আন্তঃসম্পর্ক দেখিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া হাবেরমাসের বিখ্যাত তত্ত্ব রয়েছে ‘পাবলিক স্ফেয়ার' বা জন পরিসর নামে৷ এই তত্ত্ব দু'টি বাংলাদেশের টেলিভিশন শিল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি আমি৷ এ ব্যাপারে আমি মূলত তাত্ত্বিক রেখাপাত করেছি৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক