প্রাণের বিনিময়ে কিছু টাকা
১৫ অক্টোবর ২০১৫২০১৪ সালে বিশ্বের কোন দেশের মানুষ কেমন ধর্ম পালনের সুযোগ পেয়েছে, কোন দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন অধিকার ভোগ করেছে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার৷ ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও উপস্থিত ছিলেন প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে৷ প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘ইন্টারন্যশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ইন ২০১৪'৷ তাতে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের পরিস্থতিই উঠে এসেছে৷
বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মূলত তিনটি বিষয় বলা হয়েছে – এক, বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০১৪ সালে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার কাজে দক্ষতার পরিচয় দেয়নি৷ দুই, হামলার ঘটনা তদন্তে সরকারি প্রশাসনকে অনিচ্ছুক বলে মনে হয়েছে৷ এবং তিন, পুলিশ হামলা প্রতিরোধে অনেক ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা তো নেয়নি, হামলার পর অনেক জায়গায় তারা মামলাও নেয়নি৷
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত হিন্দুদের প্রায় ২৬ লক্ষ একর জমি অর্পিত সম্পত্তি আইনের আওতায় দখল হয়েছে৷ দশ লক্ষেরও বেশি মামলা হয়েছে৷ কিন্তু একটি মামলারও নিষ্পত্তি হয়নি৷
বাংলাদেশের কয়েকটি প্রথম সারির মানবাধিকার সংস্থার তথ্য ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি এই বার্ষিক প্রতিবেদনে কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে৷ ২০১৪ সালের মে মাসে ১২ বছর বয়সি এক হিন্দু মেয়েকে জোর করে মুসলমান বানানো হয়৷ মেয়েটির পরিবার থানায় গিয়েছিল অভিযোগ দায়ের করতে৷ কিন্তু পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়৷
অনেক সময় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণেও সংখ্যালঘু, বিশেষত হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলা-নির্যাতন হয় – এমন তথ্যও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে৷ দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ২০১৪ সালেরই আরেকটি ঘটনা৷ ৫ই জানুয়ারি একটি নির্বাচনি এলাকায় দুই হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়৷ ধর্ষণে জড়িত সন্দেহে দু'জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, নির্বাচনের কারণেই হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সংখ্যালঘুদের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে৷
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চিকইকাচদহ গ্রামের এই পরিবারটির ওপরও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের দিনেই হামলা হয়েছিল৷ একটি ভোটকেন্দ্রের কাছেই এক হিন্দু পাড়ায় তাদের বাড়ি৷ ভোট কেন্দ্রে শুরু হওয়া সংঘর্ষের রেশ অকারণেই এসে পড়ে হিন্দু পাড়ায়৷ অসুস্থ সত্যেন্দ্রনাথ বর্মন তখন নিজের বাড়িতে বসেছিলেন৷ লাঠিসোঁটা নিয়ে ছুটে আসা কিছু লোকের হামলায় তিনি আহত হন৷ হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান সত্যেন্দ্র৷
নিহত সত্যেন্দ্র নাথ বর্মনের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে জানা গেল, হামলার পর পুলিশ তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিল, মামলা করা হবে, হামলাকারীদের শাস্তিও দেয়া হবে৷ কিন্তু গত দেড় বছরেরও বেশি সময়ে কোনো মামলা হয়েছে কিনা, তা পরিবারটির জানা নেই৷
অডিও সাক্ষাৎকারটি শুনে অনুমান করুন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের তথ্যগুলো কতটা সঠিক, গাইবান্ধার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু হিন্দু পরিবার আসলে কেমন আছেন৷