প্রাণখুলে হাসতে চান ? মিউনিখে চলে যান
২৭ মে ২০১০মিউনিখের এই স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টফ এমেলমান৷ তিনি শেখান কীভাবে হাসতে হয়, আনন্দ পেতে হয় এবং সেই আনন্দ ছড়িয়ে দিতে হয়৷
২৫ থেকে ৬৫ বছরের প্রায় ২০ জন মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তারা পাগলের মত হাসছে৷ তাদের সবার দৃষ্টি একটি মানুষের ওপর নিবদ্ধ৷ তিনি ক্রিস্টফ এমেলমান৷ তিনি নিজেও হেসে কুটি-কুটি হচ্ছেন৷ তিনি হচ্ছেন মিউনিখের এই স্কুলের হাসির ‘গুরু'৷ তিনি জানান উচ্চস্বরে হাসি একটি মানুষের শরীরে প্রায় তিন'শ মাংসপেশিকে একসঙ্গে সঞ্চালিত করে৷ এমেলমান বললনে, ‘‘এটা আমার পেশা৷ হাসি এবং রসিকতা – এই দুটি বিষয়ের প্রতি আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি৷ বলা যেতে পারে, আমি জেলন্টোলজিস্ট৷ হাসির স্কুলগুলোতে যারা কাজ করছে তারা সবাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘হাসির গুরু'৷ আমরা কাজ করছি অসুস্থ মানুষের সঙ্গে, কারণ হাসি হচ্ছে একমাত্র অনুভূতি যা শরীর, মন এবং আত্মার মধ্যে একটি সামঞ্জস্য আনতে সক্ষম৷ এছাড়া হাসি হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের অন্যতম একটি ব্যায়াম৷ ''
হাসি নিয়ে গবেষণাকে জেলন্টোলজি বলে৷ শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘গেলোস' থেকে এসেছে৷ এমেলমানের স্কুলে প্রতিদিন এক ঘন্টার সাতটি করে সেশন থাকে৷ মূল লক্ষ্য হল প্রাণ খুলে হাসা, হাসতে শেখা৷ তিনি জানান, বাচ্চারা সারা দিনে প্রায় চার'শ বার হাসে৷ কিন্তু তারা যত বড় হতে থাকে এই সংখ্যা ততই কমতে থাকে৷ এক পর্যায়ে হাসতে তারা ভুলে যায়৷ যারা এই সেশনে অংশগ্রহণ করছে তাদের সবাইকে বলা হয় এক বোতল পানি সঙ্গে আনতে এবং ক্লাস চলাকালে জুতো খুলে ফেলতে৷ পুরো একঘণ্টা হাসার পর সত্যিই কিন্তু পানির পিপাসা পায়৷ চেষ্টা করে দেখবেন কি ?
যারা এই কোর্সে অংশগ্রহণ করছে তারা সবাই কোন এক ধরণের অসুখে ভুগছেন৷ কারো ঘুমের সমস্যা, কেউ কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, মানসিকভাবে কেউ কেউ বিপর্যস্ত৷ অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ, সুস্থ হওয়ার জন্য প্রাণখুলে হাসতে চাইছেন৷ বলা প্রয়োজন, এমেলমান নিজেও এক সময় ছিলেন হৃদরোগী৷ গুরুতর একটি অস্ত্রোপচারের পর তিনি এই হাসির থেরাপি গ্রহণ করছেন৷
তিনি জানান, হাসির মাধ্যমে শরীরের বেশ কিছু মাংসপেশির প্রয়োজনীয় ব্যায়াম হয়৷ যেমন কেউ যদি জোরে হাসে তাহলে পেটের ভিতর থেকে যে বাতাস বের হয়ে আসে তার গতি ঘণ্টায় একশো কিলোমিটার – এবং ফুসফুস তিন-চার গুণ বেশি বাতাস ভেতরে নিতে পারে৷ এর ফলে শারীরিকভাবে যে কেউই ভালো বোধ করতে পারে৷ তবে অনেকেই শুধু হাসতে আসে, কারণ অকারণে হাসি উপভোগ করার মত৷ বারবারা নিয়মিত এখানে হাসতে আসেন৷ তিনি জানান, ‘‘আমার নাম বারবারা৷ আমি এখানে হাসতে আসি, কারণ অন্য কোথাও এভাবে জোরে হাসা সম্ভব নয়৷ অনেকেই মনে করে, আমার মাথা খারাপ – এজন্যই আমি এত জোরে হাসি, এতক্ষণ ধরে হাসি৷ অনেকক্ষণ হাসলে আমার মন ভাল হয়ে যায়৷ হাসির কারণে অনেক প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হয়ে যায়৷ অন্য সময় যে সব ক্ষেত্রে আমি সরাসরি ‘না' বলতাম, এখন আমি সেসব ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ' বলি৷ এভাবে প্রাণখুলে হাসার কারণে আমার মনে হয় আমি সঠিক কাজ করছি৷ এখানে আসতে আমার ভাল লাগে, এখানকার মানুষদেরও আমি পছন্দ করি৷''
জার্মান সমাজে মানুষ কি তাহলে হাসে না ? হাসা কি নিষেধ ? এমেলমান জানালেন,
‘‘আমাদের সমাজে খুব কম মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে৷ অনেকেই একা থাকতে পছন্দ করেন৷ এজন্য আমরা এখানে খেলার মধ্যে দিয়ে সবাইকে হাসানোর চেষ্টা করি৷ নিজের আবেগ, উচ্ছ্বাস, আত্মবিশ্বাস – সব কিছুই প্রকাশ করার স্বাধীনতা সবার রয়েছে৷ নিজের ওপর আস্থা থাকলে, আত্মবিশ্বাস থাকলে, সৃজনশীল হওয়া সম্ভব৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদন: সঞ্জীব বর্মন