স্কুলগুলিতে পুরুষ শিক্ষকের অনটন
৩০ নভেম্বর ২০১৩ব্রেমেন শহরের প্রাথমিক স্কুলের একটি চিত্র: স্পোর্টস ক্লাসে প্রথম শ্রেণির বাচ্চারা হুটোপুটি করছে৷ তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন এক তরুণও৷ লম্বা সোনালি চুল তাঁর৷ নাম এরিক শ্যাফার৷ এই প্রাইমারি স্কুলটিতে সপ্তাহে একদিন স্বেচ্ছায় পড়াতে যান তিনি৷ ‘রেন্ট এ টিচারম্যান' বা ‘পুরুষ শিক্ষক ভাড়া করো' এই কর্মসূচির আওতায় কাজটি করছেন তিনি৷ ব্রেমেন ইউনিভার্সিটিতে প্রাথমিক স্কুলের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন৷ পাশাপাশি ‘রেন্ট এ টিচারম্যান' প্রকল্পে বিশেষ অভিজ্ঞতাও অর্জন করছেন৷ স্পোর্টস ক্লাসে এলেই বুঝতে পারেন যে, সঠিক বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করছেন তিনি৷ বাচ্চারা ‘শুভ সকাল মিস্টার শ্যাফার' বলে সম্ভাষণ করলে প্রসন্নও হয়ে ওঠে মনটা৷
পুরুষ শিক্ষকের সংখ্যা খুব কম
জার্মানির প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ১০ জনের একজনও পুরুষ নয়৷ বলেন, ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিজ্ঞানী ক্রিস্টফ ফান্টিনি৷ ‘‘৩০ বছর আগেও এই হারটা ছিল ৫০ শতাংশের মতো৷ আর এখন, ব্রেমেনের ৭৪টি প্রাথমিক স্কুলের ১৭টিতে একজনও পুরুষ শিক্ষক নেই৷''
‘রেন্ট এ টিচারম্যান' কর্মসূচির মাধ্যমে পুরুষদেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করতে চান ফান্টিনি৷ ২০১১ সাল থেকে চলছে এই কর্মসূচিটি৷ এখন পর্যন্ত ২০ জন পুরুষ শিক্ষক এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন৷
ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টফ ফান্টিনির ছাত্র ক্রিস্টিয়ান বুন্টে বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘‘বাচ্চাদের লেখাপড়ায় আগ্রহ জাগাতে হলে শিক্ষার কলা-কৌশলটাও মাথায় থাকতে হবে৷ কিন্তু অনেকে মনে করেন, প্রাইমারি স্কুলে বুঝি শুধু গান গাওয়া ও হাতের কাজ শেখানো হয়৷ আর এই ধরনের কাজকে তেমন পুরুষালি বলে মনে করা হয় না৷''
পুরুষ সহকর্মী পাওয়া কঠিন
প্রাথমিক স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা আনেট ম্যোলার তাঁর স্কুলে পুরুষ সহকর্মী পাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন৷ তবে সফল হননি৷ তাই এরিক শ্যাফারকে সপ্তাহে অন্তত একবার স্কুলটিতে আনতে পেরে তিনি খুশি৷ ম্যোলার বলেন, ‘‘এখানে পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক কিছু দেখা হয় না৷ যেমন পুরুষ শিক্ষকরা এটা মেনে নেন যে, ছেলেরা মারামারি করবে৷ কিন্তু নারী শিক্ষকরা সাথে সাথে হস্তক্ষেপ করেন৷''
এরিক শ্যাফারও স্পোর্টস ক্লাসে বাচ্চা ছেলেদের মধ্যে মারামারিটা প্রথমে নজরে রাখেন৷ কেবল কান্নাকাটি শুরু হওয়ার পরই মিটমাট করার চেষ্টা করেন৷
অসুস্থ, বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের দেখাশোনায় সাধারণত পুরুষদের দেখা যায় না জার্মানিতে৷ বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এই ধরনের পেশা থেকে ক্রমেই সরে আসছেন ছেলেরা৷ এর ফলাফল হয় মারাত্মক৷ কেননা জার্মানিতে প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ নার্সিং পেশায় কর্মীর প্রয়োজনও বাড়ছে জরুরি ভিত্তিতে৷ বলেন হিল্ডেসহাইম শহরের শিক্ষাবিজ্ঞানী মাইকে সোফিয়া বাডের৷ তাঁর মতে, ‘‘পুরুষরা এই পেশা থেকে সরে এলে বাচ্চারাও কোনো বৈচিত্র্য দেখতে পায় না, পায় না রোল মডেল৷ অন্যের পরিচর্যা করা বা চিন্তা-ভাবনা করাটা মেয়েদের বিষয়৷ এমনটি মনে করে তারা৷''
স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় চিত্রটা ভিন্ন
ইউরোপের অন্যান্য দেশের প্রাথমিক স্কুলগুলিতেও দেখা যায় প্রায় একই রকমের চিত্র৷ যেমন পোল্যান্ডে৷ তবে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলিতে অবস্থা খানিকটা ভিন্ন৷ সেখানে প্রাইমারি স্কুলগুলিতে নারী ও পুরুষ শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সমান সমান৷ বিষয়টি কিন্তু বেতনের ওপর নির্ভর করে না৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে জার্মান শিক্ষকরা বেশ ভালো বেতন পান৷ ‘‘আসল কথা শিক্ষকের পেশার একটা ভালো ‘ইমেজ' রয়েছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সমাজে'', বলেন এই শিক্ষাবিদ৷
এক্ষেত্রে ফান্টিনি একটা পরিবর্তন আনতে চান৷ তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের পেশা বেছে নিতে পুরুষদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চান না৷ চান তাঁরা যেন স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নেন৷ সমাজে স্বীকৃত হলে তাঁরা এ ব্যাপারে আকৃষ্টও হবেন৷ তাঁর ‘রেন্ট এ টিচারম্যান' প্রকল্পটি এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারে৷