বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের ইঙ্গিত দিলেন ম্যার্কেল
২৯ মার্চ ২০২১জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার যে মাত্রায় বেড়ে চলেছে, ইস্টারের ছুটির পর তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ অথচ করোনা মহামারির ‘তৃতীয় ঢেউ' সত্ত্বেও ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি কিছুতেই কড়া পদক্ষেপের প্রশ্নে ঐকমত্যে আসতে পারছে না৷ এমন প্রেক্ষাপটে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বিশেষ আইনের আশ্রয় নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মতি ছাড়াই দেশজুড়ে ব্যাপক কড়াকড়ির প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন৷ রবিবার রাতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন৷
এ পর্যন্ত ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনায় যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার কয়েকটি মোটেই কার্যকর করা হচ্ছে না৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাত দিনের গড় সংক্রমণের হার নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে কোনো অঞ্চলে যে সব কড়াকড়ি কার্যকর করার কথা, কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী নানা কারণ দেখিয়ে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন৷ রোববার সেই হার ছিল প্রায় ১২৫৷ কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করার পথে এগোচ্ছেন কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী৷ এমন ‘এমারজেন্সি ব্রেক' সক্রিয় না করার ফলে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ ম্যার্কেল বলেন, সামাজিক যোগাযোগ কমানো, কারফিউ ও হোম অফিস বাধ্যতামূলক করার মতো নিয়ম কার্যকর না করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে৷ যে সব শ্রমিক বা কর্মীদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে, তাদের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি আবেদনে কাজ না হলে ম্যার্কেল অন্য পথে যাবার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, দৈনিক সংক্রমণের হার এক লাখ ছোঁয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন না৷ প্রয়োজনে সংক্রমণ সুরক্ষা আইন কাজে লাগিয়ে ফেডারেল স্তরে একতরফা কড়া সিদ্ধান্ত প্রয়োগের পূর্বাভাষ দিয়েছেন ম্যার্কেল৷ তার মতে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ উল্লেখ্য, ইস্টারের পাঁচ দিন কড়া বিধিনিয়মের সিদ্ধান্ত নিয়েও চাপের মুখে ম্যার্কেল পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ সে জন্য তিনি দেশের মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন৷
এমন কড়া বার্তা শুধু ম্যার্কেল নয়, বাভেরিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডারের কণ্ঠেও শোনা যাচ্ছে৷ তার মতে, তার সতীর্থদের মধ্যে কয়েকজন এখনও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না৷ তিনিও কোনও ব্যতিক্রম ছাড়া ‘এমারজেন্সি ব্রেক' প্রয়োগের পক্ষে সওয়াল করেন৷ ম্যার্কেলের মতো তিনিও ইস্টারের ছুটির আগে এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনার কোনো প্রয়োজন দেখছেন না৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ই এপ্রিল পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার কথা৷
রবার্ট কখ ইনস্টিউট এবং ফেডারেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও করোনা সংক্রমণের চলমান হার সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্র ইয়েন্স স্পান বলেন, দশ থেকে চোদ্দ দিনের ‘আসল শাটডাউন'-এর প্রয়োজন রয়েছে৷ এই সময়কালে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ভ্রমণ একেবারে কমিয়ে আনতে পারলে সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব হবে৷ চ্যান্সেলর দফতরের প্রধান হেলগে ব্রাউন বলেন, জার্মানি করোনা মহামারির সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে৷ তার মতে, ‘তৃতীয় ঢেউ'-এর সময়ে আরও বিপজ্জনক মিউটেশন সৃষ্টি হতে পারে৷ সেগুলি মোকাবিলায় এমনকি টিকাও কার্যকর না হতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি)