পরিবেশ
১৭ আগস্ট ২০১২প্লাস্টিকের বোতল, খেলনা, যন্ত্র, খাবার ও পণ্যের মোড়ক, আরও কত কি....সমুদ্রে দিন দিন বাড়ছে এইসব বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ৷ দিন যত যাচ্ছে ততই যেন সমুদ্রের পানি দুষিত থেকে আরও দুষিত হচ্ছে৷ গবেষকদের হিসেব অনুযায়ী, সমুদ্রের প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকাতে ১০০ গ্রাম করে এই ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য ভাসছে৷ সেই মতে, গোটা বিশ্বের সমুদ্র এলাকাতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ এখন মোট ৪০ হাজার টনের ওপর৷ আর এইসব বর্জ্যের জন্য বিপন্ন হয়ে উঠছে সমুদ্রের জীববৈচিত্র৷ অনেক সামুদ্রিক প্রাণী এগুলোকে খাবার মনে করে খেতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছে৷
এই প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে আরও ভয়াবহ হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় এবং সূর্য্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে প্লাস্টিকের কণাগুলো ভেঙ্গে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে পড়ে৷ এমনকি একসময় সেগুলো আর খালি চোখে দেখা যায় না৷ এছাড়া এই ধরণের মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা যখন সমুদ্রের পানিতে মিশে যায়, সেগুলো সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর জন্য ক্ষতিকর৷ আর এত ক্ষুদ্র হওয়ার কারণেই এগুলোকে চিহ্নিত করা কঠিন, জানালেন জার্মানির আলফ্রেড ভেগেনার ইন্সটিটিউটের জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষক হাইন্স ডিটার ফ্রাঙ্কে৷ তাঁর কথায়, ‘‘এগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে কাপড়ের ক্ষুদ্র সিন্থেটিক তন্তু, ডিটারজেন্ট পাউডার ও কসমেটিক সহ নানা রাসায়নিক পণ্যের উপাদান৷ এছাড়া গাড়ির টায়ারের অংশ সহ এই ধরণের অনেক বর্জ্য বৃষ্টির পানির সঙ্গে নদীতে পড়ে, আর তারপর সমুদ্রে ভেসে চলে আসে৷''
যত বেশি এই ধরণের প্লাস্টিক সমুদ্রে ভেসে চলে আসবে পরিবেশের ক্ষতি তত বেশি হবে৷ কারণ সমুদ্রের পানিতে ভেসে চলা এইসব বর্জ্যের ভেঙে যাওয়া ক্ষুদ্র কণা সেখানকার মাছ ও জীবজন্তুর জন্য বিষের মতো কাজ করে, বললেন হাইন্স ডিটার ফ্রাঙ্কে৷ বললেন, ‘‘স্বাভাবিকভাবেই এগুলো নানা ধরণের প্রস্তুত পদার্থ, যা পানিতে অনেকদিন পার হয়ে গেলেও সহজে পচে না৷ আর এই ধরণের প্লাস্টিক পণ্য যত বেশি শক্ত, বিপদ তত বেশি৷ কারণ এই ধরণের পণ্যের উপাদান সমুদ্রে জীবের বিপাকপ্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷''
যদিও অনেক দিন ধরেই এই প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা হয়ে আসছে, তবে এটা নিয়ে গবেষণা খুব কমই হয়েছে৷ এই ধরণের সমস্যার কারণে কী ধরণের ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে সমুদ্রের জীববৈচিত্র, কোন এলাকাতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে - তার এখনও কূলকিনারা করতে পারেনি গবেষকরা৷ এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লা ইয়োলা ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী মার্টিন থিল বললেন, ‘‘আমাদের বুঝতে হবে যে এই প্রাণীবৈচিত্র বিশাল আকারের এবং তা ছড়িয়ে আছে সমুদ্র, মহাসমুদ্রে৷ এবং এই নিয়ে গবেষণা করাটাও অনেক কঠিন৷ আমরা এই জীববৈচিত্র সম্পর্কে খুবই কমই জানি, বিশেষ করে এখানকার জীবনযাপন সম্পর্কে৷''
তবে এই ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্যও কিন্তু এক ধরণের প্রাণীর জন্য উপকার বয়ে আনছে৷ সমুদ্রের পানিতে ক্ষুদ্র এই কীটের বৈজ্ঞানিক নাম হ্যালোবেটস সেরিসেউস৷ এক সেন্টিমিটার লম্বা ও শরু এই কীটের রয়েছে বিশাল বিশাল পা৷ পানিতে ভেসে চলা নানা প্লাস্টিকে এরা ডিম পাড়ে৷ প্লাস্টিক পানির চেয়ে হালকা হওয়ায় তা ডোবে না৷ তাই তাদের ডিমগুলোও থাকে অক্ষত৷ এই ব্যাপারে মার্টিন থিল জানালেন, ‘‘এগুলো পানিতে ভেসে চলা শৈবাল, কাঠের টুকরা কিংবা ছোট ছোট অক্টোপাসের খোলস হতে পারে৷ এছাড়া অনেক ক্ষুদ্র পাথরের কণা যেগুলো পানিতে ভাসতে পারে, সেগুলোতে এই কীট ডিম পাড়ে৷''
প্রকৃতির এই নিয়মটা বড়ই অদ্ভুত৷ একই জিনিস হয়ত কারো জীবন কেড়ে নেয়, আবার সেটাই কারো বাঁচার উপায় হয়ে ওঠে৷
প্রতিবেদন: ফাবিয়ান স্মিড্ট / আরআই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ