প্লাস্টিকের আবর্জনা কমাতে চাই সার্বিক সমাধানসূত্র
৬ জানুয়ারি ২০২১অনলাইন পদ্ধতিতে মিলওয়ার্ম নামের কীট কিনে দেখা যায় কীভাবে ছোট বিটল পোকায় রূপান্তরিত হয়৷ সেগুলিকে স্টাইরোপোর খাওয়ালে সেটাই ঘটে৷ স্ট্রাকচারাল বায়োলজি বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রফেসর জন ম্যাকগিহ্যান মনে করিয়ে দেন, ‘‘জীবগুলি কিন্তু নিজেরা ক্ষয় ঘটায় না৷ সেগুলির মধ্যে ব্যাকটিরিয়া সম্ভবত এনজাইম উৎপাদন করে সেই কাজ করে৷''
কাঠামোগত জীববিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে জন ম্যাকগিহ্যান এনজাইম সম্পর্কে কী না জানেন! তিনি বলেন, ‘‘প্রকৃতিতে, আবর্জনার স্তূপসহ সব রকম নোংরা জায়গায় আমরা ব্যাকটিরিয়ার খোঁজ করছি৷ সেই ব্যাকটিরিয়া প্লাস্টিক খেয়ে হজম করে নিচ্ছে৷''
প্লাস্টিক খায়, এমন জীবের সন্ধান করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ এমন জীবের এনজাইম আলাদা করে বায়ো-রিয়্যাক্টরে বড় আকারে উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ অবশ্যই গোটা বিশ্বের সমুদ্রের উপর এনজাইম ছড়ানো সম্ভব নয়৷ যে প্রাস্টিক বর্জ্য প্রকৃতি দূষণ করে চলেছে, সেটি দূর করতে এই প্রযুক্তি কাজে লাগবে না৷ কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের রিসাইক্লিং ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিপ্লব আনা যেতে পারে৷
কোনোকিছু ঠিকমতো পুনর্ব্যবহার করতে চাইলে সেটির মৌলিক উপাদান বিচ্ছিন্ন করতে হবে, যাতে সেই উপাদান দিয়ে আবার নতুন করে কিছু তৈরি করা যায়৷ কিন্তু আমরা এখনো প্লাস্টিকের সংযোগ ভাঙতে পারি না বলে বড়জোর এক বা দুইবার রিসাইক্লিং করতে পারি৷ তারপর সেটি পুরোপুরি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে৷
সে কারণে এই কীট ‘গেম চেঞ্জার', অর্থাৎ গোটা সমস্যার অভিনব সমাধানসূত্র হয়ে উঠতে পারে৷ প্রো. ম্যাকগিহ্যান বলেন, ‘‘বায়ো রিসাইক্সিং-এর মাধ্যমে প্লাস্টিক বিচ্ছিন্ন করে উপাদানগুলি অনন্তকাল ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানী ছাড়াই বার বার সেগুলি কাজে লাগানো যেতে পারে৷''
শুনতে কল্পবিজ্ঞান মনে হলেও ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে৷ যেমন ফ্রান্সের ‘কারবিয়োস' কোম্পানি এনজাইম ব্যবহার করে প্লাস্টিকের বোতল রিসাইক্লিং করছে৷ শুধু এক বা দুই বার নয়, অনন্তকাল ধরে সেই কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব৷ প্রো. ম্যাকগিহ্যান বলেন, ‘‘জঞ্জালের মূল্য বাড়াতে পারলে বাজারই উৎসাহ পেয়ে প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ করতে পারে৷ জঞ্জালের স্তূপে ফেলার জন্য ব্যয়ের বদলে কোম্পানিগুলি সেখান থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে আবার ব্যবহারের জন্য ব্যয় করতে পারে৷’’
এই প্রযুক্তি চালু হয়ে গেলেও এখনো বড় মাত্রায় সেটা করা সম্ভব নয়৷ তাছাড়া নতুন প্লাস্টিকের তুলনায় এই প্রক্রিয়ার ব্যয়ও বেশি৷ প্রফেসর ম্যাকগিহ্যান মনে করিয়ে দেন, ‘‘তেল ও গ্যাস সত্যি বড় সস্তা৷ পুনর্ব্যবহৃত উপাদানের তুলনায় পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস থেকে প্লাস্টিক তৈরির খরচ অনেক কম৷ সাফল্যের খাতিরে এই সব প্রযুক্তিকে আরও বড় আকারে প্রয়োগের উপযোগী করে তুলতে হবে৷ আমার মতে সেটা অবশ্যই সম্ভব৷ তবে আমাদের সেই লক্ষ্যে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে৷''
এই কীটগুলি কি সুপার-এনজাইমের সাহায্যে আমাদের প্লাস্টিকের সমস্যা দূর করতে পারবে? প্লাস্টিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুসান ফ্রাইনকেল বলেন, ‘‘মিল ওয়ার্মের মতো স্টাইরোফোম খাদক বা তেলের ক্ষয় ঘটানো ব্যাকটিরিয়ার সন্ধান পাওয়া সত্যি অসাধারণ৷ তবে প্লাস্টিকের সমস্যা আসলে ডিজাইনের সমস্যা৷ আমরা জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানী ব্যবহার করে আমরা এমন জিনিস তৈরি করি, যেগুলির আসলে কোনো প্রয়োজনই নেই৷ সেই সব বস্তু আমাদের আলস্যভরা সুবিধার স্বার্থে তৈরি করা হয়৷’’
প্লাস্টিকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আসলে অত্যন্ত পরস্পরবিরোধী৷ পোকামাকড় দূরে রাখতে আমরা প্লাস্টিক উদ্ভাবন করেছিলাম৷ এবার সেই প্লাস্টিক দূর করতে আবার কীটেরই সাহায্য নিতে হচ্ছে৷ সুসান মনে করিয়ে দেন, ‘‘আমরা প্লাস্টিক ছাড়া বাঁচতে চাই না৷ হালকা চশমা আমার পছন্দ৷ অথবা করোনা সংকটের সময়ে একবার ব্যবহারের যোগ্য অনেক বস্তুও খুব কার্যকর৷ মানুষ প্লাস্টিককে অত্যন্ত নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরছে৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে উপাদান নয়, কীভাবে সেটি উৎপাদন, ব্যবহার ও ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সেটাই আসল কথা৷’’
এ ক্ষেত্রেও কীট গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিচ্ছে৷ সেটি প্লাস্টিকসর্বস্ব জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে৷ আমাদেরও ঠিক সেই পথে এগোতে হবে৷ এবার কীট বাইরে বেরিয়ে সব প্লাস্টিক গিলে ফেলে পৃথিবী উদ্ধার করতে পারে৷
ক্রিস কাউরলা/এসবি