ফান গখ’এর ছবিতে রঙের বিকৃতি
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১নেদারল্যান্ড'এর ছোট্ট একটি গ্রামে টেওডর ফান গখ ও তাঁর স্ত্রী কর্নেলিয়ার ঘরে ১৮৫৩ সালের ৩০ মার্চ জন্মেছিল যে ছেলেটি, তারই নাম ভিনসেন্ট ফান গখ৷ মাত্র ৩৭ বছর বেঁচে ছিলেন এই চিত্রশিল্পী৷ নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এই শিল্পী এঁকে গেছেন ছবি৷ কখনো তেল রঙে আবার কখনো বা জলরঙে৷
আধুনিক চিত্র শিল্পের অন্যতম পথিকৃত তিনি – এই কথাটা প্রকাশ পায়নি তাঁর জীবদ্দশায়৷ নিয়মের বাঘবন্দি ছকে বেঁধে থাকার মতো শিল্পী তিনি ছিলেন না৷ জীবনের শেষ দিকে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন ফান গখ৷ হাসপাতালে বসেই এঁকেছিলেন প্রায় ২০০টি ছবি৷ আগে আরও ছবি তো আছেই৷ বেঁচে থাকতে তাঁর জন্য কেবল এসেছে দুঃখের সংবাদ৷ জীবনে একবারই কেবল পেয়েছিলেন একটি মাত্র সুসংবাদ৷ আর তাহলো তাঁর আঁকা একটি ছবি ব্রাসেলসের এক প্রদর্শনীতে বিক্রি হওয়ার কথা৷ মৃত্যুর মাত্র অল্প কিছুদিন আগের এই ঘটনা৷
বেঁচে থাকতে যে শিল্পীর ছবি বিক্রি হয়েছে মাত্র একটি, মৃত্যুর পরই সেগুলোর মান বিচার করে অসাধারণ হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছে৷ সেই ফান গখ'এর সংরক্ষিত ছবিগুলোর জন্য এবার এসেছে দুঃসংবাদ৷ কয়েকদিন আগে তাঁর ছবিগুলোয় বিশেষ এক এক্স রে করা হয়েছে৷ তাতে দেখা গেছে গখ'এর আঁকা ছবিগুলো তার ঔজ্জ্বল্য হারাচ্ছে৷ খুবই উজ্জ্বল রঙে ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন তিনি৷ বিশেষ করে তাঁর ছবিতে ছিল হলুদের প্রাধান্য৷
ছবি বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার ছবিতে ‘কেমিকেল রিঅ্যাকশন' হতে শুরু করেছে৷ আর এ জন্য কিন্তু তাঁরা দায় বর্তিয়েছেন সেই হলুদ রঙের ঘাড়েই৷ তারা বলছেন, এই বিকৃতির কারণে সেই হলুদ বর্ণ বদলে গিয়ে ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছে পিঙ্গল বর্ণের৷ বেশ কিছু ছবিতে এই রঙ হয়ে যাচ্ছে সবুজ৷ দারিদ্রতার কারণে ফান গখ'এর পক্ষে দামী রঙ কেনা সম্ভব ছিল না৷ সস্তায় হলুদ রঙই ব্যবহার করতেন তিনি৷
বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, রঙ বিকৃতি সমস্যাটির ব্যাপ্তি খুব বড়ো নয়৷ আবারো রঙ আর তুলি দিয়ে হালকা এবং খুবই সাবধানতার সঙ্গে আঁচড় বোলানো গেলে সমস্যাটি হয়তো মেরামত করা সম্ভব হবে৷ তবে তাতে নতুন করে বিকৃতি সৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে৷ আর কেই বা হাত দেবে ফান গখ'এর কাজের উপর! ফলে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে বিজ্ঞানীদের৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন