1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিরে আসা প্রবাসীদের জন্য দেশে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ কত দূর?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ জুলাই ২০২০

করোনায় ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের জন্য কোনো উদ্যোগই এখনো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। তাদের জন্য ৭০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সামনের সপ্তাহে।

https://p.dw.com/p/3f5RJ
Italien Corona-Pandemie | Flugverkehr nach Bangladesch unterbrochen
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/M. Scrobogna

শরিয়তপুরের গোসাইর হাটের জাহাঙ্গীর আলম।  সৌদি আরবে ১৮ বছর ধরে কাজ করতেন। করোনার কারণে গত মার্চে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু তার জমানো টাকা এরইমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। সৌদি আরবে নিয়োগ কর্তার সাথেও  যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু কবে ফিরে যেতে পারবেন, আদৌ ফিরে যেতে পারবেন কিনা তার কোনো আশ্বাস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন,‘‘ এরই মধ্যে এক লাখ টাকা ধার করেছি। ধার চাইতেও লজ্জা লাগে। সবাই মনে করে বিদেশে থেকেছি, আছে অনেক টাকা। ১২ সদস্যের পরিবার আমার। সামনে এখন অন্ধকার দেখছি। সরকার বা কোনো সংগঠনের সহায়তাও পাচ্ছি না”

শিউলি বেগমও একই সময়ে ফিরে আসেন। তার স্বামী নেই । এক সন্তান নিয়ে বাবার পরিবারে থাকেন।  সৌদি আরবে তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তার কথা ," ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখানে কোনো কাজ  পাচ্ছি না। টাকা ফুরিয়ে গেছে। বাবা-ভাইয়ের ওপর আছি। কি হবে ভবিষ্যত তা এখনো জানি না।”

এর বাইরে অনেক পরিবার আছে যাদের স্বজনেরা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দেশের বাইরে মারা গেছেন। কোভিডের কারণে লাশ দেশে আনা যায়নি। বিদেশেই দাফন করা হয়েছে।

ব্র্যাক প্রবাস থেকে ফিরে আসা কর্মীদের মধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। ৫৫৮ জন কর্মীর ওপর পরিচালিত জরিপে ৯১ শতাংশ বলেছেন তারা এখনো কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পাননি।  ৮৭ ভাগ বলেছেন তাদের অন্যকোনো আয়ের উৎস নাই। ৬০ ভাগ বলেছেন তারা যে জমানো টাকা নিয়ে এসেছেন তা আর নাই, খরচ হয়ে গেছে। ৭৪ শতাংশ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।   

কত প্রবাসী ফিরে এসেছেন:

ব্র্যাকের হিসেব অনুযায়ী  লকডাউনের আগে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের বাইরে থেকে সাড়ে চার লাখ বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। এরমধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ প্রবাসী শ্রমিক। তাদের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজার, আরব আমিরাত থেকে ৩৮ হাজার। মালয়েশিয়া থেকে ১৯ হাজার ফিরে এসেছেন।

ফ্লাইট চলাচল মার্চের শেষে বন্ধ হলে এপ্রিল, মে ,জুন ও জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ২৭ হাজার বাংলাদেশি ফিরে  এসেছেন ১৬টি দেশ থেকে।  তাদের মধ্যে আরব আমিরাত থেকে এসেছেন সাড়ে ছয় হাজার, যারা কাজ হারিয়েছেন। কুয়েত থেকে পাঁচ হাজার, যারা সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আসেন। সৌদি আরব থেকে এক হাজার ৩২৩ এবং মালদ্বীপ থেকে চার হাজার ২০০ ফিরে এসেছেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১ এপ্রিল থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ১৫টি দেশ থেকে ২৩ হাজার ২৬৯ জন প্রবাসীকর্মী ফেরত এসছেন। তাদের মধ্যে নারী ৭৮৩ জন।

কতজন মারা গেছেন:

প্রবাসী কর্মী এই করোনায় ঠিক কতজন মারা গেছেন তার সঠিক হিসাব  এখানো প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নেই। তবে ব্র্যাকের হিসেবে ২০টি দেশে এক হাজার ৪০০ প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছে। তার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে ৮০০ মারা গেছে। সৌদি আরবে মারা গেছেন ৫২৫ জন।  তবে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৯০০ লাশ এসেছে।

সরকার যা করছে:

লকডাউনের সময় প্রবাসী কর্মীরা যারা ফিরে এসেছেন তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট তিন কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। বিদেশে অবস্থানরতদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা বাবদ দূতাবাস গুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। আর যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার নিয়ম অনুযায়ী কল্যাণ ফান্ড থেকে তিন লাখ এবং লাশ দাফনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা পাবেন।

ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ২০০ কোটি টাকা  ঋণ এখনো বিতরণ শুরু হয়নি। শতকরা চার ভাগ হারে এই ঋণ দেয়ার কথা। এর বাইরে  আরো ৫০০ কোটি টাকা ঋণের নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এইসব ঋণের ব্যাপারে ১২ জুলাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করা হবে। যারা ফিরে এসেছেন তাদের এবং যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের কোনো সক্ষম সদস্য এই ঋণ পাবেন। এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হবে। তবে এই ঋণের টাকা প্রবাসী কর্মীদেরই কল্যাণ ফান্ডের টাকা। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের  মহাপরিচাল মো. হামিদুর রহমান জানান,‘‘ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মূলধনের ৯৫ ভাগই কল্যাণ ফান্ডের।”

তিনি জানান," এর বাইরে ১৭ হাজার কোটি টাকার আরেকটি ফান্ড গঠন করা হচ্ছে । এই ফান্ডের টাকা দিয়েও ফিরে আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসন করা হবে। এই ফান্ড থেকে কোনো উদ্যোগে সহায়তা করা হবে। এবং টাকা ফেরত নেয়া হবেনা। এজন্য দাতা সংস্থার সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে।” তবে এইসব আর্থিক সহায়তা পেতে হলে রেজিষ্টার্ড প্রবাসী শ্রমিক হতে হবে। যারা সরকারি নিয়ম নীতির বাইরে প্রবাসে গিয়েছে তারা পাবেন না।

ফিরে আসা প্রবাসীদের ঋণ দেয়ার জন্য ৩৮টি ট্রেড ঠিক করা হয়েছে। তাই জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো(বিএমইটি) এখন দুই ধরনের প্রশিক্ষণ চালু করতে যাচ্ছে। প্রথমত কোভিড-এর পর নতুন যারা বিদেশে কাজ করতে যাবেন।  দ্বিতীয়ত, যারা ফিরে এসেছেন তারা যদি আবার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পান তাদের যদি কোনো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয় তা দেয়া হবে। বিএমইটি এর মহাপরিচালক মো. শামছুল হক বলেন,‘‘এর বাইরে যারা ঋণ নিয়ে এদেশেই  আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টা করবেন তাদেরও আমরা  নানা কাজের প্রশিক্ষণ দেব।”

সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়:

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন,‘‘করোনায় প্রবাসী কর্মীদের ওপর অভিঘাত পরিস্কার হতে আরে সময় লাগবে। আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত ১০ লাখ প্রবাসী কর্মীতে ফেরত আসতে হতে পারে।''

আর এখন পর্যন্ত যারা ফেরত এসেছেন তাদের প্রকৃত সংখ্যা, তাদের প্রয়োজন, তাদের আর্থিক অবস্থা -এসব  নিয়েও কোনো ডাটাবেজ তৈরি হয়নি। যারা মারা গেছেন তাদের ব্যাপারেও সঠিক তথ্য নেই সরকারে কাছে। সরকার তাদের জন্য নানা উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বেসরকারি উদ্যোগও প্রয়োজন মনে করেন শরিফুল হাসান। তিনি জানান,‘‘ব্র্যাক  ফিরে আসা ১৬ হাজার প্রবাসীর তালিকা করেছে। তাদের জরুরি সহায়তা হিসেবে তিন কোটি টাকা  দেয়া হয়েছে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য