ফিরে দেখা ২০১১ - বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
৩১ ডিসেম্বর ২০১১বিদায়ী ২০১১ সালে বিজ্ঞান গবেষণায় মানুষ আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছে৷ বেশ কিছু আবিষ্কার মানবজাতিকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে৷ তার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে আবিষ্কারটি এখন গোটা বিশ্বকে শিহরিত করছে তা হলো নিউট্রিনো নিয়ে৷ সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় গবেষণাগার সার্ন' এ গত সেপ্টেম্বর মাসে এই বিষয়টি ধরা পড়ে৷ তাতে বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, নিউট্রিনো আলোর চেয়েও বেশি গতিতে ছুটে বেড়াচ্ছে৷ তাহলে কি আলোর চেয়েও এর গতিবেগ বেশি? এই প্রশ্নটি নিয়ে এখন পদার্থ বিজ্ঞানীরা মাথা ঘামিয়ে চলেছেন৷ তাহলে তো বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইন্সটাইনের এতদিনের আপেক্ষিক তত্ত্ব ভুল বলে প্রমাণিত হবে৷ এটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে আরও একটি বড় আবিষ্কার করে বসেছেন বিজ্ঞানীরা৷ সেটি হচ্ছে বহুল আলোচিত হিগস বোসন কণা৷ সার্ন এর বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন তারা এই কণাটিকে ক্ষণিকের জন্য নাকি দেখতে পেয়েছেন৷ যদি বিজ্ঞানীরা এটিকে সত্যিই ধরতে পারেন, তাহলে এই মহাবিশ্বের অনেক অজানা রহস্যই খুলে যাবে৷ এর কিছুদিন পর মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে সার্ন এর বিজ্ঞানীরা নতুন একটি কণা আবিষ্কার করেছেন যার নাম তারা দিয়েছেন চি-বি৷ ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত এই গবেষণাগার সার্ন নিজেই একটি বিস্ময়৷ সেই বিস্ময়কর গবেষণাগার এখন আরও নতুন নতুন বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে৷
এবার মহাকাশ অগ্রযাত্রার কথা বলতে হয়৷ আর বছরের সবচেয়ে আলোচিত মহাকাশ অভিযানটি ছিল মাত্র কয়েক দিন আগে৷ নভেম্বর মাসে ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভাল থেকে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো কিওরিসিটি৷ অ্যাটলাস ফাইভ নামের একটি রকেটে করে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো এই নতুন প্রজন্মের নভোযান৷ সাড়ে আট মাস ধরে মহাশুন্যে ভেসে ভেসে সে যাবে সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গলে৷ সেখানে দুই বছর ধরে অবস্থান করবে কিওরিসিটি৷
মহাকাশ গবষেণায় এই বছর বিশাল সাফল্য দেখিয়েছে চীন৷ অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণাতেও তারা পরাশক্তি হতে চায়৷ তাই নিজের উদ্যোগেই মহাকাশ স্টেশন তৈরির কাজ শুরু করেছে চীনারা৷ আর তার অংশ হিসেবে এবার তারা কয়েকমাসের ব্যবধানে পাঠিয়েছে দুইটি নভোযান৷ শেনজু ৮ এবং তিয়ানগং ১ এই দুটি নভোযানকে সাফল্যের সঙ্গে ডকিং করিয়ে মহাকাশ স্টেশন তৈরির প্রাথমিক কাজটি সম্পন্ন করেছে চীন৷ আর এই বিশাল সাফল্যের পুরোটাই চীন করেছে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে৷
ইন্টারনেটের জগতে নিত্য নতুন প্রযুক্তির দেখা মিলেছে এই বছরটিতে৷ তবে তার মধ্যেও গুগল আর ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল চোখে পড়ার মত৷ ফেসবুক চালু করেছে নিত্য নতুন সুযোগ সুবিধা৷ তার মধ্যে তাদের নতুন সহযোগী হয়েছে স্কাইপ৷ ফেসবুক এখন নতুন ভিডিও চ্যাটের সুযোগ চালু করেছে স্কাইপের সহায়তায়৷ একই সঙ্গে বেশ কিছু ফিচার তারা পরিবর্তন করেছে তাদের ওয়েবপেজে৷ অন্যদিকে ফেসবুকের আগ্রাসন ঠেকাতে সার্চ ইঞ্জিন গুগলও তাদের নতুন সামাজিক নেটওয়ার্ক চালু করেছে যার নাম তারা দিয়েছে গুগল প্লাস৷ তারাও সেখানে ভিডিও চ্যাটের সুযোগ দিয়েছে ব্যবহারকারীদের জন্য যার নাম হ্যাং আউট ফিচার৷ দুই কোম্পানির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চললেও মুখে অবশ্য কেউই তা স্বীকার করছে না৷
চলতি বছর জুড়ে বরাবরই আলোচনায় ছিল অ্যাপল এবং আইপড৷ এর পাশাপাশি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ফোনও বেশ সাড়া ফেলেছে৷ তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ হয়েছে নতুন স্মার্ট ফোন ম্যাঙ্গো৷ সফটওয়্যার জায়ান্ট কোম্পানি মাইক্রোসফট অ্যাপল এবং গুগলের সঙ্গে পাল্লা দিতে চলতি বছর তাদের নতুন স্মার্ট ফোন চালু করেছে এই নামে৷ তবে তাদেরকে পেছনে ফেলে বরাবরই অ্যাপলের আইপড ছিল সবচেয়ে বড় আকর্ষণ৷ তবে তার চেয়েও বেশি আলোচনায় ছিলেন আইগড খ্যাত স্টিভ জবস৷ কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ অক্টোবর চিরবিদায় নেন স্টিভ জবস৷ স্বপ্নচারী এই মানুষটির বিদায় গোটা প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য ছিল বড় একটি ধাক্কা৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: জাহিদুল হক