ফিলিপাইন্সে দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ
২৬ ডিসেম্বর ২০১৮নাগরিক প্রতিরোধ
আটিমোনান এলাকার প্যারিশের মানুষ এক পরিকল্পিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাইটের দিকে চলেছেন৷ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে কি? সাইটে কী চলছে, তার হুবহু বিবরণ নথিভূক্ত করেন তাঁরা৷
স্থানীয় পাদ্রি নোয়েল ভিলারেয়াল বলেন, চারিদিকে গাছ কাটা হচ্ছে৷ কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সমুদ্র দূষিত হবে বলে তাঁর আশঙ্কা৷ তাঁর মতে, ‘‘বিশ্বজুড়ে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি ত্যাগ করার যে অভিযান চলছে, আমরা তাতে যোগ দিচ্ছি৷ আন্তর্জাতিক এই আন্দোলনে আমরা শামিল হচ্ছি৷ শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, বৃহত্তর পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করছি৷ আমাদের এখানকার মানুষের সুরক্ষার পাশাপাশি পৃথিবীর সুরক্ষার বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ হচ্ছি৷'' কয়লাবিদ্যুৎসৌরশক্তির নানাবিধ প্রয়োগের দৃষ্টান্তবেড়ে চলা বিদ্যুতের চাহিদা
ফিলিপাইন্সের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ প্রায় ১০ কোটি মানুষ উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সংযোগ চাইছেন৷ বিশেষ করে রাজধানী ম্যানিলায় এই চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ তবে বর্তমানে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, তা একইসঙ্গে দূষণের উৎস ও ব্যয়বহুল৷ ব্যাংক অফ ফিলিপাইন আইল্যান্ডস-এর জো অ্যান বি এয়ালা ঠিক এ ক্ষেত্রেই ব্যবসার ভালো সম্ভাবনা দেখছেন৷ তিনি পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের জন্য ঋণ দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব ব্যবসাকে সোনায় পরিণত করুন৷ শুধু আনন্দের জন্য, ভালো কাজ করে খুশি হবার জন্য সবুজ প্রযুক্তির পথে যাবেন না৷ তা থেকে ভালো করে মুনাফা করুন৷ ফিলিপাইন্সে বিদ্যুতের প্রায় দুই তৃতীয়াংশের উৎসই জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি৷ এ দেশের ব্যাংক হিসেবে আমাদের ছোট্ট জগতে আমরা আরো দূষণমুক্ত জ্বালানির দিকে এগোনোর ক্ষেত্রে সহায়তার আশা করি৷ আমরা উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে সেই প্রকল্পকে লাভজনক ও প্রযুক্তিগতভাবে কার্যকর করার চেষ্টা করি৷''
তাঁর আর্থিক সহায়তায় চালিত অন্যতম প্রকল্প হলো এই সবুজ টিলা৷ এক বছর আগেওজায়গাটি ছিল দুর্গন্ধের ভরা আবর্জনার পাহাড়৷ম্যানিলার সবচেয়ে বড় জঞ্জালের স্তূপ ছিল সেটি৷ এখন সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়৷ মাটি দিয়ে সব জঞ্জাল ঢাকা হয়েছে৷ প্লান্টের উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ লক্ষ ইউরো ঋণ নিয়েছেন৷ সিলভার নাভারো ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এই প্রকল্পের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছিলেন৷ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সিলভার নাভারো বলেন, ‘‘মাটির নীচে চাপা আবর্জনা মিথেন ও অন্যান্য গ্যাস উৎপাদন করে৷ পাম্পের মাধ্যমে মাটির গভীর স্তর থেকে তা উত্তোলন করা হয়৷ আমাদের কাছে এমন ১০০টিরও বেশি পাম্প রয়েছে৷''
দরিদ্র মানুষের সমস্যা
পরিবেশের জন্য কল্যাণকর হলেও এই প্রকল্প সংলগ্ন বস্তি এলাকার মানুষের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কারণ, তাঁরা এতকাল আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন৷ এখন সেই আয় বন্ধ হয়ে গেছে৷
আজ শিশুরা জঞ্জালের গাড়ি থেকে সরাসরি যা পারে সংগ্রহ করার চেষ্টা করে৷ চালক কয়েক মিনিটের জন্য ট্রাক থামান, যাতে শিশুরা লাফিয়ে নেমে যেতে পারে৷ ১৩ বছর বয়সি ব্রায়ানও তাদের মধ্যে অন্যতম৷ ৩ বছর ধরে সে আবর্জনা ঘাঁটছে৷ মা ও ৫ ভাইবোনের সংসারে সে থাকে৷ সে কিছুটা লেখাপড়া শিখে গর্ব অনুভব করে৷ ব্রায়ান বলে, সে সপ্তাহের প্রতিটি দিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করে এবং প্রায় ২০০ পেসো আয় করে, যা মাত্র ৩ ইউরোর সামান্য বেশি৷ বড় হলে সে জঞ্জালের ট্রাকে কাজ করতে চায়৷
বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহার
আটিমোনান এলাকার মানুষের আশা, কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ পর্যন্ত বন্ধ করা সম্ভব হবে৷ নির্মাণকাজের শেষ অনুমতি এখনো বাকি রয়েছে৷ তাঁরা দূষণহীন বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নিজস্ব অবদান রাখতে চান৷ নোয়েল ভিলারেয়াল বলেন, ‘‘আমরা দুই সেট সৌর প্যানেল বসিয়েছি৷ একটি যাজকের দপ্তর, অন্যটি গির্জার উপর৷ গির্জার জন্য সস্তায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আমাদের উদ্দেশ্য৷ একই সঙ্গে এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে দেখাতে পারি যে, আমরা পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে পারি৷ একবার এটা করে দেখাতে পারলে ধীরে ধীরে দূষণযুক্ত জ্বালানি ছেড়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির পথে আমরা এগোতে পারি৷''
আগামী বছর থেকে তাঁরা সৌর প্যানেল দিয়ে গোটা ছাদ ঢেকে দিতে চান৷ ছোট এই প্যারিশ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনা বাড়াতে এর মধ্যেই বেশ কিছু ভালো কাজ করেছে৷
ইওয়ানা গটশাল্ক/এসবি