পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ফিলিস্তিন
৩০ নভেম্বর ২০১২ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তাঁর ভাষণে সাধারণ সম্মেলনের প্রতি ‘‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বাস্তবতার জন্ম সনদ’’ জারি করতে বলেন৷ ১৯৩টি দেশের সাধারণ সম্মেলনে ১৩৮টি দেশ সেই ডাকে সাড়া দেয়৷ ন’টি দেশ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে৷ ৪১টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা এবং চেক প্রজাতন্ত্র ছাড়া বাকি যে পাঁচটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে সেগুলি হল: মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ এবং পানামা৷ যে ৪১টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সেগুলির মধ্যে বিশেষভাবে নাম করতে হয় যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের৷
অর্থাৎ ফিলস্তিনকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতির বিভাজনরেখাগুলি এই একটি ভোটে পরিষ্কার হয়ে গেছে, এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক মেলবন্ধন৷ চমক বলতে যদি কিছু থাকে, তবে তা হল ইউরোপীয় এবং পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে এতো বেশি সংখ্যক দেশের প্রস্তাবের সপক্ষে ভোট দেওয়া৷
বলতে কি, যে সব দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, তারাই এখন তাদের নীতি ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন সাধারণ সম্মেলনের ভোটকে ‘‘দুর্ভাগ্যজনক এবং হিতে-বিপরীত’’ বলে অভিহিত করলেও, জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজান রাইস অবিলম্বে শান্তি আলাপ-আলোচনা চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ব্রিটেন এ’ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব প্রয়োগ করবে, বলে আশা প্রকাশ করেছে৷
জার্মান সরকারও ফিলিস্তিনের মর্যাদাবৃদ্ধিকে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ আলাপ-আলোচনার ‘‘আউফট্রাগ’’ বা কর্তব্যনির্দেশ বলে মনে করেন৷ ‘‘এই ভোটকে যথাশীঘ্র শান্তি আলাপ-আলোচনা শুরু করার অবকাশ বলে মনে করা উচিত,’’ বলেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে এই ভোটের ব্যাপারে কোনো যৌথ অবস্থানে আসতে পারেনি, ভেস্টারভেলে সে’বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন৷ অপরদিকে তিনি যোগ করেন যে, ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির দায়িত্ব, এবং আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি অস্তিত্বসক্ষম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য জার্মানির উদ্যোগের কোনো কমতি ঘটবে না৷
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রস্তাবকে ‘‘অর্থহীন’’ এবং ‘‘হাস্যকর’’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ কিন্তু স্বদেশে এ’নিয়ে ব্লেম-গেম শুরু হয়েছে: বিরোধীপক্ষ বলছে, সরকারের গড়িমসিই এই ‘‘সংকটের’’ জন্য দায়ি৷ অপরদিকে হামাস প্রধান খালেদ মেশাল বলেছেন, জাতিসংঘে মাহমুদ আব্বাসের পদক্ষেপ এবং গাজা স্ট্রিপে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাত, এ’দুটিকে একত্রে একটি একক, দুঃসাহসী স্ট্র্যাটেজি হিসেবে দেখা উচিত৷ ইরান জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের মর্যাদাবৃদ্ধিকে একটি ‘‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’’ হিসেবে অভিহিত করেছে৷ ভ্যাটিকানও একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পরোক্ষ স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং জেরুসালেমের বিশেষ পরিস্থিতির জন্য আন্তর্জাতিক গ্যারান্টির আহ্বান জানিয়েছে, যা ইসরায়েলে ঊষ্মা সৃষ্টি করতে বাধ্য৷
এসি/এসবি (রয়টার্স, ডিপিএ, এএফপি)