ফুটবল স্টেডিয়ামের মাঠে শুধুই জঙ্গল!
২৪ অক্টোবর ২০১৯অস্ট্রিয়ার ক্লাগেনফুয়র্টের এক ফুটবল স্টেডিয়ামে পেনাল্টি শুটআউটের আশা করলে অবাক হতে হবে৷ ১৪ মিটার উঁচু এক জঙ্গল স্ট্রাইকারের গতিপথ ঢেকে দিয়েছে৷ গত শতাব্দীর সত্তরের দশকেই সুইজারল্যান্ডের শিল্পী ক্লাউস লিটমানের মনে এই আইডিয়া এসেছিল৷
অস্ট্রিয়ার শিল্পী মাক্স পাইন্টনারের ‘প্রকৃতির অটুট আকর্ষণ' নামের চিত্রের ভিত্তিতে তিনি এই প্রকল্প শুরু করেন৷ ক্লাউস লিটমান বলেন, ‘‘আমি এখানে আসলে অত্যন্ত ব়্যাডিকাল এক চিত্র তুলে ধরছি৷ মাক্স পাইন্টনারের মতো আমিও এখানে সৃষ্টির কাজ করছি৷ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নভাবে হলোও আমাদের এক মৌলিক বিষয় রয়েছে৷ প্রকৃতির প্রতি আমি বা আমরা কী আচরণ করছি, সেই উপলব্ধির সন্ধান করছি৷''
দর্শকরা সেই জঙ্গল শুধু দেখতে পারেন৷ ছুঁয়ে দেখা বা তার মধ্যে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ৷ ক্লাউস লিটমান জলবায়ু পরিবর্তনের স্মারক হিসেবে জঙ্গল সংক্রান্ত এক শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন৷ এই প্রকল্পের রূপায়ণ করতে ৬ বছর সময় লেগেছে৷
‘ফর ফরেস্ট' নামের এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজে সুইজারল্যান্ডের ল্যান্ডস্কেপ স্থপতি এনসো এনেয়া তাঁকে সাহায্য করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রয়েছে৷ এগুলি মনে হয় পিনুস নিগ্রা৷ ১৬টি এমন গাছ লাগানো হয়েছে৷''
দুই গোলপোস্টের মাঝে এনসো এনেয়া ২৯৯টি গাছ লাগিয়েছেন৷ ইউরোপের জঙ্গলগুলিতে নানা ধরনের গাছের এমন মিশ্রণ বিরল হয়ে উঠেছে৷ তিনি জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালির নার্সারি থেকে গাছগুলি সংগ্রহ করেন৷ তার মধ্যে কয়েকটি প্রায় ৪০ বছর পুরানো৷
সবকটি গাছই বেশ কয়েকবার নানা জায়গায় লাগানো হয়েছিল৷ সেগুলির শিকড় একত্র করে গিঁট বেঁধে জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে বসিয়ে দেওয়া হয়৷ এভাবে শিকড় না ছড়িয়ে ও ক্ষতি এড়িয়ে গাছ বেঁচে থাকতে পারে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এনসো এনেয়া বলেন, ‘‘স্টেডিয়ামের কাঠামোর সঙ্গে সঠিক অনুপাত নির্ণয় করা আমার জন্য খুব কঠিন কাজ ছিল৷ কারণ শুরুতে আমি সামগ্রিক চিত্রটি কল্পনা করতে পারি নি৷ তারপর আমি ফুটবল খেলোয়াড়দের কথা ভাবলাম, যাদের গড় উচ্চতা ১ মিটার ৮০ সেন্টিমিটার৷ তাঁরা কীভাবে লং শট, হাই শট মারেন, সে কথা ভাবলাম৷''
এই স্টেডিয়ামে ৩০,০০০ দর্শক বসতে পারেন৷ ফলে অসংখ্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মাঠের উপর জঙ্গল পর্যবেক্ষণ করা যায়৷ দর্শকেরা আসনে বসে থাকতে পারেন অথবা গাছের সারির মাঝে হাঁটতে পারেন৷
চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় আগে অস্ট্রিয়ার ভবিষ্যতদর্শী শিল্পী মাক্স পাইন্টনার এই ছবি এঁকেছিলেন৷ বিখ্যাত মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টেও তাঁর শিল্পকর্ম শোভা পাচ্ছে৷ পাইন্টনারের জঙ্গল অবশ্য নিখুঁত সারিবদ্ধ একই রকম গাছ দিয়ে তৈরি – ফুটবল স্টেডিয়ামের মিশ্র জঙ্গলের মতো নয়৷ পাইন্টনার মনে করেন, ‘‘জঙ্গলটি যে অন্যরকম হয়ে উঠেছে, তা আমার অসাধারণ লাগছে৷ এখানে আসার পথে মনে আশঙ্কা ছিল, যে এটি আমার চিত্রকর্মের মতো হবে তো? সেটা হয় নি দেখে এখন আমি খুব খুশি৷''
‘ফর ফরেস্ট' এক টেকসই প্রকল্প৷ ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত দর্শকরা প্রায় রাত পর্যন্ত এই জঙ্গল দেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷ তারপর সেই গাছগুলি কাছেই কোথাও আবার নতুন করে পুঁতে দেওয়া হবে৷
মার্গারেটে ক্রয়েৎসার/এসবি