ফুটবলারদের মানসিক অবসাদ দূর করতে উদ্যোগী জার্মানি
২৯ নভেম্বর ২০১১‘উইলিয়াম হিল স্পোর্টস বুক অফ দ্য ইয়ার' তকমায় ভূষিত হয়েছে রোনাল্ড রেং'এর বই, যার নাম ‘এ লাইফ টু শর্ট'৷ এ বইতে রেং দেখিয়েছেন, পেশাদার ফুটবলারদের মধ্যে মানসিক চাপ কীভাবে তীব্র বিষন্নতায় আক্রান্ত করছে তাঁদের৷ আর তার প্রভাবেই ঘটে চলেছে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা৷ যার মধ্যে ২০০৯ সালে জার্মানির জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার রবার্ট এংকের রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷
এংকেই নন, এই তো গত রোববার ওয়েলস-এর কোচ, প্রিমিয়ার লিগের এককালের তারকা ফুটবলার গ্যারি স্পিডের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে গেল৷ জাতীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে স্পিড তাঁর দলের পরবর্তী ফুটবল ম্যাচগুলি নিয়ে বেশ হাসিমুখে কথাবার্তা বলে বাড়ি গেলেন৷ তার কয়েক ঘন্টা পরেই নিজের বাড়িতে মিলল তাঁর ঝুলন্ত দেহ৷ ফুটবল দুনিয়ায় এই ঘটনাগুলি স্বভাবতই অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে৷
রেং তাঁর বইতে সেই সমস্যার মূল খুঁজতে চেষ্টা করেছেন৷ সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, এংকের আত্মহত্যার ঘটনার নেপথ্য কাহিনী খুঁজতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, রবার্ট এংকে তাঁর খেলোয়াড় জীবনের শুরুতে যে দলে খেলতেন, সেই ম্যোয়েনশেন গ্লাডবাখে খেলার সময়ে, অর্থাৎ নয়ের দশকেও যথেষ্ট মানসিক অবসাদের শিকার হতেন ফুটবলাররা৷ সেই ম্যোয়েনশেন গ্লাডবাখের দলটায় মোট পাঁচজন ফুটবলার এই অবসাদের শিকার ছিলেন সে সময়ে৷
আসলে ফুটবল জগতের তারকাদের কাছে দর্শক, ক্লাব এবং সমালোচকদের সবসময়ে একটাই প্রত্যাশা থাকে, আর তা'হল ভালো খেলা৷ ভালোর থেকে আরও ভালো আরও আরও ভালো, সবসময়েই জয়ের জন্য উন্মাদনা, সাফল্য ছাড়া আর কোনকিছুই কেউ মেনে নিতে রাজি নয় ফুটবলারদের কাছ থেকে৷ অথচ সর্বদা যে সেটা হবেই, এমন তো কোন কথা নেই৷ আর এই প্রচণ্ড প্রত্যাশা কিন্তু তা পূরণের রাস্তা না থাকাটাই শেষ পর্যন্ত আত্মহননের দিকে প্ররোচিত করে কাউকে কাউকে৷ যেমনটা ঘটেছে এংকে বা স্পিডের ক্ষেত্রে৷
ফুটবলারদের মধ্যে এই মানসিক অবসাদকে নিয়ে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে সব মহলেই৷ রেং যেমন জানাচ্ছেন, জার্মান ফুটবল তারকা রাইনহোল্ড ম্যাথির প্রসঙ্গ৷ বলছেন, ম্যাথি তাঁকে বলেছেন, আগেকার দিনে এই মানসিক অবসাদের ছদ্মনাম ছিল ‘হ্যামস্ট্রিং'৷ এই নামের আড়ালে ফুটবলাররা বোঝাতেন তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছেন৷ কিন্তু এ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনার কোন ব্যবস্থা ছিলনা৷ সকলেই সেটাকে যথাসাধ্য লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করত৷ কারণ ফুটবল মানেই হল শক্তির খেলা৷ শারীরিক আর মানসিক এই দুই দিকেই একজন ফুটবলারকে সুপারম্যানের মত হতে হয়৷ মানুষের পক্ষে যা অসাধ্যই শুধু নয়, অসম্ভবও৷
তবে, সুখের বিষয় একটাই, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে৷ রবার্ট এংকের অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুর পর জার্মান ফুটবল মহল এখন নতুন করে ভাবছে৷ এখন খেলার জগতের মনোবিদদের দ্বারস্থ হচ্ছেন ফুটবলাররা৷ এ নিয়ে এক ধরণের সতর্কতা তৈরি হয়েছে জার্মানির ক্লাবগুলিতে৷ চলছে প্রচার৷
রেং জানাচ্ছেন, এংকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল৷ সে কারণেই তিনি জানতে পেরেছেন, আগেকার দিনে ফুটবলারদের এই মানসিক সমস্যাকে লুকিয়ে রাখার কুফল কত ভয়াবহ হয়ে উঠত৷ এখন সময় বদলেছে৷ তাই নতুন করে ভাবতে পারছে সব মহল৷ এংকের মৃত্যু নিঃসন্দেহে মস্ত বড় ক্ষতি৷ কিন্তু সেই মৃত্যুই এই পথটিকেও খুলে দিয়েছে জার্মানির ফুটবল মহলে৷ যাকে স্বীকার করছে এবং যার সমাধানসূত্র বের করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলা, ফুটবল৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক