ফুটবল
৬ মার্চ ২০১২বার্সা গতবছর লা লিগা - অর্থাৎ স্পেনের ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবল লিগ - এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ, দুটোই জিতেছে৷ এবার অন্তত চ্যাম্পিয়নস লিগে তারা কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোর মুখে৷ জার্মানির বায়ার লেভারকুজেন'কে ৩-১ গোলে হারিয়ে এসেছে বার্সা৷ এই বুধবার নু ক্যাম্পে তাদের নিজেদের মাঠে বার্সাকে হারানোর স্বপ্ন লেভারকুজেন'এর আধা-বাঙালি কোচ রবিন ডুট, অর্থাৎ রবিন দত্ত নিজেও দেখেন না৷
বার্সার কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা'কে নিয়ে সব আদিখ্যেতা সত্ত্বেও বলতেই হয় যে, রেয়ালের কোচ জোসে মুরিনিয়ো মাদ্রিদে তার দ্বিতীয় মরশুমেই রেয়ালকে একটি ভীতিকর শক্তিতে পরিণত করেছেন৷ রেয়াল এখন লা লিগায় বিগত ২১টি খেলার মধ্যে ২০টিতে জিতেছে৷ হেরেছে মাত্র একবার৷ সেটা আবার নিজেদের মাঠে, অর্থাৎ বের্নাবেউ স্টেডিয়ামে, এবং ঐ বার্সার কাছে৷
বার্সা কিন্তু অকারণে এখানে-সেখানে পয়েন্ট ফেলে-ছড়িয়ে নষ্ট করে এ'মরশুমে তাদের লা লিগার খেতাব জেতার সব সম্ভাবনা প্রায় নিঃশেষ করে বসে আছে৷ অথচ বার্সার প্লেয়াররা, কোচ এবং দুনিয়ার ফুটবলমোদীরা জানে যে, একক ম্যাচে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে বার্সা৷ বার্সার এবার আসল মুশকিলটা হল ইনজুরি নিয়ে৷ যদিও তার ফলে আদ্রিয়ানো, এরিক আবিদাল কিংবা সেইদু কাইতা'র মতো প্লেয়াররা কিছুটা পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসতে পেরেছে৷
খামখেয়ালিপনায় পয়েন্ট নষ্ট করতে পারে বার্সা৷ তা সত্ত্বেও এ'মরশুমে ১৩টি লা লিগা খেলায় তারা মাত্র পাঁচটি গোল খেয়েছে৷ আর নু ক্যাম্পে চ্যামপিয়নস লিগের তিনটি খেলায় মাত্র দু'টি গোল খেয়েছে৷ এর একটা বড় কারণ হল এই যে, পেপ গুয়ার্দিওলা'র দলের বিরুদ্ধে গোল করাটা দুঃসাধ্য ব্যাপার৷ কেননা গোল করতে গেলে আগে বল পেতে হবে৷ ওদিকে বার্সা একবার বল দখল করতে পারলে শুরু হয়ে যায় তাদের পাসিং'এর খেলা৷
বার্সা প্রায় সব খেলাতেই প্রায় ৭০ শতাংশ সময় বল তাদের নিজেদের পায়ে রাখে৷ বিপক্ষদলের প্লেয়াররা যেন বার্সার পাসিং'এর জাদুতেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায়৷ পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপের পাঁচটা প্রধান জাতীয় লিগ একসঙ্গে ধরলে, সবচেয়ে বেশি পাস এসেছে যে খেলোয়াড়টির কাছ থেকে, তিনি হলেন বার্সার সাভি: তিনি দিয়েছেন ১,৫৫৩টি পাস৷ বার্সার ওয়েবসাইটেই (এফসি বার্সেলোনা ডট কম) সেসব খুঁটিনাটি পাওয়া যাবে৷ দ্বিতীয় স্থানে আর কেউ নয়, বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি৷ তার দেওয়া পাসের সংখ্যা ১,৩৫১৷ তৃতীয় স্থানে রেয়াল মাদ্রিদের সাবি আলন্সো, যার দেওয়া পাসের সংখ্যা ১,২৭১৷ কিন্তু তার পরেই আবার বার্সার ফুলব্যাক দানিয়েল আলভেস, যে পাস দিয়েছে ১,২১৫টি৷
পল হেওয়ার্ড গতবছর বার্সা বনাম ম্যান ইউ খেলার আগে যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গার্ডিয়ান' পত্রিকায় লিখেছিলেন: ‘বার্সেলোনার মন্ত্রমুগ্ধকর নির্মমতা হল কলা এবং বিজ্ঞানের এক সুন্দর সংমিশ্রণ৷' বার্সার খেলা জলের স্রোতের মতো বিপক্ষের গোলের দিকে এগিয়ে যায় বটে, কিন্তু বল হারালেই একটি গ্রিড বা ছক ধরে প্লেয়াররা তাদের পজিশন নিয়ে নেয়, যা'তে বলটা আবার ফিরে পাওয়া যায়৷
বার্সার নবীন খেলোয়াড়দের জন্য নাকি পুরো মাঠটাকে আটটা স্কোয়ারে ভাগ করে দেখানো হয়, এবং বলা হয় যে, সব ক'টা স্কোয়ারে নিজের দলের প্লেয়ার থাকা চাই৷ কোনো ফাঁকা স্কোয়ার দেখলেই বার্সার কোনো না কোনো প্লেয়ার সেখানে এগিয়ে যাবে, এবং তার উপস্থিতির ফলেই বিপক্ষের বল পাস করার স্বাধীনতা খর্ব হবে৷ অর্থাৎ বার্সার প্লেয়াররা আক্রমণের সময়েও প্রতিরক্ষার কথাটা মনে রাখে৷
বার্সার সাভি'র কথাতেই শোনা যাক৷ সাভি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন: ‘চটজলদি ভাবো৷ জায়গা খোঁজো৷ আমি ওটাই করি: জায়গা খুঁজি৷ সারাটা ক্ষণ৷ আমি সব সময়েই খুঁজছি৷ এখানে? না৷ ওখানে? না৷ যারা খেলে না, তারা জানে না ও'টা কতো শক্ত কাজ৷ জায়গা, জায়গা, জায়গা৷ যেন প্লে স্টেশন৷ আমি দেখি, মাটি করেছে, এখানে ডিফেন্ডার আছে, বলটা ওখানে পাঠাতে হবে৷ আমি জায়গাটা দেখি আর পাস করি৷ সেটাই আমার কাজ৷'
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন