ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করছে কৃত্রিম নাক
৩ মে ২০২১বিৎসি নামের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জায়েন্ট শ্নাউৎসার জাতের কুকুর ফুসফুসে ক্যানসারের গন্ধ পায়৷ স্বাভাবিক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ক্যানসার রোগীর শ্বাসের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা তার আছে৷
এক ইলেকট্রনিক নাকেরও সেই ক্ষমতা রয়েছে৷ কৃত্রিম গন্ধের রিসেপ্টর স্বাস্থ্যবান ও অসুস্থ মানুষের পার্থক্য ধরতে পারে৷ মারবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রো. রেমব্যার্ট কোৎসুলা বলেন, ‘‘নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে৷ সেই হিপোক্রিটিসের যুগেও এমন ধারণা চালু ছিল৷ আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রেও শ্বাস বিশ্লেষণ করে কিছু রোগের অস্তিত্ব প্রমাণ করা হয়৷''
ক্যানসার রোগের তালিকায় ফুসফুসের ক্যানসার পুরুষদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও নারীদের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছে৷ জার্মানিতে প্রতি বছর ৫০,০০০-এরও বেশি মানুষ ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন৷ সমস্যা হলো, রোগীদের ক্ষেত্রে কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ওজন কমার মতো উপসর্গ অনেক পরে দেখা যায়৷ এমনকি সাধারণ এক্সরে ছবিতেও ফুসফুসের ক্যানসার অনেক পরে ধরা পড়ে৷ তাই ঠিক সময়ে উপসর্গ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এক্সরে উপযুক্ত নয়৷
অন্যদিকে, কম্পিউটার টোমোগ্রাফি অনেক নিখুঁতভাবে ফুসফুসের মধ্যে পরিবর্তন দেখিয়ে দেয়৷ এই প্রক্রিয়ায় ফুসফুসের ক্যানসার সময় থাকতে শনাক্ত করা যায়৷ কিন্তু কখনো কখনো ভুল বিশ্লেষণও ঘটে৷ জার্মান ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের রেডিওলজিস্ট স্টেফান ডেলোর্মে মনে করেন, ‘‘খারাপ খবর শুনে আগেই চেকআপের জন্য যেতে হলে মন অস্থির হয়ে ওঠে৷ সেটা প্রথম বিপদ৷ রোগীদের যত ভালো করেই পরীক্ষা করা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত এমন রোগীরও অপেরেশন করা হয় যার শরীরে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায় নি৷ অকারণেই তাকে অপারেশন টেবিলে শুতে হয়েছে৷''
সে কারণে রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া আরও নিখুঁত করে তুলতে রেডিওলজিস্টরা গবেষণা চালাচ্ছেন, যাতে ধূমপান ও পারিবারিক চাপের মতো কারণে ঝুঁকি বেশি থাকলেও মানুষের সহায়তা করা যায়৷ ডেলোর্মে বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে নির্দিষ্ট পর্যায়ে কয়েকটি পরীক্ষার প্রণালী স্থির করতে হবে৷ এমন সার্বিক উদ্যোগ নিলে তবেই পরীক্ষার ভুল ফলাফলের মতো অনেক নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো সম্ভব হবে৷''
গবেষকরা ফুসফুসের ক্যানসার আগে থেকে শনাক্ত করার নতুন পথ খুঁজছেন৷ এ ক্ষেত্রে বিৎসির মতো কুকুর কাজে লাগতে পারে৷ এক গবেষণার আওতায় এই প্রাণী ক্যানসারের গন্ধ শুঁকতে শিখেছে৷ পশু চিকিৎসক হিসেবে ইঙে নয়বার্ট মনে করেন, ‘‘ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পেলে কুকুর এমন গন্ধ শুঁকে ক্যানসার শনাক্ত করতে এবং সে বিষয়ে মানুষের নজর আকর্ষণ করতে পারে৷ এমন কি আক্রান্ত কোষ থেকে নিসৃত গন্ধের মতো সেই রোগের সামান্য চিহ্নও কুকুর টের পায়৷''
সেই গবেষণার আওতায় ফুসফুসের ক্যানসারের কয়েকজন রোগী এবং সুস্থ মানুষকে নির্দিষ্ট ফিল্টারের মাধ্যমে নিঃশ্বাস নিতে হয়েছিল৷ শ্বাসপ্রশ্বাসের বাতাসের পদার্থ তাতে আটকে গিয়েছিল৷
কুকুরকে দুই রকম নমুনার মধ্যে পার্থক্য করার কাজ দেওয়া হয়েছিল৷ ক্যানসারের গন্ধ পেলেই বিৎসি-কে বসে পড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল৷ বিৎসি এবং অন্যান্য কুকুরগুলি সেটা ভালোই রপ্ত করেছিল৷ মারবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রো. কোৎসুলা বলেন, ‘‘সবচেয়ে অসাধারণ বিষয় হলো, কুকুর কিন্তু আশেপাশের পরিবেশের যে কোনো প্রভাব উপেক্ষা করে গন্ধ শনাক্ত করতে পারে৷ রোগী যে খাবারই খেয়ে থাকুক না কেন, তার বয়স যতই হোক না কেন, কুকুরের তাতে কিছু এসে যায় না৷''
গবেষকরা কুকুরের নাকের সঙ্গে ইলেকট্রনিক নাকের তুলনা করেছেন৷ বাতাসে ভাসমান নির্দিষ্ট পদার্থের নির্দিষ্ট মিশ্রণ শনাক্ত করার জন্য গন্ধের এমন সেন্সরকে প্রোগ্রাম করা যায়৷ অর্থাৎ কোন গন্ধ শনাক্ত করতে হবে, কুকুরের মতো কৃত্রিম নাককেও সবার আগে সেই প্রশিক্ষণ দিতে হয়৷
শ্বাসের নমুনার মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের নির্দিষ্ট গন্ধ আছে কিনা, যান্ত্রিক নাক তা নির্ণয় করতে পারে৷ প্রোফেসর কোৎসুলা বলেন, ‘‘কুকুর ও যান্ত্রিক নাকের মধ্যে তুলনা করে দেখা যাচ্ছে যে, দুই পক্ষই সেই কাজ করতে পারে৷ যান্ত্রিক নাক হয়তো আরো ভালো কাজ করে, কারণ, কুকুর তার মালিকের আবেগ অথবা নির্দিষ্ট পরিবেশে কোনো কিছু বুঝতে না পেরে অস্থির হয়ে উঠতে পারে৷''
ফুসফুসের ক্যানসার আরও ভালোভাবে দেখে ও তার গন্ধ পেয়ে গবেষকরা সময় থাকতে রোগ শনাক্ত করে কার্যকর চিকিৎসার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছেন৷
টিলমান হাসেনস্টাইন/এসবি