ফের কাঠগড়ায় ফেসবুক!
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির আলাপ ফেসবুকে৷ মুখোমুখি দেখা হওয়ার আগে অনলাইন চ্যাটেই দু'জনের ঘনিষ্ঠতা, যার থেকে দু'জনে একসঙ্গে থাকারও সিদ্ধান্ত নেয়৷ নিজের বাড়িতে মিথ্যে বলেছিল মেয়েটি, যে সে বিদেশে একটা ভালো চাকরি পেয়েছে৷ তার পর বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিল ছেলেটির সঙ্গে৷ সেই সহবাসের সময়ই একদিন দু'জনের কথা কাটাকাটি হয়৷ সম্ভবত মেয়েটি দ্বিতীয় কারও সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে- এমন সন্দেহ করতে শুরু করেছিল ছেলেটি৷ তারই জেরে একদিন মেয়েটিকে খুন করে ছেলেটি৷বিরাট এক ট্রাঙ্কের মধ্যে মৃতদেহটি রেখে, সিমেন্ট গুলে ঢেলে দেয়৷ তার পর নিজের ঘরের মধ্যেই ট্রাঙ্কটি রেখে, তার চার দিকে ইট গেঁথে, তার ওপর টালি বসিয়ে একটি বেদী বানিয়ে ফেলে৷
মেয়েটিকে খুন করার পর তার মোবাইল থেকে মাঝে মাঝেই মেয়েটির বাড়ির লোকজনকে মেসেজ করে ছেলেটি বোঝানোর চেষ্টা করত যে মেয়েটি ভালো আছে৷ এমনকি মাঝে একদিন বাঁকুড়ায় মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখাও করে আসে ছেলেটি৷ কিন্তু দীর্ঘদিন মেয়ের সঙ্গে বাড়ির কারও কথা না হওয়া বাবা-মায়ের সন্দেহ হয়৷ তাঁরা খবর দেন পুলিশে৷ মেয়েটির মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে ছেলেটির বাড়িতে পৌঁছে যায় পুলিশ এবং একে একে সব অপরাধ ফাঁস হয়৷ ছেলেটি যে এর আগে একইভাবে নিজের মা এবং বাবাকে খুন করে বাড়ির বাগানে পুঁতে দিয়েছিল, জেরার মুখে সে কথাও কবুল করে৷
উদয়ন দাস নামে এই প্রবাসী বাঙালি ছেলেটির কুকীর্তিতে সারা দেশেই হইচই পড়ে গেছে৷ এবং স্পষ্টতই বিকৃতমস্তিষ্ক এক যুবকের অপরাধপ্রবণতার থেকেও লোককে বেশি ভাবাচ্ছে, যাবতীয় অপরাধের পেছনে ফেসবুক নামক এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ভয়ঙ্কর ভূমিকা৷ এই অপরাধের সূত্রে নতুন করে সামনে উঠে আসছে একের পর এক অপহরণ, ধর্ষণ, এমনকি খুনের পুরনো ঘটনা, যার শুরুটা হয়েছিল ফেসবুক থেকে৷ এছাড়া কাউকে ঠকিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা, বা নোংরা ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে কারও বেইজ্জতির মতো ঘটনা তো আকছারই ঘটছে৷
কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম দপ্তর থেকে যে কারণে নতুন করে হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু হয়েছে, ফেসবুক বন্ধুত্ব কীভাবে বজায় রাখা উচিত, সীমারেখাগুলোই বা কী হওয়া দরকার, সন্দেহজনক পরিচিতি বা আচরণ কীভাবে বুঝতে হবে, সেই নিয়ে৷
সতর্ক করছেন মনোবিজ্ঞানীরাও৷ কলকাতার এক নামী হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত মানসিক চিকিৎসক ডাঃ শান্তনু গোস্বামী যেমন বলছেন, সাবধান হওয়া উচিত বাবা-মায়েদের৷ একটি মেয়ে বিদেশে চাকরি পাওয়ার কথা বলে বাড়ি চলে গেল কী করে, কেন বাবা-মা কোনোরকম খোঁজখবর নিলেন না মেয়ের থেকে— এই প্রশ্নগুলোই বেশি করে তুলে ধরছেন ডাঃ গোস্বামী৷ কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকও জানালেন, ছেলে মেয়ে হারিয়ে গেলে বা রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেলে, অথবা কারও সঙ্গে পালালে, খুঁজে দেওয়ার জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হন বাবা-মায়েরা৷ কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, ছেলে-মেয়েদের কোনও খবরই তাঁরা রাখেন না৷ ছেলে বা মেয়ে কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, সে ফেসবুকের ভার্চুয়াল জগতেই হোক, বা বাস্তব জীবনে, বাবা-মায়েরা জানেনই না৷ ফলে এক নিদারুণ বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে পারিবারিক, সামাজিক জীবনে৷ কাজেই শুধু ফেসবুককে দোষ দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলে কী করে হবে!