ফেসবুক জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে?
২৩ নভেম্বর ২০১৩ফেসবুক বুড়ো হয়ে গেছে৷ অন্তত তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আচরণ নিয়ে গবেষণারতরা তাই মনে করছে৷ ২০১৩ সালে ফেসবুকে খানিকটা সমস্যায়ও দেখা দেয়৷ আর তাহচ্ছে, ৩৫ বছরের কম বয়সিরা ফেসবুক ছেড়ে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে৷ বিষয়টি জানিয়েছে খোদ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সামাজিক যোগাযোগ সাইটের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ডেভিড এবের্সম্যান অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের এক সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন৷ শেয়ার বাজারেও ফেসবুক এখনো সুবিধা করতে পারেনি৷
তবে এটা এখনো ফেসবুকের জন্য কোনো সমস্যা নয়, বলেন নিলস ব্রুগেন৷ মিউনিখের জেএফএফ মিডিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটের এই শিক্ষক বলেন, ‘‘দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা সামাজিক যোগাযোগ ব্যবসায় ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম এত বড় হয়ে গেছে যে এটি এই মুহূর্তে কোনো ধরনের ঝুঁকিতে নেই৷''
জার্মান স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক ‘‘স্ট্যাডি-ভিজেড''-এর ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টি সেরকম নয়৷ ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে ক্রমশ ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে নেটওয়ার্কটি৷ ইতোমধ্যে স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি এবং পোল্যান্ড থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে ‘‘স্ট্যাডি-ভিজেড''৷ বার্লিনের ‘ইন্সটিটিউট ফর কমিউনিকেশন এন্ড সোশ্যাল মিডিয়ার' কার্স্টেন ভেন্সলাফ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কটির সমস্যা হচ্ছে, একটি পর্যায়ে গিয়ে তারা আর নতুন কিছু দিতে পারেনি৷''
আগ্রহ ধরে রাখা
ফেসবুকের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন৷ ভেন্সলাফ বলেন, ‘‘আমরা বলতেই পারি ফেসবুক সেকেলে হয়ে গেছে৷ তবে এটা কোনো ইস্যু নয়৷'' প্রতিষ্ঠানটি নিত্য নতুন অ্যাপস এবং বিভিন্ন ফিচারের মাধ্যমে নিজেদের উপর ব্যবহারকারীদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারছে, বলেন তিনি৷ তবে তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটু ভিন্ন মানসিকতার কথাও স্বীকার করেন ভেন্সলাফ৷ সেটি হচ্ছে, তরুণরা সবকিছু এক প্ল্যাটফর্মে করার চেয়ে কাজ ভেদে ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ তাই তারা ছবি শেয়ারের ক্ষেত্রে ইন্সটাগ্রাম এবং চ্যাটের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ বা স্ন্যাপচ্যাট বেছে নিচ্ছে৷
কিছু সামাজিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তরুণদের এই আচরণ ফেসবুকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে৷ তবে ফেসবুক এক্ষেত্রে বেশ সক্রিয় রয়েছে৷ তাই সামাজিক যোগাযোগ সংক্রান্ত কোনো ‘‘আইডিয়া'' পছন্দ হলেই কিনে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি৷ এক্ষেত্রে ইন্সটাগ্রাম একটি উদাহরণ৷
‘‘তরুণবান্ধব নয়''
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরও ৩৫ বছরের কম বয়সিরা ফেসবুকের উপর থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে কেন? গবেষকরা মনে করেন, ফেসবুকে আসলে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অল্পবয়সিদের মধ্যে একটি পার্থক্য তৈরি করা প্রয়োজন৷ কেননা স্কুলগামীরা মনে করেন, ফেসবুকে বাবামা, শিক্ষক এমনকি ফুটবল কোচের থাকার বিষয়টি ‘‘আনকুল''৷ ফলে তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ফেসবুক আসলে অভিভাবকদের জায়গা৷ ভেন্সলাফ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘বাস্তব জীবনেও অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েরা সেই সব বার পরিহার করে চলে, যেসবে তাদের বাবা-মায়েরা যান৷''
এই সামাজিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফেসবুক ক্রমশ ‘‘তরুণবান্ধব নয়'' হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে৷ তাছাড়া আগে একটি সামাজিক মাধ্যম ছেড়ে অন্যটিতে যেতে জটিলতা হতো৷ কিন্তু এখন স্মার্টফোনের কল্যাণে সে সমস্যা আর থাকছে না৷ বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগও এখন সম্ভব হচ্ছে৷ তাই তরুণ প্রজন্ম চাইলেই সহজে নেটওয়ার্ক বদলাতে পারছে৷
তবে ফেসবুকের জন্য বিষয়টি এখনো বড় ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি৷ যে পরিমাণ ব্যবহারকারী তাদের ছেড়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি নিয়মিত এই নেটওয়ার্কে যোগ দিচ্ছে৷ আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সি বিশ্বস্ত ব্যবহারকারীও ফেসবুকের কম নয়৷