1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নির্যাতন

৬ জুলাই ২০১৮

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা এখন ফেসবুকে কমেন্ট করলেও হুমকির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ৷ গত এক সপ্তাহে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে মামলা দেয়া হয়েছে৷ নিখোঁজ আছেন একজন৷ এর বাইরে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন কেউ কেউ৷

https://p.dw.com/p/30x9H
ছবি: bdnews24.com

আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তেজগাঁ কলেজের শিক্ষার্থী মরিয়মকে শহীদ মিনার এলাকা থেকে তুলে নেয়া হয়েছিল ২ জুলাই৷ তাঁকে ছেড়ে দেয়ার পর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর সেই সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন আমাকে তুলে সিএনজির ভেতরে করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সিএনজির প্রত্যেকটা মুহূর্ত ছিল আমার কাছে জাহান্নাম৷ পরে আমি ভেবেছি, হয়তো থানায় গেলে সেফ থাকবো৷ কিন্তু না, থানা ছিল আমার জন্য সেকেন্ড জাহান্নাম৷’’

তিনি বলেন, ‘‘অ্যাজ এ হিউম্যান, আমার কিছু রাইটস আছে৷ যদি আমার কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারতো৷ আমাকে কোর্টে চালান করে দিতে পারতো৷ কিন্তু বাইরের ছেলেরা কেন আমাকে তুলে নিয়ে যাবে৷ কেন তারা আমার গায়ে টাচ করবে? এটা শুনতে ইচ্ছা করছে আপনাদের? তারা আমাকে একটি সিএনজিতে করে থানায় নিয়ে যায়৷ তারা আমার সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করেছে৷আর থানায় আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে, তা আপনাদের সামনে বলতে আমার খুব খারাপ লাগছে৷’’

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠি, হাতুড়ি ও রামদার আঘাতে ডান পায়ের দুই হাড় ভেঙে যাওয়া তরিকুলকে ছাড়পত্র দিয়ে বৃহস্পতিবার বের করে দিয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ ২ জুলাই বিকালে কোটা সংস্কার অন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পতাকা মিছিল বের করে৷ তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়৷ এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন৷ আহতদের মধ্যে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র তরিকুলকে একা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রামদা, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে৷ এতে তার ডান পায়ের দু'টি হাড় হাঁটুর নিচ থেকে ভেঙে যায়৷ মাথায়ও গুরুতর জখম হয়৷ ওইদিন বিকালে তাঁকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ তাঁকে তার বন্ধুরা এখন একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছেন৷

Bangladesch - Proteste
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত একজনকে উদ্ধার করছে পুলিশছবি: bdnews24.com

এই দফায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর প্রথম হামলা হয় ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এরপর এর প্রতিবাদে শহীদ মিনারে ২ জুন প্রতিবাদ সমাবেশ করতে গেলে আবারো হামলা হয়৷ প্রথমদিনের হামলায় গুরুতর আহত নুরুল হককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিত্‍সা দেয়নি৷ এরপর তাঁকে বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখান থেকেও বের করে দেয়া হয়৷ মরিয়ম এবং আহত দু'জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি৷ তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি৷

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই তিনজনই এখন নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছেন৷ তারা সংবাদ মাধ্যমে কথা বলার কারণে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ তারা এখন নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ তাই তারা টেলিফোনে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছেন৷ আবাসস্থল পরিবর্তন করেছেন৷’’

তিনজনই এখন নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে: আন্দোলনের আহ্বায়ক

তিনি বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত আমাদের ১০ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ রাশেদের সঙ্গে যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজ খানকেও পুলিশ নিয়ে যায়৷ কিন্তু তার কোনো খোঁজ আমরা এখনো পাইনি৷ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমরা কোনো তথ্য জানতে পারিনি৷’’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘এখন ফেসবুকে কোনো পোস্ট বা কমেন্ট করলেও হয়ারানি করা হচ্ছে৷ খুঁজে বের করে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ আমাদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফেসবুক পেজটিও হ্যাক করা হয়েছে৷ আমার ফেসবুক আইডি ডিজঅ্যাবল করে দেয়া হয়েছে৷ আমাদের নেতা-কর্মীদের খোঁজা হচ্ছে৷ আমরা কেউই নিজেদের আবাসস্থলে থাকতে পারছি না৷ ছাত্রলীগের হুমকি আর নির্যাতনের মুখে আমরা এখন একরকম আত্মগোপনে আছি৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘আটক রাশেদসহ রিমান্ডে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করা হোক৷ বিকাশ ও রকেট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কী পাওয়া গেছে তা-ও জানানো হোক৷ আমরা জানতে পেরেছি, জিজ্ঞাসাবাদে এই আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পায়নি, যা আমরা আগেও বলেছি৷ আর বিকাশ ও রকেট-এর মাধ্যমে টাকা লেনদেনও ১০ টাকা ১০০টাকার৷ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাঠানো৷’’

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের তুলে নিয়ে যেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে, তা এনএসএফ-এর পাঁচপাত্তুরের নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে৷ আর আমার মনে হচ্ছে, দেশে যে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে, তা যাতে বহাল থাকে, রাষ্ট্র তেমন উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছে৷’’

যেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে তা এনএসএফ-এর পাঁচপাত্তুরের নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে: নূর খান

তিনি বলেন, ‘‘নারীদের তুলে নিয়ে যেভাবে নির্যাতনের বর্ণনা আমরা শুনেছি, চিকিত্‍সা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার যে ঘটনা ঘটছে, এটা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এইসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যদি আইনের আওয়তায় আনা না হয়, তাহলে ধরে নেয়া যায়, রাষ্ট্র ভয়ার্ত পরিবেশ বহাল রাখতে চায়৷ সেজন্য গুন্ডা বদমাইশদের আশ্রয় দিতে চায়৷’’

এদিকে হামলার সঙ্গে জড়িতদের নতুন কোনো বক্তব্য শুক্রবার জানা যায়নি৷ তবে হামলার জন্য সরাসরি যাদের দায়ী করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান ৩ জুলাই ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছিলেন, ‘‘আমরা হামলা করিনি, তাদের প্রতিহত করেছি৷ আমরাও কোটা সংস্কারের পক্ষে৷ প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন৷ কিন্তু জামায়াত,শিবির, ছাত্রদলের কিছু লোক এই ইস্যু ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল৷ আমরা তাদের তা করতে দেইনি৷ আমরা ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা রক্ষা করছি৷ তারা বার বার গুজব ছড়িয়ে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

৩ জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...