ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পর্দা উঠছে ৬ অক্টোবর
৫ অক্টোবর ২০১০এই মাসের ৬ তারিখে দ্বার খুলছে ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলার৷ বিশ্বের নানা দেশের সাহিত্যরসিকরা আসছেন এই মেলায়৷ আসবেন নামজাদা লেখকরা৷ সেই সাথে
এবারের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় ১১৪টি দেশের সাত হাজারের মত প্রকাশক ও অন্যান্য সংস্থা তুলে ধরবেন কয়েক লাখ বই পুস্তক ও অন্যান্য সামগ্রী৷ এদের একটা বড় অংশই অ্যামেরিকা ও ব্রিটেনের৷ নামিদামি লেখকের ঘাটতি হবেনা মেলায়৷ অ্যামেরিকার তারকা লেখক জনাথন ফ্র্যাঞ্জেন ও কেন ফোলেট যোগ দিচ্ছেন মেলায়৷ জার্মানির দুই নোবেলজয়ী লেখক গ্যুন্টার গ্রাস ও হ্যার্টা ম্যুলার'এর উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলবে বইমেলার ঔজ্জ্বল্য৷
এছাড়া নতুন নতুন প্রযুক্তির ছড়াছড়ি দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে দর্শকদের৷ এ প্রসঙ্গে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরিচালক ইয়ুর্গেন বোস বলেন: ‘‘নানা ধরনের মাধ্যমের একত্রে চলাটা চোখে পড়বে এবার৷ অনেক কম্পিউটারেই লক্ষ্য করা যাবে, সংবাদের ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান হচ্ছে ই-মেল অ্যাকাউন্ট৷ চলচ্চিত্র ও বই-এর জগতও যে ক্রমেই কাছাকাছি চলে আসছে, চোখে পড়বে সেটাও৷ দেখা যাবে এক যন্ত্র থেকে আরেকটায় চলে যাওয়া যাচ্ছে ঝট করে৷''
শুধু বই নয় রয়েছে প্রযুক্তিও
ই-রিডার, ইন্টারনেট-প্ল্যাটফর্ম, অ্যাপ্স ইত্যাদি ক্রমেই মুদ্রিত বই-এর পাশাপাশি একটি বড় স্থান দখল করে নিচ্ছে৷ এ প্রসঙ্গে ইয়ুর্গেন বোস জানান, ‘‘বক্স অফিস হিটকরা ছবি অবতারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়, একই সাথে বই, কম্পিউটার এবং সংগীতও বের হয়েছে অবতারকে নিয়ে৷ তার মানে লোকের চিন্তাধারাও বদলে যাচ্ছে এখন৷'' তবে মুদ্রিত বই তার সমাদর এখনও হারায়নি৷ সম্প্রতি অনলাইন সার্ভিসের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রযুক্তির আধিপত্য সত্ত্বেও উত্তরদাতাদের শতকরা ৮৪ জন ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকে এখনও যুগোপযোগী বলে মনে করেন৷ শতকরা ৯৩ জন মনে করেন, ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে এই মেলা ৷
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় এবছরের অতিথি দেশ আর্জেন্টিনা৷ মারাদোনা ও ট্যাঙ্গো নাচ ছাড়াও তার যে আরো কিছু দেয়ার আছে, সেটাই এবার বুঝিয়ে দেবে দেশটি৷ একথাটাই জোর দিয়ে বললেন আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ও অতিথি দেশের আয়োজক কমিটির পরিচালক মাগডালেনা ফাইলিয়াসে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা আমাদের সাহিত্য ও প্রতিভার বৈচিত্র্য বিশেষ ভাবে তুলে ধরব মেলায়৷''
এবারের দেশ আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার ৬০ জনের বেশি লেখক ও বুদ্ধিজীবী যোগ দিচ্ছেন ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায়৷ আর্জেন্টিনার সরকার এক অনুবাদ-কর্মসূচির মাধ্যমে ২৩০ লেখকের ৩০০টি বই অনুবাদ করার ব্যবস্থা করেছে৷ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এক বইমেলায় নিজেদের সাহিত্য ও কৃষ্টি উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিতি পেতে চায় দেশটি৷ বেশ কিছু বই সামরিক জান্তার শাসনামলকে নিয়ে লেখা৷ অতীতের কালো অধ্যায়কে ভুলে যাওয়া নয়, বরং তা থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে চায় দেশটি৷ বই-পুস্তক ছাড়াও আর্জেন্টিনার ওপর ১২টির মত প্রদর্শনী থাকছে বইমেলায়৷
জার্মানির চেয়ে ৮ গুণ বড় আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা ৪ কোটির কিছু বেশি৷ অপূর্ব সুন্দর এই দেশটিতে রয়েছে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ এক ভাণ্ডার৷ বহু লেখক অর্জন করেছেন বিশ্বখ্যাতি৷ যেমন উল্লেখ করা যায় খর্খে লুইস বর্খেস, হুলিও কর্তাসার ও আরো অনেকের নাম৷ আর্জেন্টিনার মানুষদের বলা যায় বইপাগল জাতি৷ কেবল মাত্র গত বছরই ২২ হাজারের বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে দেশটিতে৷ বিশেষ করে আর্জেন্টিনার তরুণ লেখকদের লেখার ওপরই জোর দেয়া হচ্ছে বইমেলায়৷
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার সমাপ্তি পর্বে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য জার্মান পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের কোন ব্যক্তিত্বকে দেয়া হয় শান্তি পুরস্কার৷ এবছরের শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন ইসরায়েলের বিশিষ্ট লেখক ডাভিড গ্রসমান৷ উপন্যাস, প্রবন্ধ ও নানা রচনার মাধ্যমে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সদ্ভাব গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রসমান৷ এ ছাড়া ভিন্ন চিন্তাধারাকেও বোঝার চেষ্টা করেছেন তিনি৷ আর এই জন্যই তাঁকে এই সম্মাননা দেয়া৷ বলা হয়েছে পুস্তক সমিতির পক্ষ থেকে৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন