হিজাব পরার জন্য বরখাস্ত
২৮ নভেম্বর ২০১৩প্যারিসের উপকণ্ঠে ‘‘বাচ্চা নেকড়ে'' কিন্ডারগার্টেন ২০০৮ সালে তাদের কর্মী ফাতিমা আফিফ'কে হিজাব পরার কারণে বরখাস্ত করে৷ ফাতিমা সেই কিন্ডারগার্টেনের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ নিয়ে আদালতে গেলে আদালত এ'বছরের মার্চ মাসে ফাতিমার পক্ষেই রায় দেন৷ এবার প্যারিসের আপিল আদালত সেই রায় উল্টে দিয়েছে৷
বলা দরকার, ২০০৮ সালে ফাতিমা ফেরেন পাঁচ বছর মাতৃত্বকালীন ছুটির পর এবং কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষকে জানান যে, তিনি এবার থেকে হিজাব পরে কাজে আসতে চান৷ ডে নার্সারিটির প্রধান ফাতিমার এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে, প্রতিষ্ঠানের নিয়মাবলী অনুযায়ী কর্মীদের জীবনদর্শন, রাজনীতি ও ধর্মের বিচারে নিরপেক্ষ থাকতে হবে৷
ফাতিমা অতঃপর আদালতে যান এবং আদালত তাঁর যুক্তিই মেনে নেয় - আপিল আদালত যা করেনি৷ আপিল আদালতের রায়ে নার্সারির পদক্ষেপকেই সমর্থন করা হয়েছে৷ ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার প্রবক্তারা যেমন এই নতুন রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন, ঠিক তেমনই মুসলমান সংগঠনগুলির অভিযোগ, এ'ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলিম সমাজের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে৷
৪৪ বছর বয়সি ফাতিমার আইনজীবীরা বলেছেন, তারা খুব সম্ভবত আবার আপিল করবেন৷ ফাতিমা নিজে বলেছেন, তিনি মামলাটি নিয়ে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে পর্যন্ত যেতে রাজি আছেন৷ একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি এ'ও বলেছেন যে, প্রকাশ্যে হিজাব পরিধান করে তাঁর নিজেকে স্বাধীন ও মুক্ত লাগে এবং: ‘‘আমি কোনো মতাদর্শের পতাকা বহন করছি না, আমি শুধু ন্যায়বিচার চাইছি৷''
ফাতিমার উকিল মিশেল অঁরি এই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, বিচারক রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে এই রায় দিয়েছেন৷ ফ্রান্সের সরকারি স্কুলগুলিতে প্রকাশ্যে হিজাব, ইহুদিদের মাথার টুপি কিংবা শিখদের পাগড়ির মতো ধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহার নিষিদ্ধ৷ কিন্তু একটি বেসরকারি নার্সারি বা কিন্ডারগার্টেন সেই আইনের আওতায় পড়ে না, বলে রায় দিয়েছিল ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আপিল আদালত - এটা গত মার্চ মাসের ঘটনা৷ সে রায় এবার পাল্টে যাওয়াতে বিতর্কটা আবার নতুন ইন্ধন পাবে৷
ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত বা ইসিএইচআর'এর সামনে আপাতত একটা মামলা চলেছে, যার উদ্দেশ্য হল, ফ্রান্সে বোরখা'র উপর নিষেধাজ্ঞাকে বৈষম্যমূলক বলে প্রতিপন্ন করা৷ মামলাটি আনা হয়েছে এক ব্রিটিশ বাদীপক্ষের তরফ থেকে৷ আগামী বছরের সূচনায় রায় বেরোতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷ মামলায় ২৩ বছর বয়সি এক ফরাসি মহিলা আদালতকে বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজের ইচ্ছায় বোরখা পরেন, কোনো পুরুষ তাঁকে বোরখা পরতে বাধ্য করেনি এবং নিরাপত্তার প্রয়োজনে তিনি যে-কোনো সময় নিজেকে বোরখামুক্ত করতে প্রস্তুত৷
ফ্রান্সে বোরখা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা চালু হয় ২০১০ সালে, প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি'র শাসনকালে৷ ২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সে মহিলাদের পূর্ণ মুখাবরণের বোরখা পরিধানের জন্য ১৫০ ইউরো অবধি অর্থদণ্ড হতে পারে৷ বেলজিয়াম এবং সুইজারল্যান্ডের কিছু অংশেও ফ্রান্সের অনুকরণে বোরখা পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ ইটালি এবং নেদারল্যান্ডস অনুরূপ নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে৷
এসি / জেডএইচ (এএফপি)