1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিফ্রান্স

ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট

৩০ জুন ২০২৪

রোববার ফ্রান্সে প্রথম দফার পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

https://p.dw.com/p/4hh5X
ফরাসি নির্বাচন
ফ্রান্সের প্রথম দফা নির্বাচনে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছেছবি: LOU BENOIST/AFP

চারটি মূল ব্লক এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে অতি-ডানপন্থিদের কাছে হারের পরই এমানুয়েল মাক্রোঁ আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

কত ভোট পড়েছে

১৯৮৬ সালের পর ফ্রান্সের প্রথম দফা নির্বাচনে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২০২২ সালে একই সময়ে যা ছিল ৩৯ দশমিক চার শতাংশ। ভোটগ্রহণ শেষ হলে ফরাসি সংবাদমাধ্য়মগুলো প্রথম দফা নির্বাচন নিয়ে তাদের অনুমানের কথা জানাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই অনুমানগুলো নির্ভুল হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক ফলাফল রোববার রাতে প্রকাশিত হওয়ার কথা।

ফ্রান্স কী সিদ্ধান্ত নেবে

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গাব্রিয়েল আটালের কার্যালয় জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম দফার ফলাফল নিয়ে বিবৃতি দেবেন।

প্যারিসে বামপন্থি জোটের মেলাঞ্চর ভোট

বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) নেতা জ্যঁ-লুক-মেলাঞ্চ প্যারিসের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আগেও মন্ত্রী ছিলেন। সেইসময় তিনি সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য ছিলেন। ২০১২, ২০১৭ এবং ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মেলাঞ্চ। প্রতিবারই তার ভোটের পরিমাণ বেড়েছে।

জ্যঁ লুক মেলাঞ্চ
২০১২, ২০১৭ এবং ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মেলাঞ্চছবি: Abdul Saboor/REUTERS

ভোট দিলেন মাক্রোঁ, ল্য পেন

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং তার স্ত্রী ব্রিজিত মাক্রোঁ ভোট দিয়েছেন। দিনের শুরুতে মাক্রোঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দলের নেতা মারিন ল্য পেন উত্তর ফ্রান্সের একটি কেন্দ্রে ভোট দেন। উত্তর ফ্রান্স দলটির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এই ভোটে ল্য পেনের জয়ের সম্ভাবনার কথা বলেছেন একাধিক বিশ্লেষক।

ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত ভোটদানের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত ভোট পড়েছিল ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

তবে এবারের ভোট চলছে ফ্রান্সে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলাকালীন সময়ে।

ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে আগাম নির্বাচনে যেই জিতুক, দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে।

প্রতিটি প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লকের ব্যয়ের প্রতিশ্রুতির সংক্ষিপ্তসার বিশ্লেষণ করেছে বার্তাসংস্থাটি। তাদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবতা উপেক্ষা করা হয়েছে।

ভোট দিলেন এমানুয়েল মাক্রোঁ
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে অতি-ডানপন্থিদের কাছে হারের পরই এমানুয়েল মাক্রোঁ আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।ছবি: LUDOVIC MARIN/AFP

অতি ডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালি

ন্যাশনাল ব়্যালি (আরএন) জয়ী হলে তারা জ্বালানির বিক্রয় করের ওপর ভ্যাট কমাতে চায়। এই পদক্ষেপে আংশিকভাবে সরকারি অর্থায়নও করতে চায় দলটি। জুলাইয়ের শুরু থেকেই এই পদক্ষেপ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এজন্য ইইউ এর বাজেটে আগের চেয়ে ২০০ কোটি ইউরো কম বরাদ্দা দিতে চায় ল্য পেনের দল। যদিও ইইউ এর ২০২১-২০২৭ সালের বাজেট নিয়ে এরইমধ্যে ভোট হয়ে গেছে।

এই সঞ্চয়ে অবশ্য সরকারি রাজস্বে ক্ষতি পোষানো যাবে না। দলটি বলছে এই বছরের বাকি সময়ের জন্য কোষাগারে ৭০০ কোটি ইউরো ঘাটতি থাকবে, সারা বছরে যার পরিমাণ দাঁড়াবে ১২০০ কোটি ইউরোতে।

ন্যাশনাল ব়্যালির জর্ডান বারডেলা
প্রধানমন্ত্রী হলে ফ্রান্সে 'শৃঙ্খলা' আনতে চান ন্যাশনাল ব়্যালির জর্ডান বারডেলাছবি: JULIEN DE ROSA/AFP

বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বাড়তি মুনাফার ওপর শুল্ক বাড়াতে চায় তারা। জাহাজ মালিকদের বর্তমান ওজনভিত্তিক করের পরিবর্তে প্রচলিত কর্পোরেট কর দেয়ার বিষয়টিও চালু করতে চায় এই দল।

২০ বছর বয়স বা তার আগে যারা কাজ শুরু করেছেন, তাদের অবসরের বয়স ষাটে নামিয়ে আনা, ৩০ বছরের কম বয়সি কিছু কর্মীকে আয়কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং শিক্ষক ও নার্সদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়টিও রয়েছে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির এজেন্ডায়।

বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট

নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট সরকারি কর্মীদের বেতন ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে চায়। বিনামূল্যে স্কুলের মধ্যাহ্নভোজ, সরবরাহ এবং পরিবহণের সুবিধা দিতে চায়। ১০ শতাংশ আবাসন ভর্তুকি বাড়াতে চায়।

সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি
সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ভোট দেন প্যারিসেছবি: ARNAUD FINISTRE/AFP

অতিরিক্ত লভ্যাংশের ওপর নতুন কর চালু করে এবং আর্থিক সম্পত্তির উপর সম্পদ কর বসিয়ে এই অর্থায়ন করবে তারা। এইসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেড় হাজার কোটি ইউরো বাড়তি আয় করা সম্ভব বলে দাবি দলটির।

মৌলিক খাদ্য সামগ্রী এবং জ্বালানির দামও বেঁধে দিতে চায় তারা। পাশাপাশি ছোট সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে ভর্তুকি সহ ন্যূনতম মজুরি ১৪ শতাংশ বাড়াতে চায়।

আরো শিক্ষক এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিয়োগ করা, বাড়ি তাপরোধী করতে ভর্তুকি দেয়া, করের ঘাটতিগুলো মিটিয়ে আয়করকে আরো উদার করতে চায় তারা। পরিবারগুলোকে সর্বোচ্চ এক কোটি ২০ লাখ ইউরোর উত্তরাধিকারী হওয়ার সুযোগও দিতে চায় দলটি।

২০২৩ সালের অবসরের বয়স বৃদ্ধির নিয়মকে বাতিল করে ৬০-এ নামিয়ে আনতে চায় নিউ পপুলার ফ্রন্ট। 

সেন্ট্রিস্ট টুগেদার অ্যালায়েন্স

মাক্রোঁর দলের জোট ২০২৭ সালের মধ্যে জিডিপির বাজেট ঘাটতি তিন শতাংশ পর্যন্ত কমাতে চায়। তবে বাস্তবে এর সম্ভাবনা কতটা তা নিয়ে জাতীয় অডিটর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সবারই সন্দেহ রয়েছে।

২০২৫ সাল থেকে বিদ্যুতের বিল ১৫ শতাংশ কমানো এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে অবসরকালীন ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জোটটি।

ভোটে কী হতে পারে?

ফ্রান্সের এই নির্বাচনে চার কোটি ৯০ লাখ ভোটার রয়েছেন।

ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী মাক্রোঁর ইইউ-পন্থি জোট ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ল্য পেনের ন্যাশনাল ব়্যালি পায় ৩০ শতাংশ ভোট। এরপর পার্লামেন্ট ভেঙে দেন মাক্রোঁ।

ফ্রান্সের নির্বাচনের বিভিন্ন জরিপেও ধারণা করা হচ্ছে, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে ন্যাশনাল ব়্যালির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো উগ্র ডানপন্থি শক্তির নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে ফ্রান্স।

নতুন বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্টও (এনপিএফ) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

মাক্রোঁর রেনেসাঁ পার্টির নেতৃত্বে এনসেম্বল (টুগেদার) জোট প্রাক-নির্বাচন জরিপে রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের (এলআর) চেয়ে পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল।

প্রেসিডেন্ট হিসাবে মাক্রোঁর মেয়ার রয়েছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। মাক্রোঁ আগেই জানিয়েছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল না থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করবেন না তিনি।

আরকেসি/এডিকে (এএফপি, এপি, রয়টার্স)