বইয়ের ওপর নজরদারি করবে পুলিশ?
৩১ জানুয়ারি ২০১৭বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সোমবার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি৷ পুলিশ নিয়েছে বলেও আমার জানা নেই৷''
এরপরেও অবশ্য নজরদারির এই কথিত উদ্যোগ নিয়ে লেখক ও প্রকাশকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রবিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে এক বৈঠকের পর, বাংলা একাডেমির সচিব মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে – এমন বইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ পুলিশ নিজ উদ্যোগে এই ব্যবস্থা নেবে৷ আমরাও জানলে পুলিশকে জানাবো৷''
ঐ দিন এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে – এমন কোনো বই কেউ প্রকাশ করছে কিনা, সেটা অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘কোনো বই ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করছে খবর পেলে সেই বই জব্দ করা হবে৷ তাছাড়া যারা সেই বই প্রকাশ করবেন ও বিক্রি করবেন তাদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷'' শুধু তাই নয়, পুলিশের সোর্সকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম জানায়, পুলিশ নাকি বই পড়ে দেখবে৷
এই খবরের প্রতিক্রিয়ায় শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখে শুনে মনে হচ্ছে বাংলা একাডেমি বা সরকার মৌলবাদী গোষ্ঠী, চরমোনাই ও হেফাজতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে৷ পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে এখন সৃজণশীল বইয়ের ক্ষেত্রেও তার হস্তক্ষেপ করছে৷ পৃথিবীর কোনো দেশে এমন কোনো নিয়ম বা আইনের কথা শুনিনি, যেখানে পুলিশ বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে অনুসন্ধান করে৷''
রবিন আহসান বলেন, ‘‘বই প্রকাশের স্বাধীনতায় এটা একটা হস্তক্ষেপ৷ আমি বলবো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টি একটি অস্পষ্ট ধারণা৷ এর আগেও নানাভাবে মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশে৷ আর এবার তা আরো পাকাপোক্তভাবে করা হচ্ছে৷''
লেখক আলতাফ শাহনেওয়াজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বইয়ের বিষয়বস্তু মনিটরিং করা যেতে পারে৷ আসলে বাংলাদেশে হোলি আর্টিজানে হামলার পর একটু ভিন্নরকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ কিন্তু সেই মনিটরিং পুলিশ কীভাবে করবে? এটা তো পুলিশের কাজও নয়৷ পুলিশের কাজ হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া৷ পুলিশ সেটা করলেই ভালো৷ যার কাজ তাকেই মানায়৷''
ওদিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ বইয়ের ওপর নজরদারি করবে বা মনিটর করবে – এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বাংলা একাডেমি নেয়নি৷ আমার এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাও নেই৷ আমার জানা মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রবিরোধী কোনো লেখা বা প্রকাশনার ব্যাপারে নজর রাখে, তাদের একটা প্রক্রিয়া আছে৷ তবে তা এভাবে নয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি হয় এমন প্রকাশনা নিয়ে পুলিশ কী করছে বা না করছে তা আমাদের কিছু জানায়নি৷ তাদের কার্যক্রম দেখা আমাদের এক্তিয়ারও নয়৷ তবে আমরা বইয়ের উপর পুলিশের নজরদারিকে উৎসাহ দেই না৷''
প্রসঙ্গত, গতবছর বইমেলায় ব-দ্বীপ প্রকাশন-এর ‘ইসলাম বিতর্ক' নামের একটি বই জব্দ এবং তাদের স্টল বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷ এই ঘটনায় বইয়ের লেখক এবং প্রকাশনীর মালিক সামসুজ্জোহা মানিক এখনো কারাগারে আছেন৷
আর মাত্র একদিন পর, অর্থাৎ ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা৷ এই বইমেলায় শ্রাবণ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলা একাডেমি৷ কারণ শ্রাবণ প্রকাশনীর মালিক রবিন আহসান ব-দ্বীপ প্রকাশন-এর মালিককে গ্রেপ্তার ও স্টল বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য শ্রাবণ প্রকাশনীর নামে প্রতিবাদের মুখে স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে৷
এ নিয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷