‘বড়লোক’ পাইলটদের নিয়ে সমস্যা
২০ ডিসেম্বর ২০১৬মনে রাখতে হবে, লুফৎহানসা বলতে তাদের বাজেট বা সস্তা টিকিটের এয়ারলাইন ইউরোউইংস-কেও বোঝায়৷ এছাড়া থাকছে লুফৎহানসা গোষ্ঠীর অন্যান্য ‘ক্যারিয়ার', যেমন সুইস বা অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইনস, সেই সঙ্গে এয়ার ডলোমিটি ও ব্রাসেলস এয়ারলাইনস৷
লুফৎহানসাকে বলা হয় জার্মানির ‘ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার', অর্থাৎ ‘জাতীয়' বিমান পরিবহণ সংস্থা, যার দিন কিন্তু গেছে বা যেতে বসেছে৷ যে আমলে বিমানে চড়া ও ওড়াটা ওপরমহলের মানুষদের জন্য রাখা ছিল, সে আমলে বৈমানিক ও বিমানকর্মীরা সরকারি চাকুরের মতো পারিশ্রমিক, চাকুরির নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন৷ কিন্তু আজ প্লেনে চড়া জলভাত হয়ে গেছে, আপামর জনতা প্লেনে চড়ছেন৷ কাজেই এটা রায়ানএয়ার বা ইজিজেটের মতো ‘নো ফ্রিলস' এয়ারলাইনসের যুগ৷ অন্যদিকে লুফৎহানসার নিজের রাজত্বে ভাগ বসাতে আসছে এমিরেটস বা ইতিহাদ-এর মতো মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন, কেননা তারাও সম্প্রসারণ করছে অভূতপূর্ব হারে৷ অর্থাৎ লুফৎহানসার আজ খরচ না কমিয়ে এবং ‘রিস্ট্রাকচারিং' না করে অর্থাৎ কর্মপদ্ধতি না বদলে উপায় নেই৷
বাদ সেধেছেন পাইলটরা৷ তাদের ছোট্ট ‘শ্রমিক সংগঠন' ককপিট ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে মাইনে ও অবসরভাতা নিয়ে লুফৎহানসার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজিয়া চালাচ্ছে৷ গত নভেম্বর মাসের শেষে ককপিটের ছ'দিনের ধর্মঘটে লুফৎহানসাকে ৪,৪৬০টি উড়াল বাতিল করতে হয়, বিভ্রাটে পড়েন ৫ লাখ ২৫ হাজারের বেশি যাত্রী৷ ২০১৪ সালের এপ্রিল যাবৎ ককপিট প্রায় ১৫ বার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে৷ প্রতিদিনের ধর্মঘটে লুফৎহানসার এক থেকে দেড় কোটি ইউরো লোকসান হয়, যা অবশ্য এত বড় একটা কোম্পানির পক্ষে ‘পিনাটস' ছাড়া আর কিছু নয়৷
মাত্র গত বুধবার (৭ই নভেম্বর, ২০১৬) লুফৎহানসা জানিয়েছে যে, মাইনে বাড়ালে পাইলটদের কাজের সময় বাড়ানোর দাবি কোম্পানি আর তুলছে না, কিন্তু বাকি অফার একই থাকছে: পাইলটদের মাইনে দু'টি ইনস্টলমেন্টে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানো হবে, সেই সঙ্গে এককালীন গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রায় দু'মাসের মাইনে৷ ককপিট কিন্তু চায় ২০১২ সাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য প্রতিবছর ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, অর্থাৎ এক ধাক্কায় প্রায় ২০ শতাংশ মাইনে বৃদ্ধি৷
সেই সঙ্গে রয়েছে পাইলটদের অবসরগ্রহণের শর্ত নিয়ে বিরোধ৷ লুফৎহানসার পাইলটরা ৫৫ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করতে পারেন তাদের শেষ মাইনের ৬০ শতাংশ অবসরভাতা নিয়ে৷ একজন লুফৎহানসা পাইলট প্রায় ৬,০০০ ইউরোর মাসমাইনে থেকে শুরু করে মাসিক প্রায় ২১,০০০ ইউরোয় তাঁর কর্মজীবন শেষ করেন৷ কোম্পানি চায় পাইলটদের অবসরগ্রহণের শর্তাবলী বদলাতে৷ পাইলটদের অপরাপর দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে: লুফৎহানসা নতুন বা ইউরোউইংসের পাইলটদের কম মাইনে দিতে চায়, এমনকি নাকি ৪০ শতাংশ কম৷ মোট কথা, পাইলটরা তাদের অতীত গৌরব ও ‘স্ট্যাটাস' কোনোমতেই ক্ষুণ্ণ হতে দিতে চান না৷
বিরোধটা শুধু দুমুখি নয়, কেননা কেবিন ক্রুদেরও দাবিদাওয়া আছে, পাইলটরা ধর্মঘট না করলে তারা ধর্মঘট করে থাকেন৷ ফল অবশ্য একই হয়: লুফৎহানসার বিমান আকাশে না উঠে মাটিতেই থাকে৷ বিমানকর্মীদের সংগঠন উফো-র সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের একাধিকবার আপোশ হয়েছে৷ আপাতত কেবিন ক্রু-রা পাইলটদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেননা পাইলটদের আরো সুযোগসুবিধা দিলে কেবিন ক্রু-র ভাগ্যে আরো কম পড়তে পারে, বলে তাদের আশঙ্কা৷ মনে রাখা দরকার, লুফৎহানসার একজন সিনিয়ার পার্সার মাসে প্রায় ৭,০০০ ইউরো রোজগার করে থাকেন৷
মোট কথা, লুফৎহানসার বাজেটের ২০ শতাংশ যায় কর্মীদের মাইনে দিতে, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনগুলির এই খাতে ১২ শতাংশের বেশি খরচা হয় না; রায়ানএয়ারের মতো এয়ারলাইনগুলিতে কর্মীদের মাইনে বাজেটের ১০ শতাংশ ছাড়ায় না৷ ওদিকে ৪,৬০০ জন পাইলটের মাইনে দিতে লুফৎহানসার প্রায় একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, যতটা যায় ১৭,০০০ ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্টদের মাইনে দিতে: হরেদরে প্রায় ৯০ কোটি ইউরো৷ অথচ লুফৎহানসা ম্যানেজমেন্টের স্বপ্ন হলো, বছরে ১০০ কোটি ইউরো খরচ কমানো৷
ওদিকে আবার এমিরেটস-এর মতো কিছু এয়ারলাইন নাকি জার্মানিতে ক্রু রিক্রুট করতে শুরু করেছে!
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷