‘আংকারার সিরিয়া নীতি বদলাচ্ছে'
২২ জুলাই ২০১৫সুরুচ নামধারী ছোট্ট শহরটি সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সীমান্তের অদূরে অবস্থিত৷ সোমবার সেখানে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সীমান্তের অপরপারে আইএস-এর সঙ্গে কুর্দ পেশমার্গার যুদ্ধে প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত কোবানে শহরটি পুনর্নির্মাণে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে৷ সমাবেশে সম্ভবত এক আইএস সন্ত্রাসী অথবা আইএস সমর্থক একটি আত্মঘাতী বোমা আক্রমণ চালিয়ে ৩২ জন মানুষের প্রাণ নেয়, আহত হন শতাধিক৷
এবার তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোলু-ও স্বীকার করেছেন যে, আততায়ীর ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে যোগ থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ তবে কি এবার আইএস-এর প্রতি তুরস্কের মনোভাব পাল্টাতে চলেছে? ডয়চে ভেলের ক্রিস্টফ হাসেলবাখ তুরস্ক বিশেষজ্ঞ গ্যুন্টার জয়ফার্ট-এর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলেন৷
ডিডাব্লিউ: কুর্দ গোষ্ঠীগুলির মতে, সুরুচ-এর আক্রমণের জন্য তুর্কি সরকারও অংশত দায়ী৷ এই অভিযোগ কি যুক্তিযুক্ত?
গ্যুন্টার জয়ফার্ট: তুরস্ক যে ইসলামিক স্টেট-কে বাস্তবিক সাহায্য করেছে, তার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ এ'যাবৎ অবর্তমান৷ তবে আমরা জানি যে, তুরস্ক সরকারিভাবে বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠীকে সাহায্য করে থাকে, যেমন আল নুসরা ফ্রন্ট, যাদের যোদ্ধাদের তুরস্ক ও সৌদি আরবে প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে৷ আল নুসরা ফ্রন্ট এবং ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শ মোটামুটি এক৷
এ বছরের ১৭ই জুন যখন সিরিয়ার কুর্দ যোদ্ধারা তুরস্কের সীমান্তে অবস্থিত তাল আবিয়াদ শহরটি থেকে আইএস-কে বিতাড়িত করে, তখন তুরস্ক উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যে, সিরিয়ার কুর্দরা সেখানে তাদের আধিপত্য বিস্তার করবে, যা কিনা তুরস্কের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া যাবৎ তুরস্কের নীতির ভিত্তি হলো এই শঙ্কা যে, কুর্দরা সিরিয়ায় একটি স্বশাসিত এলাকা প্রতিষ্ঠা করতে পারে৷ আংকারার কাছে ইসলামিক স্টেট সে-তুলনায় ততটা বিপজ্জনক নয়৷
সিরিয়ার ক্ষেত্রে তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি নীতি কী?
তুরস্কের ভিতরে ও বাইরে কুর্দদের স্বশাসন রোধ করা৷ কিন্তু এই নীতি বজায় রাখা যাবে না৷ আমরা দেখেছি যে, তুর্কি সরকার ৩০ বছর ধরে স্বদেশে পিকেকে-র সঙ্গে যুদ্ধ চালানোর পর এবার আলাপ-আলোচনায় বসতে বাধ্য হচ্ছেন৷ কেননা কুর্দ স্বাধীনতা আন্দোলনের নিজস্ব গতিশীলতার বিরুদ্ধে তুর্কি সরকারের কিছুই করার নেই৷
যদি প্রমাণ হয় যে, সুরুচ-এর আক্রমণের পিছনে সত্যিই আইএস-এর হাত রয়েছে, তবে কি তুরস্ক তার নীতি বদলাতে পারে?
আমরা দেখছি, এই সব আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক তার নীতি বদলাতে শুরু করেছে, তবে খানিকটা মার্কিন চাপেও বটে৷ আমরা জানি, বিগত কয়েক সপ্তাহে তুরস্কে আইএস সংক্রান্ত প্রথম কিছু গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটেছে – আইএস সমর্থকদের গ্রেপ্তারির ঘটনা৷ পুলিশ যে সত্যিই আইএস-এর বিরুদ্ধে সক্রিয় হচ্ছে এবং সামরিক বাহিনী যে প্রতি সপ্তাহে জানাচ্ছে, কতজন অনুপ্রবেশকারীকে সিরীয় সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হলো – এ সবই খুব নতুন৷
মার্কিনি এবং ইউরোপীয়রা গত দেড় বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন যে, ইউরোপ তথা বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে আগত হবু আইএস যোদ্ধাদের সীমান্ত পার হয়ে সিরিয়ায় ঢোকা থেকে বিরত করতে হবে৷ এতদিনে তুরস্ক সে কাজ শুরু করেছে৷ আইএস-এর সর্বাধুনিক আক্রমণ তুরস্কের এই নতুন নীতির প্রতিশোধ বলে অনেকের ধারণা৷