1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন্যার কবলে বিপর্যস্ত মানুষ

১৬ জুলাই ২০২০

দ্বিতীয় দফা বন্যায় দেশের ১৮টি জেলার কমপক্ষে সাত লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ আর পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ৷ এ পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন সাত জন৷

https://p.dw.com/p/3fQ9C
সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা৷ ১৫ জুলাই তোলা ছবি৷ছবি: Getty Images/M. Uz Zaman

এটা সরকারি হিসেব৷ বাস্তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

এই বন্যায় ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ সবচেয়ে ক্ষতির মধ্যে রয়েছে উত্তরের জেলাগুলো৷ দেশের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷

তবে কিছু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান মনে করেন, ‘‘এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও সেই আশঙ্কা কমে আসছে৷ কয়েকদিনের মধ্যেই নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করবে৷’’ তিনি দাবি করেন, পানিবন্দি মানুষদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে৷

বন্যায় উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নিলফামারী, রংপুর, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টঙ্গাইল, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মাদারিপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা,  ফেনী ও নওগাঁ জেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন৷ এছাড়া ঢাকার নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হচ্ছে৷
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো উত্তরের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর প্রভৃতি জেলা৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১৮ জেলার ৯৪ উপজেলার মানুষ এখন পানিবন্দি৷

১৯ থেকে ২৩ জুলাই প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে: আখতার আহমেদ

আবহাওয়া অফিস জানায়, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রবল বৃষ্টির কারণে এই বন্যা৷ আসাম থেকে আসা বৃষ্টির পানির ঢল পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছে৷ গত তিন-চার দিনের প্রবল বৃষ্টির পর আগামী দুইদিন বৃষ্টি কম থাকবে৷ কিন্তু ১৯ থেকে ২৩ জুলাই আবার প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আখতার আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার আসামেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে৷ সেই পানি সিলেটের হাওড় এবং ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে প্রবেশ করে৷ আর আমাদের এখানে তো বৃষ্টি আছেই৷’’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৪টি প্রধান নদ-নদীর ২২টি পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার উপরে আছে৷ প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামন ভু্ইঁয়া জানান, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বিপদ সীমার উপরে থাকলেও নদীর পানি কমতে শুরু করেছে৷ গঙ্গা ও পদ্মা ছাড়া সব নদীর পানিই একটু একটু করে কমছে৷ তবে গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি আরো বাড়বে৷ আবার বৃষ্টি শুরু হলে অন্যান্য নদীর পানিও বাড়তে শুরু করবে৷ তখন আবার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে৷ তার মতে, ‘‘পানি নামতে শুরু করায় এখন দেশের মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে৷’’

বন্যায় পানিবন্দি এলাকাগুলোতে খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয়ের সংকট দেখা দিয়েছে৷ পানীয় জলের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে৷ সংকট দেখা দিয়েছে শিশু খাদ্যের৷ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র এবং বাঁধে অবস্থান করছেন৷ সেনিটেশন ব্যবস্থার প্রবল সংকট৷ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও পরিবেশ খারাপ এবং রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ছে৷

দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও সেই আশঙ্কা কমে আসছে: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী

এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৪৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ সরকারি হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোত ৩০ হজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন৷ কিন্তু বাঁধে যারা অবস্থান করছেন, তাদের কোনো হিসাব নেই৷ জানা গেছে, বাঁধে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তারা সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন৷ আবার অনেকে পানির নীচে তলিয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘরেই মাচা বানিয়ে থাকছেন৷

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘‘বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হয়েছে৷ কাজ করছে মেডিকেল টিম৷ তাদের রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে৷ বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই তৎপরতা অব্যাহ থাকবে৷’’

ওইসব এলাকার জন্য ৫৭৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে৷ এরমধ্যে ১৮৯টি টিম কাজ শুরু করেছে৷ আট হাজার ২০০ মেট্রিক টন চাল আর নগদ দুই কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া রান্না করা খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান৷

বাড়ছে পানি, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা