1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন্যায় আক্রান্ত জনপদ

১৬ জুলাই ২০১৯

বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা৷ দুর্ভোগে বাড়ছে মানুষের৷ অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে কোনো মতে কাটাচ্ছে দিন৷ বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে৷

https://p.dw.com/p/3M9WN
Bangladesch Überflutung Flut Hochwasser

ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ৷ সরকার বলছে, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে তাঁদের৷ তাই উপদ্রুত এলাকায় দ্রুততার সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী৷ তবে জানমালের ক্ষতি কিছুটা কম হলেও, নষ্ট হয়েছে ফসল৷

বন্যায় উত্তরাঞ্চলের চিত্র

কুড়িগ্রামের চিত্রটা সবচেয়ে ভয়াবহ৷ ৯ উপজেলার পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা তিনলাখের মতো৷ ৮৯৯ হেক্টর জমির ফসল, ৭১ কিলোমিটার রাস্তা ও ২৭৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছে তিন শিশু৷ দশ লাখ টাকা, ৮০০ মেট্রিকটন চাল আর দুই হাজার ব্যাগ শুকনো খাবার আর পাঁচশি তাঁবু পাঠানো হয়েছে পানি বন্দি মানুষের সহায়তায়৷ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪০৯টি৷

লালমনিরহাটে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে পাঁচটি উপজেলা।ক্ষতির মুখে পড়েছে নয় হাজার ৯৬টি পরিবার৷ সরকারি তথ্য বলছে, কোনো প্রাণহানি হয়নি৷ ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে দুর্গত মানুষ৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের  নয় লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ অর্থ, ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, চার হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং পাঁচশটি তাঁবু দিয়েছে৷

নীলফামারির ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ দুর্গত৷ সরকারের পক্ষ থেকে সাত লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নগদ অর্থ, ৫৫০ মেট্রিক টন চাল, চার হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং পাঁচশটি তাঁবু দেয়া হয়েছে৷

বগুড়াতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯৮টি গ্রামের ৬৭ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। ৮ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে ৩৮৫টি বাড়ি ভেঙে গেছে। ১০ লক্ষ টাকা নগদ অর্থ, ছয়শ মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং পাঁচশটি তাঁবু ত্রাণ হিসেবে দেয়া হয়েছে৷ তবে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি৷

গাইবান্ধায় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ বন্যা কবলিত৷ ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানির তোড়ে সোমবার তিনটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৩১টি গ্রাম ও ওইসব এলাকার রাস্তাঘাট এবং ফসল নতুন করে পানিতে ডুবে গেছে। বগুড়ার মতো সেখানেও পাঠানো হয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী৷

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে বইছে৷ পাঁচটি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত৷

নাজুক সিলেট অঞ্চল

সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত সাত উপজেলার ১ লাখ ৪ হাজার লোক দুর্গত অবস্থায় রয়েছে। ১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ উপজেলার তিন লাখ ৩৮ হাজার ১৩৫ জন মানুষ এখন বন্যাদুর্গত। জেলায় ১ হাজার ১৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৬ হাজার ৪৫৬টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মৌলভীবাজারের সদরের কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। বামনপাশায় নির্মাণাধীন ২০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১ কিলোমিটার রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে৷ ১৪ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ও পাঁচ হক্টর জমির রূপা আমন ফসল তলিয়ে গেছে৷

এই চার জেলায় সাড়ে ৪০ লাখ টাকা নগদ অর্থ, দুই হাজার ৪৫০ মেট্রিকটন চাল, ১৭ হাজার ব্যাগ শুকনো খাবার এবং এক হাজারটি তাঁবু ত্রাণ হিসেবে পাঠানো হয়েছে৷

পাহাড়ে বন্যা  পরিস্থিতি

পাহাড়ি ঢল আর ভারতের মিজোরামের বৃষ্টির পানি নেমে আসায় ক্রমেই বাড়ছে কাপ্তাই লেকের পানি। প্লাবিত হচ্ছে বরকল, বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়াচর, জুরাছড়ি ও  বিলাইছড়ি উপজেলার হ্রদ তীরবর্তী গ্রামগুলো। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর-এনডিসি উত্তম কুমার দাশ জানান, সোমবার থেকে অবস্থার উন্নতি দেখা যাচ্ছে৷ আশ্রয়কেন্দ্রে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিল, তাঁরা সকলেই যার যার ঘরে ফিরে গেছে বলেও জানান তিনি৷

আশ্রয়কেন্দ্রে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিল, তাঁরা যার যার ঘরে ফিরে গেছে: উত্তম কুমার দাশ

কাপ্তাই লেকের পানি আরেকটু বাড়লেই তা ছেড়ে দেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা৷ তিনি বলেন, ''স্লুইস গেট দিয়ে কাপ্তাই লেক কর্তৃপক্ষ পানি ছেড়ে দেবে৷ পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি গেলেই ছেড়ে দেয়া হবে৷'' ফলে, রাঙামাটিবাসীর  আতঙ্কিত হওয়ার  কারণ নেই বলেও মনে করছে প্রশাসন৷

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী নদী হয়ে মিজোরামের পানি নেমে আসায় বরকলের আইমাছড়া, ভুষণছড়া, বড় হরিনা, সুবলং ইউনিয়ে প্রায় ১৯টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির স্রোতে বরকল উপজেলার ত্রাণ বিতরণ কাজও ব্যহত হচ্ছে৷

লংগদু এবং বরকলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও পানি কমতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি৷ তবে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি৷

পাহাড় ধস বলতে যা বোঝা যায়, সেভাবে পাহাড় ধস হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন রাঙামাটির এনডিসি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানার, ''৮ জুলাই বাড়ি ধসে দুজন মারা গেছে৷ ১৩ তারিখ দুজন নিজেদের বাগান দেখতে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় উপর থেকে মাটি ধসে পড়লে, তার চাপায় প্রাণ হারান৷'' কিন্তু সেটা পাহাড় ধস বলতে নারাজ তিনি৷

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ধসে আক্রান্ত হয়েছে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি৷ বান্দরবানে পাহাড় ধসে মারা গেছে এক বৃদ্ধা, আহত হয়েছেন দুজন৷ জেলাটির সাতটি উপজেলা বন্যা কবলিত৷ আক্রান্ত হয়েছে দশ হাজার পরিবার৷ নষ্ট হয়েছে বনভূমি৷ খাগড়াছড়ির চারটি উপজেলার ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ বন্যায় দুর্গত৷

এছাড়া নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর, টাংগাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রামেও লাখো মানুষ বন্যা কবলিত৷