বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা শহিদদের স্মরণে
মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন আসামের বরাক উপত্যকার ১১ জন। তাদের স্মরণে ১৯ মে শহিদ দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের শহিদ
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের নয় বছর পরের কথা। ১৯ মে, ১৯৬১। আসামের বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার জন্য শহিদ হয়েছিলেন ১১ জন। শিলচরে আসাম পুলিশের গুলিতে মারা যান তারা। তারপর থেকে প্রতিবছর এই দিনটি বরাক উপত্যকা-সহ ভারতে ভাষা আন্দোলনের শহিদ দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
মাতৃভাষার জন্য
আসামের বরাক উপত্যকায় জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল বাংলাভাষী। অথচ আসাম সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শুধুমাত্র অসমীয়া ভাষাকেই রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা করা হবে। লড়াইয়ের সূত্রপাত সেখান থেকেই। শুধু ১৯৬১তেই নয়, ১৯৭২, ১৯৮৬তেও সেখানে ভাষার জন্য শহীদ হন বাঙালিরা৷ সাথে, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে সেই অঞ্চলের বিষ্ণুপ্রিয়া নারী সুদেষ্ণা সিনহাও৷
প্রতিবাদ, আন্দোলন
বরাকের বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। গণআন্দোলনের প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ১৯৬১ সালের ১৯ মে। সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে আসাম প্রাদেশিক পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আবার প্রাণ দিলেন শহিদরা।
কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ
বরাক উপত্যকার বাঙালিদের ওপরে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ নামক সংগঠনটির জন্ম হয়।
তিন জেলার কাহিনি
বরাক উপত্যকা মূলত আসামের তিনটি প্রশাসনিক জেলা নিয়ে গঠিত। কাছাড়, করিমগঞ্জ, এবং হাইলাকান্দি। ব্রিটিশরা ভারতে আসার আগে, কাছাড় ছিল কাছাড়ি রাজ্যের মধ্যে এবং করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার মধ্যে। ১৯৪৭ সালের গণভোটের পর, উভয় অঞ্চলকে সিলেট থেকে আলাদা করা হয়। সিলেটের বাকি অংশ সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) এবং ভারতের করিমগঞ্জের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে।
ভাষা শহিদদের স্মরণে সৌধ
বরাকের অধিকাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষায় কথা বলতে পারার টানেই সেই সংগ্রাম, যে সংগ্রাম কেড়ে নিয়েছিল ১১টি প্রাণ। এই অঞ্চলের বহু জায়গায় তাই ভাষা আন্দোলনের সৌধ দেখা যায়।
দোকানের নাম বাংলায়
শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, এই অঞ্চলগুলোয় বহু দোকানের সাইনবোর্ড আজও বাংলায় লেখা। অসমীয়া আর বাংলা লেখার হরফে সাদৃশ্য থাকলেও লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, বোর্ডগুলো বাংলাতেই লেখা।
সরকারি নির্দেশেও বাংলা
শুধু সাইনবোর্ডই নয়, বরাক উপত্যকার বহু জায়গায় সরকারি নির্দেশও বাংলাতেই চোখে পড়বে। উপরের ছবিতে ট্র্যাফিক পুলিশের নির্দেশ লেখা বাংলায়।
শিলচর স্টেশন
বরাকে মাতৃভাষার জন্য আন্দোলনে ১৯মে ১৯৬১তে শিলচর রেলস্টেশনে আন্দোলনকারীরা অহিংস সত্যাগ্রহ করেছিলেন, যেখানে ১১ জন প্রাণ হারান। তাই শিলচর রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ রাখার দাবি উঠেছে৷
ভাষা শহিদ স্মারক
স্টেশনের সামনেই ভাষা শহিদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
বরাক উপত্যকায় শহিদ দিবস
প্রতি বছর বরাক উপত্যকা-সহ ভারতের বিভিন্নপ্রান্তে ১৯ মে-কে বাংলা ভাষা শহিদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এখনো আতঙ্কিত
তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বরাকের বহু বাঙালিই তাদের মাতৃভাষার ওপর অন্যভাষা চাপিয়ে দেওয়ার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত।