জার্মানিতে অসহিষ্ণুতা কমছে না
২২ মার্চ ২০১৮আখেনের সমাজকর্মী ইজাবেল টেলার পেশায় আইনজীবী৷ তিনি যে উদ্বাস্তু কল্যাণ উদ্যোগটির হয়ে কাজ করেন, তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৩ সালে৷ ফেডারাল ও রাজ্য সরকারের অর্থানুকুল্যে এই উদ্যোগ চলে এবং এদের একটি মূল কাজ হলো, যুদ্ধ ও পলায়নের বিভীষণ অভিজ্ঞতার ফলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত উদ্বাস্তুদের থেরাপির ব্যবস্থা করা৷ বর্তমানে একটি থেরাপির জন্য উদ্বাস্তুদের ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে ইজাবেল জানালেন৷
তিনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন, তারা সাধারণভাবে উদ্বাস্তুদের সাহায্য করার চেষ্টা করে৷ এক্ষেত্রে ইজাবেলকে প্রায়ই সরকারি কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হতে হয়: বিশেষ করে জার্মানিতে যেসব উদ্বাস্তু শিশুর জন্ম হয়, তাদের নথিভুক্ত করা ও কাগজপত্র করা নিয়ে দৃশ্যত আমলারা ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করেন৷
দক্ষিণপন্থি প্রবণতা
বর্ণবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনাচক্রে ইজাবেল টেলারের ডাক আসে৷ এক্ষেত্রে তিনি জার্মান সমাজ যে দক্ষিণপন্থি মনোভাবের দিকে ঝুঁকছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর মতো সমাজকর্মী ও উদ্যোগ ছাড়া সমাজ ও সরকারের তরফেও এক ধরণের অসহায়তা লক্ষণ করেছেন৷
টেলারের মতে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের নিজেদের মনোভাব বদলানো উচিত৷ দৃশ্যত টেলার ও তাঁর সতীর্থরা প্রায়ই অভিবাসী পটভূমির পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ব্যবহারের কাহিনি শোনেন – যেমন ওপরওয়ালা, তেমন সহকর্মীদের তরফ থেকে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন বিদেশি-বহিরাগত বংশোদ্ভূত পুলিশকর্মীরা৷
সাংবাদিক আন্দ্রেয়া রোয়েপকে বহু বছর ধরে জার্মানিতে বর্ণবাদ প্রণোদিত দক্ষিণপন্থি সহিংসতা নিয়ে লিখছেন৷ তাঁর মতে, জার্মানিতে দক্ষিণপন্থি হওয়াটা আবার ফ্যাশনেবল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কাজেই বর্ণবাদ বিরোধী উদ্যোগগুলি আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে রোয়েপকে মনে করেন৷ এই উদ্যোগগুলিই বস্তুত জার্মান সমাজের আসল মনোভাবকে তুলে ধরছে বলে তাঁর ধারণা৷
মুশকিল এই যে, বর্ণবাদী স্লোগানগুলি ছড়ায় প্রধানত অনলাইনে৷ অনলাইনে জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হলো উদ্বাস্তু বিরোধী এএফডি দল৷ অনলাইনে তাদের ফলোয়ারের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি৷ অনলাইন প্রচারণার ক্ষেত্রে এএফডি যে কতটা পেশাদার, সে ব্যাপারে জনসাধারণের আজ পর্যন্ত কোনো পর্যাপ্ত ধারণা নেই বলে রোয়েপকের আক্ষেপ৷ দক্ষিণপন্থি অপরাধের আইনগত বিচার প্রক্রিয়াতেও নানা সমস্যা আছে বলে তাঁর অভিমত৷
দক্ষিণপন্থি মতাদর্শ বলতে কী বোঝায়?
‘এক্সিট’ নামের একটি উদ্যোগ ২০০০ সাল থেকে নব্য নাৎসিদের দল থেকে বেরিয়ে আসায় সাহায্য করে আসছে৷ ফেডারাল পরিবার মন্ত্রণালয় উদ্যোগটির অর্থসংস্থান করে থাকে৷ ফেলিক্স বেনেকেনস্টাইন ১০ বছর নব্য নাৎসি থাকার পর এখন ‘এক্সিট’-এর কর্মী৷ ৩১ বছর বয়সি বেনেকেনস্টাইনের কর্মক্ষেত্র বাভেরিয়া৷ সেখানে যে প্রশ্নটি তাঁকে প্রায়ই শুনতে হয়, সেটি হলো: ‘‘জার্মানিতে বড় বেশি উদ্বাস্তু এসেছে বললেই কি আমি বর্ণবাদী হয়ে গেলাম?’’
বেনেকেনস্টাইনের মতে বামঘেঁষা মনোভাবের কাউন্সেলররা কারো দক্ষিণঘেঁষা মনোভাব দেখলেই তার মুখ বন্ধ করে দেন৷ অপরদিকে উদ্বাস্তু সংক্রান্ত উদ্যোগগুলিতে রক্ষণশীল মনোভাবের আরো বেশি মানুষ থাকা প্রয়োজন, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ থাকা আবশ্যক বলে তাঁর ধারণা৷
অলিভার পিপার/এসি